ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া - পর্ব ২০ | Valobasar Alto Chowa 20

সোয়া গিয়ে তারার জন্য ব্রেকফাস্ট বানাতে লাগলো।কাজের লোক সাফিয়া সোয়াকে বলল___

-বৌমনি আপনি বসুন আমি বানিয়ে দেই?

-না না দিদি আমি পারবো বানাতে।

-দেখো কান্ড, সর্দি এমন লেগেছে নাকটা পুরো লাল হয়ে আছে।আর তুমিতো সুন্দরী লাল হলে তোমাকে পুরো মরিচের মতো লাগে।

 

-আমাকে মরিচের মতো লাগে এএ আমি কিন্তু কান্না করে দিবো।

-এমা না তুমি কান্না করো না প্লিজ বৌমনি। যাও আর বলবো না।

-ওকে।

 

-আচ্ছা, তোমার হিংসা হয় না বৌমনি?

-কেনো?

-এই যে শয়তান মেয়েটা তোমাকে দিয়ে চাকরের মতো কাজ করাচ্ছে কিন্তু তুমি এই বাড়ির বৌ। আর দেখো ছোট বাবুর সাথে কি হাসাহাসি করে কথা বলছে। যেনো তার বিয়ে করা জামাই শয়তান মেয়ে একটা দেখলেই মন চায় কষে কটা থাপ্পড় দিতে।

 

-মানুষকে শয়তান বলতে নেই তুমি জানোনা। আরও আদির হবু স্ত্রী হাসাহাসি করে কথা বলুক আর যাই বলুক তাতে আমার কি আমি তো আর মাসখানিক আছি এখানে।আর কারো উপর না আমার হিংসা জমে না বরংচ মায়া জমে।

-তুমি এতো ভালো কেনো গো, আল্লাহ এতো ভালো মানুষ আমাদের এই বাড়ির বৌ করে দিয়েছে।আর সে আবার চলেও যাবে। আমার ভালোলাগেনা।তুমি যদি এখান থেকে চলে যাও তাহলে আমিও কিন্তু এখানের কাজ ছেড়ে চলে যাবো।

-আমার জন্য তুমি কাজ ছাড়তে যাবে কেনো? আমার যেতে হবে এটা তুমি আটকাতে পারবে না।কড়াইটা বসাও তো……

-হ্যাঁ বসাচ্ছি।

 

তারা আদিকে বলল,,,

-এই তোমার এ মেয়েটার সাথে থাকতে একটু অসহ্য ও লাগে না? কেমন গাইয়া বস্তির মেয়েদের মতো ও দেখলে আমার পুরো শরীর কেমন জানি করে।

-ওকে দেখে তোমার গাইয়া মেয়েদের মতো লাগে, কতোটা স্টান্ডার্ড মেয়েটা ওর গানের গলা কতোটা সুন্দর। তারপর ওর ভাষা কথা বলতে গেলে আমার সাথে প্রায়ই ইংরেজি বলে ফেলে। তাও তোমার ওকে গাইয়া মনে হয়।

 

-ওয়াট ইংরেজি বলে আই ডোন্ট বিলিভ।গানের গলা সুন্দর আমার থেকেও বেশি নাকি আমার গানের গলাটা যেই লোকে যা সুনাম করে।

-ওহ আচ্ছা, তো একটা দিনও তো আমায় শুনাও নি একটা গান।

-তুমি বলছো নাকি।

-ও সেটাই তো আমি বলিনি বলে তুমি শুনাও নি।বাই দ্যা ওয়ে তুমি সত্যি ব্রেকফাস্ট করে আসোনি?

 

-কেনো করে আসছি তো আমি আসার সময়ই।

-তাহলে, তুমি যে ওকে বললে তুমি ব্রেকফাস্ট করোনি।মেয়েটা অসুস্থ শুধু শুধু কেন আবার কিচেনে পাঠালে।

-এই লিসেন তোমার দেখি আজকাল ওর জন্য দরদে উতলে পড়ছে শুনি। কি হইছে তোমার ওর প্রেমে পড়ছো নাকি তুমি।

 

-কি বলো এইসব ওর প্রেমে পড়তে যাবো কেনো আমি। ভালোবাসি তোমায় তোমার প্রেমেই পড়ছি আর কারো না।আর ও একটা মানুষ, মা যদি একটা বার জানতে পারে এইসব যে তুমি ওকে দিয়ে কাজ করাচ্ছো তাহলে কি হবে ভাবছো।

-কি করবে তোমার মা হ্যাঁ কি করবে। তোমার মা আমাকে চিনে আমি কি করতে পারি।

 

তারার রাগ উঠে গেলে হুশ থাকেনা মুখ দিয়ে যা আসে তাই বলতে থাকে।আদি বলল__

-কি করবে তুমি?

তারা উওর দেওয়ার আগেই সোয়া খাবার নিয়ে উপস্থিত টেবিলে।

 

-আপনার খাবার!

-হুম রাখো।

সোয়া টেবিলের উপর ওর সবগুলো খাবার রাখলো।তারা বলল__

-খাওয়ার গুলো আমাকে সার্ফ করো বোকার মতো দাড়িয়ে আছো কেনো? এতোটুকুও বুদ্ধি নেই নাকি যে খাবার টেবিলের উপর রাখলে সার্ফ করে সামনের জনকে দিতে হয়। কি শিখেছো তুমি কাজের লোক হয়ে এইটুকু অবধি জানোনা কেমন কাজের লোক তুমি।

 

আদি বলল,,,

-আহ! তারা ওকে এতো বকছো কেনো? ও যখন পারেই না তা তুমি নিয়ে খেতে পারোনা। আর না হলে ওকে শিখিয়ে দিতে পারোনা। এতো বকবকানির তো কিছু হয়নি।

সোয়া বলল,,,

-জ্বি আমার ভুল আমি মাফ চাচ্ছি আপনারা ঝগড়া করবেন না।

 

-ঝগড়া, সেটা শুধু মাএ তোমার জন্য সৃষ্টি হচ্ছে।কিছুই তো পারো না এখানে বিয়ে করে চেহারা কি দেখাতে আসছো।দাও খাবার খিদে আমার পেট জ্বলে যাচ্ছে আর ওনি দাড়িয়ে তামাশা দেখছে।

সোয়া তারাকে খাবার দিলো।

তারা ফাস্ট পাস্তা মুখে দিলো তারপর শয়তানি বুদ্ধি খাটিয়ে সোয়াকে অপমান আর কথা শুনানোর জন্য শুধু শুধু বললো___

 

-আহ কি জ্বাল আমার মুখটা পুরো পুড়ে গেলো।ওহ গড কি জ্বাল কেউ খাবারে এতো জ্বাল দেয়।

শুধু শুধু ফু দিতে দিতে বললো তারা। আদি বললো,,,

 

-কি জ্বাল হইছে পানি খাও এই নাও।

তারা পানি খেলো জ্বাল তো লাগেইনি পানি খেয়ে আর কি লাভ। পানি খেয়েও বলল,,,

-মাম্মি আমি তো শেষ, আমার পুরো মুখ জ্বালে শেষ। এই মেয়ে তোমায় এতো জ্বাল দিতে কে বললো। আজ যদি আমার কিছু হয় না তাহলে আমি কিন্তু তোমায় ছাড়বো না।

 

-আমি তো ওতোটা জ্বাল দেইনি তাহলে কেনো? আপনি বোধহয় জ্বাল কম খান তাই এমন হয়। বসুন আমি চিনি আনছি খেলে জ্বাল কমে যাবে।

সোয়া চিনি আনতে গেলো।আদি তারাকে বললো__

 

-এতোই জ্বাল হয়েছে ওকে আমি টেস্ট করে দেখছি!

তারা লাফ দিয়ে উঠে বলল,,,,

-এই না তুমি খাবে না যদি তোমার কিছু হয়ে যায়।

 

-আমার কিছু হবে না ছাড়ো।

-নাহ তুমি খাবে না বলছি।

সোয়া চিনি নিয়ে আসলো।চিনি এক চামচ এগিয়ে দিয়ে সোয়া বললো___

-চিনি খেয়ে দেখুন জ্বাল কমে যাবে।

 

আদি বলল,,,

-হ্যাঁ চিনি খাও।

-এই না আমি চিনি খাবো না, দাঁতে পোকা ধরবে। আমি চিনি খাবো না।

-আমি খেতে বলছি তারা।

 

আদি রাগ দেখিয়ে বলল আর তারাও বলল,,,

-ওকে আমার পাশে নিয়ে এসো।

সোয়া পাশে গিয়ে দাড়িয়ে চিনির চামচ এগিয়ে দিলো। কিন্তু সোয়া কি জানতো যে তারার এর পিছনে কোনো খারাপ বুদ্ধি ছিলো।কোনো কিছু করতেই তারার পাশে ডাকে।

 

সোয়া চামচ এগিয়ে দিলো আর তারা অন্য হাত দিয়ে নিতেই ইচ্ছে করে পাস্তার প্লেটটা সোয়ার উপর ফেলে দেয়।পাস্তাটা গরম ছিলো তাই সোয়ার হাতে পড়ে আর সোয়া গরমে "আ "শব্দ করে উঠে।

 

তারা বলল,,,

-সরি, সরি আম ব্রেলি সরি আমি খেয়াল করিনি।

আদি সোয়ার চিৎকার শুনেই বুঝতে পেরেছে প্রচুর ব্যথা পেয়েছে গরমের তাপে হাতে। পাশের চেয়ার থেকে দৌড়ে উঠে এসে পকেট থেকে টিস্যু বের করে সোয়ার হাতটা মুছে দিলো। তারপর আরেকটা টিস্যু দিয়ে হাত চেপে ধরলো হালকা ভাবে যেনো ব্যথা না পায়।

.

আদি তারাকে বললো___

-চোখ কোথায় থাকে তোমার দেখে শুনে হাতটা নিতে পারোনি। নাকি আজকাল অন্ধ হয়ে গেছো তুমি।তা আমাকে আগেই বলতে পারতে ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতাম। কতোটা গরম ছিলো পাস্টাটা মাএ রান্না করে আনলো। আর তা হাতে পড়লে যে কারো অবস্থা কেমন হবে কতটা ব্যথা পাবে তুমি যানো। ও কতোটা ব্যথা পেয়েছে তুমি জানো।

 

আদি আরো কিছুক্ষণ চেঁচিয়ে তারার সাথে তারপর সোয়ার শাড়িতে পড়া পাস্তা কিছুটা মুছে দিলো সুফিয়ার হাতে নেকড়া এনে।

 

সোয়ার চোখ অশ্রুতে ছলছল করছে কেদেঁ দিবে প্রায় এমন অবস্থা।আদি ওকে ধরে উপরে নিয়ে গেলো। তারা হতবুদ্ধির মতো দাড়িয়েই রইলো।প্লেন করেছিল সোয়াকে কথা শুনাবে আর শুনলো কিনা নিজেই।

 

বাংলায় একটা প্রবাদ বাক্য আছে না "অন্যের ক্ষতি চাইলে সেই ক্ষতি নিজেরই হয় "ঠিক তেমনটাই সোয়াকে কথা শুনাতে গেলো আর শুনলো নিজে তারা।

 

আদি সোয়াকে উপরে নিজের রুমে নিয়ে গেলো ধরে তারপর ওয়াশরুমে নিয়ে পানির ট্যাবটা ছেড়ে হাতে কিছুক্ষন পানি দিলো। রুমে এনে বিচানার উপর বসিয়ে টাওয়াল দিয়ে হাত মুছে দিলো আস্তে আস্তে যেনো ব্যথা না পায়।সোয়ার হাতটা পুরো লাল হয়ে আছে গরম পাস্তা আরো পড়েছে হাতে হওয়ারই কথা।

ডয়ার থেকে মলম এনে নিজের হাত দিয়ে সোয়ার হাতে লাগিয়ে দিলো আদি।আবার মাঝে মাঝে ফু দিতে থাকে।

 

-ব্যথা করছে না খুব জ্বলছে না?

-নাহ একটু।

-একটু হলে তোমার চোখে জল কেনো?

-এমনি রান্না করেছিলাম তো তাই।

-মিথ্যা আমাকে বলতে এসোনা।

 

সোয়ার হাত পুড়েছে জ্বলছে ভেতরে আদির।যেনো নিজের হাতটা পুড়ে যাচ্ছে আদির।আদির ভেতরে খুব জ্বালা করছে। অতি যত্নে সোয়ার হাতে মালিশ করে দিচ্ছে মলম আদি।

 

-আদিরার রুমে গিয়ে শুয়ে থাকবে একদম নিচে আসবে না।

-দুপুরের রান্না! 

-সেটা সাফিয়া, রহিমা ওরা করে নিবে।

 

আদি আবার ধরে সোয়াকে নিয়ে আদিরার রুমে যেতে নিলে সোয়া বললো___

-আমাকে ছাড়ুন আমি যেতে পারবো!

-আমি ধরলে কোনো প্রবলেম, নাকি ব্যথা পাও হ্যাঁ।

-নাহ আসলে তারা দেখলে ........

-সেটা আমার ব্যাপার, আমি কাকে ধরবো না ধরবো ও বলার কে।

.

অন্যদিকে তারার ভেতরে পুরো জ্বলে যাচ্ছে, করতে চাইছিল একটা আর হলো আরেকটা। এর উপর আদি সোয়াকে ধরে নিয়ে গেলো।

রাহিমা আর সাফিয়ার কথোপকথন___

 

-দেখলি শয়তানি করতে চাইলো একটা আর হলো আরেকটা।

-হুম ঠিক বলেছিস রহিমা।

-একদম ঠিক হইছে সাফিয়া, অন্যের জন্য গর্ত করলে সেই গর্তে যে নিজে পড়তে হয়। সেটা বোধহয় এই শয়তানির জানা নেই। দেখতে ঠিক ডাইনিদের মতো কি জঙ্গলী মেয়েরে বাবা। আমাদের বৌমনির মতো ভালো আর কেউ নয়।

 

-কি দেখে যে ছোট সাহেব শয়তানিটাকে পছন্দ করেছে আল্লাহ জানে। একদম ঠিক আছে আমি অনেক খুশি হইছে ওকে কথা শুনিয়েছে বলে।আল্লাহর কাছে অশেষ দোয়া যেনো বৌমনিকে কখনো ডিবোর্স না দেয় ছোটবাবু।

-আল্লাহর কাছে প্রার্থনা এটাই।

 

আদি অফিসে চলে গেলে তারার দখলে হয় আদির রুম।এপাশ ওপাশ পায়চারী করছে কি থেকে কি হলো। আর আদিও কি মিসবিহেভ করতে লাগলো তারার সাথে।

 

যখন বললো তারা ওর জ্বাল লাগছে তখন আদি উঠে ও আসলো না আর সোয়ার হাতে পাস্তা পড়তেই ও দৌড়ে উঠে এলো। আদির কি মায়া জন্মেছে নাকি অদ্ভুত ব্যবহার শুরু করলো তারার সাথে।

 

আদি অনেক সহযে কাউকে ভালোবেসে ফেলতে পারে। এখন যদি সোয়াকে একটা বার ভালোবাসে তাহলে তারার আদিকে হাত ছাড়া হয়ে যাবে। আদিকে নিজের হাতের মুঠোয় রাখতে হলে তারার সোয়াকে সারাজীবনের মতো শেষ করতে হবে নাহলে হবে না।

 

তারা নিজের ট্রলি থেকে অনেকগুলো জামাকাপড় বের করলো যদিও জামা গুলো নতুন ছিলো। তারপর সেগুলো ফ্লোরে ফেলে এর উপর কিছুক্ষণ পা দিয়ে ময়লা করলো।

 

জামাগুলো তুলে আদিরার রুমে গিয়ে সোয়ার গায়ের উপর ছুড়ে ফেললো। তারা বলল,,,,

-আমার এই সবগুলো জামাকাপড় ধুয়ে রৌদ্রে শুকিয়ে তারপর এনে দিবে।

-ঠিক আছে।

-ঠিক আছে বললে হবে না এইসব এখনি গিয়ে করো।শুয়ে বসে থাকলে ভাত জুটবে না ওকে। যাও বলছি।

 

সোয়া বালতিতে করে জামাকাপড় গুলো নিলো। সবগুলো জামাকাপড় ধুয়ে ছাদে গেলো রৌদ্রে দিতে।আদির খুব চিন্তা হচ্ছিলো তাই অফিস থেকে চলে আসে সোয়াকে গিয়ে আদিরার রুমে না পেয়ে রহিমাকে জিজ্ঞেস করলে বলে ছাদে জামা রৌদ্রে দিতে গেছে। আর তারার কথা জিজ্ঞেস করলে বলে বাইরে কোথাও গেছে একটা।

 

আদি সোয়াকে বললো কোনো কাজ না করতে তাও সোয়া করলো। কতোটা জেদ উঠে এখন আদির সোয়ার উপর। তাই রেগেমেগে গেলো ছাদে আজ সোয়াকে কি বলবে সে নিজেও জানেনা।রাগে মুখটা পুরো লাল হয়ে আছে। ব্লেজারটা সোফার উপর ছুড়ে ফেলে চললো।

ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া

হাফিজ মাহমুদ

পর্ব : ২০

Previous Post Next Post