ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া - পর্ব ১৬ | Valobasar Alto Chowa 16

সকালে স্পর্শের ডাকে আদির ঘুম ভাঙ্গে।

---তুই এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস, এতো ঘুম আসে কোথা থেকে তোর ভাই?

----উফ! এত কথা বলিস কেনো তুই? 

---আমি বেশি কথা বলি!

 

স্পর্শ এতক্ষণ খেয়ালই করেনি যে আদি ড্রিংকস করেছে! তাই আবার বললো,,,,

----এই এই তুই রাতভর ড্রিংকস করেছিস। এখনো নেশা রয়েছে তোর এর উপর!

----কষ্ট ফেলে সবাই ড্রিংকস করে, তুই যদি কোনদিন পাস তো দেখিস।

 

----এহ 'কষ্ট ফেলে সবাই ড্রিংকস করে 'কি এক মহান বানী ওনি বলেছে। উহ, মুখ থেকে কেমন গন্ধ আসছে ইয়াক থু।

স্পর্শ নিজের নাক চেপে ধরে বলে,, 

----শুন আমি নয় কোনো প্রেমবিরোহী, নয় কোনো বিবাহিত! আই অনলি ওয়ান সিঙ্গেল যে আজ অবধি প্রেমও করে নাই। এইসব যেহেতু করি নাই তাহলে আবার কষ্টার্জিত হতে যাবো কেন?

 

----হবে হবে একদিন ঠিকই এইসব হবে। তখন বুঝিস না হয় আমার মতো যারা নিজের ভালোবাসা হারিয়েছে তারাই আমার মতো ড্রিংকস নিয়েছে ঠিক আছে।

---তাহলে কি সিরি ফরহাদ ও নিয়েছে নাকি। দূর তোর মতো দূর্গন্ধযুক্ত লোকের কাছে কে থাকে।রাতভর শুধু ড্রিংকস করে গলা অবধি ফুরিয়েছে। পারলে ভালো কাজ কর, নামাজ পড় রোজা রাখ আর তোর ভবিষ্যতে আমার দেখা দেখবি আরেকটা সুন্দর বউ আসবো সোয়া ভাবির মতো।

 

দুষ্টামি হাসি দিয়ে কথাগুলো বললো স্পর্শ। যদিও বা স্পর্শ হাস্যকর মানুষ সবসময় ফাজলামোই করে। আদি তো সোয়াকে হারানোর পর থেকে অনেকটা ইমোশনাল হয়ে আছে।সে বুঝে ভালবাসা হারানোর কষ্ট।কতোটা যন্ত্রণা দায়ক, কতোটা কষ্টকর।

 

পুরনো স্মৃতিগুলো যে তাড়া করে বেড়ায় স্পর্শ তো আর এইসব জানেনা। আদি ভুলবেই বা কি করে সোয়া যে তাকে শিখিয়েছে মানুষকে ভালোবাসতে হয় কি করে, সবাইকে সম্মানের চোখে দেখা, দান খয়রাত করা, গরীবদের কখনো তুচ্ছ না করা এইসব শিখিয়েছে। একজন আদর্শ মানুষ হতে হয় কি করে সেইসব শিখিয়েছে।

 

ভালোবাসা জিনিসটা অনেক অদ্ভুত জিনিস। কারো উপর একটা বার জন্মে গেলে সে যে মন গহীনে থেকে যায়। বুকের বা -পাশটায় তার স্থান হয়। প্রতিক্ষন তার প্রতিচ্ছবি চোখের সামনে ভাসে। আদির জিবনে ভালোবাসা ছিলো তারা কিন্তু আদির মনে তার জন্য অতটা অনূভুতি জাগেনি যতটা জুড়ে আছে অদ্ভুত অনূভুতি শুধু মাএ সোয়ার জন্য।

 

স্পর্শ বললো,,,

---এই আদি জানিস তো একটা কথা!

---কি?

---সোয়া ভাবি একদিন আমায় বলেছিলো।

 

আদি হাসি মুখে বললো,,,

---কি বলেছে ও তোকে?

----বলেছে ভাইয়া আমি যদি কোনোদিন আপনার বন্ধুকে ছেড়ে চলে যাই জানি আমি তার অবস্থাটা কেমন হবে। কিন্তু আমায় তো যেতেই হবে সে ওনি আমায় ডিবোর্স না দিলেও।জানি ওনি আমায় খুব ভালোবেসে ফেলেছে কিন্তু কীভাবে বাসলো? আমার মধ্যে ওনি এমন কি দেখেছে, আমার যোগ্যতা অনুযায়ী আমি ওনার যোগ্য নই কখনো। ওনার জন্য তারা ঠিক আছে। আমি তো মিডেল ক্লাসের মেয়ে ওনার সাথে মানায় না! যদি সত্যিটা জানে ওনি তারাকে বিয়ে করবে না কখনো, তারা অনেক অন্যায় করেছে। অন্যায় তো মানুষ করবেই আবার শুধরেও নিবে প্রায়শ্চিত্ত্ব করবে তার জন্য। আমি চলে গেলে ওনাকে একটু দেখে রাখবেন কখনো যেনো ড্রিংকস না করে।ওনি প্রচুর ড্রিংকস করে কিন্তু একটু খেয়াল রাখবেন। তো আমি কি ভাবির কথা রাখতে পেরেছি?

 

----সোয়া এইসব বলেছিলো! আরে বলুক না তাতে আমার কি আমি তাও ছাড়বো না।যদি ও আমার জিবনে না থাকে তো এই ড্রিংকস আমার জিবন সাথী হবে।

----কুল ডাউন আদি, ভাবি এই পৃথিবীতে আর নেই।পুরো বিশ্ব খুজলেও পাবিনা ওনাকে। তোকে বাঁচতে হবে নিজের পুরো অর্ধেকটা জিবন এখনো পরে আছে।আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে নে অফিস যেতে হবে।

 

---হুহ!

আদি ফ্রেশ হয়ে স্পর্শের সাথে বের হলো। নতুন বাড়িতে সিফট হয়েছে তাই এখানে রান্না করার মতো কোনো লোক নেই। দু একদিনে পেতে পারে! আদি আর স্পর্শ একটা রেস্টুরেন্টে গেলো ব্রেকফাস্ট অর্ডার দিয়ে বসে আছে। 

.

!!!

আদি আর স্পর্শ যে টেবিলে বসেছে তার বরাবর পাশের টেবিলে একটা মেয়ে বসেছিলো।মেয়েটা সামনের দিকে তাকিয়ে বললো,,,

----হাই সোয়া! 

----হেলো মাই সুইটহার্ট।

 

আদির কানে এসে সোয়া নামটি বারি খায় আর আশেপাশে খুজতে থাকে আদি সোয়াকে।স্পর্শের কানেও বারি খেয়েছিলো কথাটা।

----হোয়াটে এ হেপেন সুইটি?

সোয়া কিছুক্ষণ মন খারাপ করে থেকে বললো,,,

 

---হেফি বার্থডে টু ইউ মাই উষা সুইটহার্ট।

সোয়া উষাকে জরিয়ে ধরে গালে গাল লাগিয়ে বললো। উষা অবাক হয়ে গেলো তার জন্মদিন আজ সে নিজেই জানেনা।বেস্টি তো বেস্টিই সব কিছুই মনে রাখে।

 

----হোয়াট এ সারপ্রাইজ সুইটি,আমার জন্মদিন আর আমিই জানলাম না তুই কিভাবে মনে রাখলি রে।

---আমি মনে রাখিনি রে উপমা সকালে বলল আমায়।

---ওয়াও উপমা, মাই বাবুই সোনা। কোথায় ও আসেনি।

---এসেছিলো দরজার কাছে আসে আর হসপিটাল থেকে ফোন আসে ইমার্জেন্সি তাই চলে যেতে হলো।

----ওহ নো! আমার বাবুই সোনাটা একটাদিনও আগের মতো আমাদের টাইম দিতে পারে না। সারাটা দিন হসপিটালে কাটায় আর এতো পারে কিভাবে?

 

---এটা ওর ভালো লাগা বুঝলি, মানুষদের পাশে থাকতে ও খুবই পছন্দ করে।

----ইয়াহ আই নো! আচ্ছা চল ওর হসপিটালে যাই।

---ওকে চল।

 

আদি উঠে সোয়া নামের মেয়েটির কাছে যেতে নিলেই উষা আর সোয়া দুজনে বাইরে চলে যায়।আদি দরজার কাছে যেতেই ওরা গাড়িতে উঠে চলে যায়।স্পর্শ বললো,,,

---আরে দাড়া কোথায় যাচ্ছিস?

 

----দেখলি না ওখানে আমার সোয়া ছিলো। চল আমরা যাই ওখানে!

----সোয়া কি পৃথিবীতে একটিই নাম। হাজারো নাম আছে। 

----না তারপর ও আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ও আমার সোয়া।

 

----আদি তুই ভাবিকে কখনো ওই ছোট পোশাকে দেখেছিস।আর এই অস্ট্রেলিয়া ও কি করবে।

----ওহ তাই তো, আমার হঠাৎ এমন কি হচ্ছে চোখের সামনে শুধু ওকেই দেখছি। আমার মনে হচ্ছে কি জানিস তো সোয়া আমার আশেপাশে কোথাও রয়েছে কিন্তু আমি ওকে দেখতে পারছি না।আড়ালে ও থেকে থাকে।

 

----এইসব তোর ভুল ধারনা চল।

 

দুজনে খেয়ে অফিসে চলে গেল। রাফিক খানের সাথে যে ডিলটা হওয়ার কথা ছিলো সেটা খুব শীঘ্রই হচ্ছে।আজ অফিসে আসলো রাফিক খানের সাথে দেখা করতে আদি আর স্পর্শ।

আদি প্রথমে রাফিক খানের সাথে হেন্ডসেপ করে বললো,,,,

 

----হ্যালো মিস্টার খান!

----হ্যালো মিস্টার চৌধুরী। হাউ আর ইউ?

----আই এম ফাইন, ইউ?

----ফাইন। প্লিজ সিট,,

----ওকে থেন্কুউ।

 

তারা কিছুক্ষণ কথা বললো।আদি আর স্পর্শ বেড়িয়ে গেলো আবার আদি সেই হসপিটালের সামনে এসে দাড়ালো মনে একটা খুত রয়েই গেলো যে এখানে সোয়া আছে।ভেতরে ডুকে পড়লো একা স্পর্শ কারো সাথে তখন ফোনে কথা বলছিলো।সেই ফাকে আদি ডুকে পড়ে।

 

ভেতরে ডুকে রিসেশনের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে আশপাশ দেখতে লাগলো। চারদিকে কত মানুষ, নার্স প্রেসেন্টদের হুইল চেয়ারে করে নিয়ে যাচ্ছে বসিয়ে মুখে মাক্স। কাউকে ডক্টর তাড়াতাড়ি নিয়ে যাচ্ছে অবস্থা বেশি খারাপ বলে আইসিওতে।

 

একজন ডক্টর সবেমাএ ১২৩নং রুম থেকে বের হলো। মুখে মাক্স পড়া গায়ে ডক্টরদের পোশাক।চুলগুলো ছাড়া, মাক্স পড়া তাই ভালো করে তার মুখ চিনা যাচ্ছে না। কিন্তু আদির কাছে চোখগুলো খুবই চেনা লাগছে। এতো সুন্দর টানটানা চোখগুলো চাহনিটা অসম্ভব সুন্দর।

 

সেই ডক্টর একজন নার্সের সাথে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিল আদির পাশ দিয়ে। অদ্ভুত সেই মাতাল করা মিষ্টি গন্ধ আসছে তার থেকে। আদি তাকিয়ে আছে কিন্তু ডক্টর একটিবারের জন্য ও তাকায়নি।ডক্টর পাশ কেটে চলে যাওয়ার পর আদি রিসেপশনে বসা মহিলাটিকে জিজ্ঞেস করে,,,,

 

----ওনি কে?

----জ্বি, আপনি ওনাকে চিনেন না?

----নাহ এখানে নতুন তো তাই।

-----ওহ আচ্ছা তাই বলুন। ওনাকে এই হসপিটালে চিনেনা এমন কেউ নেই। তাই আমি জিজ্ঞেস করেছি আপনি চিনেন না। আসলে ওনি উপমা ডক্টর উপমা খান এই হসপিটালের প্রতিষ্ঠাতা।

 

----ওহ আচ্ছা। তাহলে ওনার কথাই সেদিন আসার সময় ড্রাইভার বলেছিল। আচ্ছা, কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করতে পারি?

---ইয়াহ সিউর!

----এখানে সোয়া নামের কেউ আছে মানে এই হসপিটালে?

 

----ওমম, সোয়া?

----হ্যাঁ সোয়া।

----সোয়া তো উপমা ম্যামের ফ্রেন্ড। মাঝে মাঝে ম্যামের সাথে দেখা করতে আসে।

 

----ওনার ফ্রেন্ড আচ্ছা একটু ডিটেইলসটা দিতে পারবেন উনার?

----ওকে।

আদিকে সোয়ার ডিটেইলস দিলে আদি এক মিনিটও দেড়ি না করে সেই ডিটেইলস অনুযায়ী চলে যায়।

 

বাড়ির দরজার সামনে এসে কলিং বেল চেপে দাড়িয়ে আছে।আদির মন বলছে এ হয়তো তার সোয়া আল্লাহকে ডাকছে যেনো ও সোয়াই হয়। যদি সোয়া হয়তো আদি কি করবে খুশির চোটে জরিয়ে ধরে কেঁদেই দিবে।

 

আদি চুলগুলো ঠিক করে শার্টের কলার ঠিক করে পরিপাটি হয়ে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। কেউ একজন দরজা খুললো আদি হাসি মুখে তার দিকে তাকালো।

ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া

হাফিজ মাহমুদ

পর্ব : ১৬

Previous Post Next Post