তামান্না কাব্যের গালে ঠাস ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো। কাব্য এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। কাব্য গালে হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো । তামান্না বললো
- ফকিন্নির বাচ্চা তোরে ৫ মিনিটের ভেতর নিয়ে আসতে বলছি এতো দেরি করলি কেন? ( তামান্না)কাব্য কিছু বলে না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। পাশ থেকে টিনা বললো
- দোস্ত আমরা আর খাবো না। এতো দেরি করে আনছে খাওয়ার রুচি তাই নেই। ( টিনা)
- একটা কাজ কর ওকে এ গুলো খাওয়া৷ যাতে পরবর্তী তে আর লেট না করে। ( রাইসা)
- রাইসা খারাপ বলে নি। কাজটা মন্দ না। ( আয়ান)
তামান্না কাব্যকে বললো
- এগুলো সব খাবি। চুপচাপ এসে খা। ( তামান্না)
কাব্য মাথা নাড়িয়ে না বললো। তামান্না উঠিয়ে দাঁড়িয়ে
- আমার নামে মানুষের কাছে বদনাম করিস। আমার অনেক অহংকার। বড় লোকের বেটি। বাপের টাকার ক্ষমতায় পা মাটিতে পড়ে না। তুই আমার অহংকারের কি দেখছিস৷ তোকে এখন দেখাবো অহংকার কাকে বলে৷ ( তামান্না)
তামান্নার কথা শুনে কাব্য অবাক হয়ে গেলো। আয়ান উঠে এসে কাব্য হাত দুটো ঠেসে ধরলো। আরেকটা ছেলে উঠে কাব্যের গাল চেপে ধরলো। তামান্না পাউডার নিয়ে কাব্যের মুখের ভেতর ঠেসে ধরলো। কাব্য ছটফট করছে ছাড়া পাওয়ার জন্য। দুজনে এমন ভাবে ধরে আছে ছাড়ানোর শক্তি পাচ্ছে না৷ তামান্না পাউডার গালে ঠেসে ধরে
- আমার জেদ সম্পর্কে তোর কোনো ধারনা নেই। আমার নামে কিছু বলার আগে দশবার ভাববি। ( তামান্না)
তামান্না মুখ ছেড়ে দিলো। কাব্য কাশি দিতে লাগলো। আর একটু লেট হলে কাব্যের দম আটকে যেতো। হাফ ছেড়ে জেনো বাচলো। টিনা রাইসা খাবার হাতে নিয়ে কাব্যের গালের ভেতর ভরে ঠাসতে লাগলো আর বললো
- আমরা তো খেতে পারলাম না। তুই একা গিলবি সব। আমাদের সাথে শয়তানি করিস। তোর শয়তানি বের করছি। ( টিনা)
-নিজেকে চালাক ভাবিস অনেক। তোর চালাকি বের করতাছি। ( রাইসা)
কাব্যকে রুমের ভেতর ফেলে অত্যাচার করতে লাগলো। আয়ান আর দুজন ছেলে কাব্যকে ফ্লোরে ফেলে পা দিয়ে লাথি মারতে লাগলো। তামান্না সবাইকে নিয়ে বের হয়ে গেলো। কাব্য উঠে বসে দু চোখের পানি মুছতে লাগলো। আঘাত টা আজ বেশি লেগেছে। বড় লোকরা কি এরকম। গরীবদের পেলে এভাবে অত্যাচার করে। কাব্য বসে বসে অনেক কিছু ভাবতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর
লাবন্য মনে মনে ভাবছে, ম্যাডাম চলে গেছে অনেকক্ষণ হলো। কাব্য এখনো আসছে না কেন? লাবন্য কাব্যের কথা ভাবতে ভাবতে ফাইজা কে ডাক দিলো। ফাইজা আসতে ফাইজাকে ক্যাশে রেখে লাবন্য সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে রুমে ঢুকে কাব্যের অবস্থা দেখে কাব্যের কাছে যেয়ে
- তোমার এই অবস্থা হলো কি করে? ( লাবন্য)
কাব্য মাথা উঁচু করে লাবন্যর দিকে তাকিয়ে সবকিছু বললো। লাবন্য সবটা শুনে কষ্ট পেলো মনে। লাবন্য বললো
- উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও। কষ্ট পেয়ো না। ( লাবন্য)
- গরীবদের আবার কষ্ট। সব অত্যাচার তো সইতে হবে। ( কাব্য)
- নিজেদের এতোটা ছোট করা ঠিক না। তুমি ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি লোক পাঠাচ্ছি সে এসে এ গুলো পরিষ্কার করবে। ( লাবন্য)
- না আমি করে দিচ্ছি। কাউকে পাঠাতে হবে না। ( কাব্য)
- এবার তুমি আমার হাতে মাইর খাবা। যা বলছি করো। ( লাবন্য)
কাব্য আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। লাবন্য নিচে নামলো। ফাইজা গুন গুন করে গান গাচ্ছে। লাবন্য ফাইজাকে গান গাইতে দেখে
- তুই ম্যাডামের কাছে কাব্যের নামে মিথ্যা কিছু বলেছিস। ( লাবন্য)
- নাহ্৷ আমি ওর নামে ম্যাডামের কাছে মিথ্যা কি বলবো? ও কি আমার শত্রুর। ( ফাইজা)
- ঠিক আছে। একজনকে আমার কাছে পাঠায় দে৷ উপরের রুম ক্লিন করতে হবে। ( লাবন্য)
- কেন কাব্য কই? ( ফাইজা)
- ওরে ছুটি দিবো। তোরে যা বলছি কর। ( লাবন্য)
- তুই ঐ কথা কেন বললি আমি ম্যাডামকে কিছু বলছি না। ( ফাইজা)
লাবন্য রাগান্বিত হয়ে
- তোরে যেটা বলছি কর। তুই করিস নি তা তুই শুনে কি করবি যা। ( লাবন্য)
ফাইজা লাবন্যকে আর কিছু না জিঙ্গেস করে শয়তানি হাসি দিয়ে চলে গেলো। ভেতর থেকে একজনকে পাঠালো। সে কাউন্টারের সামনে আসতে লাবন্য তাকে উপরের রুম পরিষ্কার করতে পাঠালো। কাব্য ফ্রেশ হয়ে মন খারাপ করে নিচে নামলো। কাউন্টারের সামনে এসে দাঁড়াতে লাবন্য বললো
- তুমি বাহির থেকে ঘুরে এসো। মন খারাপ করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। ( লাবন্য)
- কাজ করবে কে? ( কাব্য)
- অন্য কেউ করবে নে৷ তোমার এখন ছুটি। কাল সময় মতো চলে এসো। ( লাবন্য)
- কিন্তু ম্যাডাম। ( কাব্য)
- কোনো কিন্তু না। যা বলেছি করো। বাহির টা ঘুরে দেখো মন ভালো হয়ে যাবে। ( লাবন্য)
কাব্য আর কিছু বলে না। কাব্য রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে চলে গেলো। কাব্যের জন্য লাবন্যর খারাপ লাগলো।
**
কাব্য রাস্তার ফুটপাতের উপর দিয়ে হাটছে আর অনেক কিছু ভাবতে লাগলো। ফুটওভারের উপর উঠতে যেয়ে দেখলো মিরান ভিক্ষা করছে। মিরান কাব্যকে দেখে বললো
- তোর আজ কাজ নেই। এখানে কি করছিস? ( মিরান)
- আজ ছুটি দিছে ম্যাডাম। ঘুরতে আসলাম। তুমি এখানে বসে ভিক্ষা করো। ( কাব্য)
- হ্যা। এখানে অনেক মানুষের যাতায়াত ভালোই পায়। ( মিরান)
- ভিক্ষা তে তো কোনো কষ্ট নেই তাই না। ( কাব্য)
- কেন? ( মিরান)
- কাল থেকে আমি ও ভিক্ষা করবো। কাজ করবো না কারো কথা শোনা লাগবে না। কোনো কিছুর কৈফিয়ত দেওয়া লাগবে না। অপমান হতে হবে না। ( কাব্য)
মিরান উঠে দাঁড়িয়ে কাব্যের হাত ধরে টেনে নিয়ে ফুটওভার থেকে নিচে নামলো। মিরান কাব্যকে বললো
- তোর ম্যাডাম তোকে কিছু বলছে৷ চাকরি থেকে বের করে দিছে? তোর মন খারাপ কেন? ( মিরান)
- কই না তো। ম্যাডামটা খুব ভালো। সে আছে বলেই তো আমি এখানে আছি। না হলে আমাকে লাথি মেরে তাড়িয়ে দিতো গ্রামে। ( কাব্য)
মিরান কাব্যের মুখের ভাব দেখে বুঝতে পারছে কিছু একটা হয়েছে। মিরান কাব্যকে আর কোনো কিছু না জিঙ্গেস করে বললো
- চল তোকে শহরের সব জায়গা ঘুরিয়ে দেখায়। ( মিরান)
- আপনার আজ লস হয়ে যাবে না। ( কাব্য)
- আমার আবার কিসের লস। আমি কি ব্যবসা করি যে লস হবে। চল আমার সাথে। ( মিরান)
মিরান কাব্যকে নিয়ে রেল স্টেশনে গেলো। রেলের পাটের উপর দিয়ে কাব্য হাটছে আর বলছে
- জায়গাটা নিরিবিলি।( কাব্য)
- নিরিবিলি জায়গায় অঘটন বেশি ঘটে। এই জায়গা নাম করা। ছিনটাই ডাকাতি দিনে দুপুরে হয়। মাঝে মাঝে মার্ডার ও হয়। ( মিরান)
মিরানের কথা শুনে কাব্য অবাক হয়ে মিরানের দিকে তাকিয়ে পড়ে। কিছুটা দূর যেতে কাব্যকে কয়েকটা ছেলে মেয়ে ঘিরে ধরে চাকু বের করে কাব্যের কাছে যা আছে বের করতে বললো। কাব্য ঘাবড়ে গেলো। এ কোনো বিপদে পড়লো। পিছন থেকে মিরান বললো
- তোদের কাছে যদি কিছু থাকে ওকে আরো দে। খায় আমরা ভিক্ষা করে৷ আমাদের কাছে নেই কিছু। ( মিরান)
মিরানের কথা শুনে একজন কাব্যের পকেট হাটালো কোনো কিছু পেলো না। একটা টাকা ও নেই। কাব্য কে ছেড়ে দিয়ে একজন বললো, ফকিন্নি আসছে রাজকুমার সেজে এই এলাকায়। শালা ফকিন্নি তোর লেভেলের পোশাক পড়ে আসবি এর পর থেকে এখানে আসলে।
মিরান কাব্য কে নিয়ে সামনের দিকে হাটতে লাগলো এখানে আর দাঁড়ালো না। কিছুটা দূরে যেতে মিরান বললো
- কি বুঝলি? ( মিরান)
- এখানে আসাটা বিপদ। ভালো কোনো লোক আসলে সে ছিনতাইয়ের কবলে পড়বে। জায়গাটা খারাপ। ( কাব্য)
মিরান হেসে বললো
- এই পথে অনেক খারাপ কাজ হয়৷ সন্ধ্যা হলে মাদকের আসর বসে। ( মিরান)
মিরান কাব্যের সাথে কথা বলতে লাগলো। কথা বলতে বলতে মিরান কাব্যকে নিয়ে আরেকটি জায়গায় গেলো।
তখন বিকাল ৫ টা
একটা ছেলে মেয়ে একটা কামড়ার ভেতর ঢুকলো। এরকম ভাবে কয়েকজন একটা মেয়ে নিয়ে ঢুকছে। মিরান দেখিয়ে বললো
- এখানে যত ছেলে মেয়ে প্রেম করে তারা ঘোরার নাম করে এখানে এসে এই ছোট ছোট কামড়ার ভেতর ঢুকে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে। ( মিরান)
- এটার জন্য কেউ কিছু বলে না। ( কাব্য)
- এই শহরে তুমি যত অন্যায় করতে পারবে ততো ভালো। তবে জীবন মরনের। হয় মরবে না হলে মারবে। এই শহরে যে যার মতো। ( মিরান)
- হুম বুঝলাম। ( কাব্য)
রাত ৮ টা
মিরান কাব্যকে নিয়ে নাইট ক্লাবে নিয়ে গেলো। ক্লাবের ভেতরে কাব্য ঢুকে পুরো অবাক হয়ে গেলো৷ নানা রকমের লাইটিং দেখে। ভেতরে মিউজিক বাজছে। মিউজিকের তালে তালে সবাই ড্যান্স করছে। মিরান কাব্যকে নিয়ে মদের কাউন্টারের সামনে যেয়ে বসলো। মিরান বললো
- খাবি নাকি এক পেগ। ( মিরান)
- না না। আমি এসব খায় না। ( কাব্য)
মিরান নিজে এক পেগ মেরে
- এখানে সব বড় লোকেরা আছে ডি জে পার্টি করতে। ফূর্তি করতে৷ কেউ কাউকে ভালো লাগলে বাসা পর্যন্ত নিয়ে যায়। ( মিরান)
কাব্য অবাক হয়ে
- আপনি এতোকিছু জানেন কি করে? ( কাব্য)
- আমি সব জায়গায় চলাফেরা করি। সব জায়গায় এসেছি জানি সব। ( মিরান)
মিরান আরো অনেক কিছু বলতে লাগলো। কাব্য মিরানের সব কথা শুনতে লাগলো। হঠাৎ করে কাব্যের চোখ সামনে যেতে দেখলো তামান্নাকে। কাব্য তামান্না কে দেখে ভয় পেয়ে গেলো। সে এখানে কেন? আমাকে দেখে ফেললে তো সারছে। কাব্য মিরানকে বললো
- আমার পক্ষে এখানে থাকা সম্ভব না চলেন এখান থেকে। ( কাব্য)
- আরে ইনজয় কর যেয়ে। চলে যাবি কেন? ( মিরান)
- এখানে থাকলে আমার আর এই শহরে থাকা লাগবে না।আপনার সাথে ভিক্ষা করতে যাওয়া লাগবে নে। ( কাব্য)
- আর একটু থাক। গেলি না হয় আমার সাথে ভিক্ষা করতে। ( মিরান)
- ম্যাডাম এসেছে এখানে। দেখলে অপমান করবে৷ আমাকে আস্ত রাখবে না। ( কাব্য)
কাব্যের কথা শুনে মিরানের নেশা মনে হয় কেটে গেলো৷ মিরান বললো
- তোর ম্যাডাম এখানে। আগে বলবি না। তোরে দেখে নি তো। ( মিরান)
- না৷ আরো একটু থাকলে দেখে ফেলবে। ( কাব্য)
![]() |
Ek villian |
মিরান কাব্যকে নিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে চলে গেলো।
রাত ১০ টা
গাড়িগোড়ার চাপ কম রাস্তায় মানুষ শূন্য। রাস্তার পাশ দিয়ে মিরান আর কাব্য হাটছে। কিছুটা দূর যেতে মিরান একটা ভবন দেখিয়ে কাব্যকে বললো
- এই ভবনে কি হয় জানিস। ( মিরান)
- কি হয়? ( কাব্য)
- হ্যাকিং। কতো শত শত লক্ষ্য মানুষের ফোন তথ্য হ্যাকিং করে তাদের ব্ল্যাক মেইল করে টাকা হাতিয়ে নেয়। ( মিরান)
কাব্য অবাক হয়ে
- তা কেউ কিছু বলে না। ( কাব্য)
- নাহ্। এর ভেতর কেউ ঢুকতে পারে না। এর ভেতর অনেক ছেলে মেয়ে কাজ করে। তারা এই ভবনের বাহিরে আসতে পারে না। ( মিরান)
মিরান এক এক করে সব জায়গায় ঘুরিয়ে দেখালো।
রাত ৪ টা
কাব্য মিরান কে বললো
- আপনি এতো কিছু জানেন। আপনার তো গোয়েন্দা হওয়া উচিত। ( কাব্য)
- হয়ে ও কোনো লাভ হতো না। ভিক্ষা করে শান্তিতে আছি। গোয়েন্দা হলে শান্তি তে থাকতে পারতাম না। ( মিরান)
কাব্য কিছু বলতে যাবে হঠাৎ করে একটা গাড়ি তাদের সামনে থামে। গাড়ি থেকে একটা মেয়েকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি চলে যায়। মেয়েটা দুলতে দুলতে সামনের দিকে হেঁটে যেতে লাগলো। কাব্য মিরান কে বললো
- মেয়েটাকে এভাবে ফেলে রেখে চলে গেলো কেন? ( কাব্য)
- এরা হলো রাতের পরী। বড়লোকদের সাথে কন্ট্রাক এ যায় মোটা টাকায় আবার ভোরের আগে স্থান মতো জায়গায় নামিয়ে দেয়। এটা ও একটা ব্যবসা। ( মিরান)
- আহারে জীবন কতই না অদ্ভুত। ( কাব্য)
- হুম চল এখান থেকে। ( মিরান)
কাব্য আর মিরান চলে গেলো। ভোরের আলো ফুটে উঠলো। কাব্য দু চোখের পাতা আজ আর এক করতে পারে নি। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে কেউ এখানে ঘুমাতে পারে না। চায়ের দোকানে চা আর রুটি খেলো। মিরান বললো
- তোর আজ কাজ করতে অসুবিধা হবে না। ( মিরান)
- জানি না। চোখে তো অনেক ঘুম। ( কাব্য)
- আজকের মতো ছুটি নিয়ে নে। ( মিরান)
- ছুটি নিয়ে করবো কি? জায়গা তো নেই ঘুমানোর। ( কাব্য)
- তা ও ঠিক বলেছিস। ( মিরান)
৯ টার আগে কাব্য রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে ঝিমাচ্ছিলো তখন ফাইজা কাব্যের কানের কাছে জোরে বললো
- রাতে কি চুরি করতে গেছিলি? এখানে দাড়িয়ে ঝিমাচ্ছিস কেন? ( ফাইজা)
কাব্য ফাইজার কথা চিল্লানো শুনে লাফিয়ে উঠে
- ক ক ক কই। ( কাব্য)
ফাইজা কাব্যকে ডাক্কা মেরে সরিয়ে
- সর। পারিস না কাজ করতে। এতো অপমানের পর ও এখানে পড়ে আছিস কেন? ( ফাইজা)
ফাইজা রেস্টুরেন্টের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। কাব্য ফাইজার পিছনে গেলো। ফাইজা চেয়ারে বসে
- আমাকে এক গ্লাস পানি এনে খাওয়া তো। ( ফাইজা)
কাব্য ফাইজার কথা মতো ভেতর থেকে পানি এনে দিলো। ফাইজা বললো
- পানিতে কিছু মেশাস নি তো। ( ফাইজা)
- আপনি কি কিছু মেশাতে দিছেন। ( কাব্য)
- বেশি কথা বলিস। যা কাজ কর। ( ফাইজা)
কাব্য এক এক করে সব লাইট জ্বালালো। লতারপর ক্লিন পরিষ্কার করলো সব জায়গা। পরিষ্কার করতে করতে সবাই চলে আসলো। লাবন্য আজ তাড়াতাড়ি এসে সবাইকে বললো
- আজকে রেস্টুরেন্ট বন্ধ । ( লাবন্য)
সবাই অবাক হয়ে গেলো। ফাইজা বললো
- কেন ? ( ফাইজা)
- বড় স্যার বলেছেন। ( লাবন্য)
- তাহলে আজ আর কাজ নেই। ( ফাইজা)
- নাহ্। সবাই যার যার বাসায় চলে যান। ( লাবন্য)
সবাই পোশাক বদলে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিবে তখনি লাবন্যের ফোনে কল আসলো। লাবন্য কল ধরতে ওপাশ থেকে তামান্না বললো
- ড্যাডি রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখতে বলছে বলে আজ। ( তামান্না)
- হ্যা ম্যাডাম। ( লাবন্য)
- সব স্টাফ চলে গেছে। ( তামান্না)
- না। তবে এখন বের হবে। ( লাবন্য)
- একটা কাজ করো। ( তামান্না)
- জ্বি ম্যাডাম বলেন। ( লাবন্য)
- ঐ ছেলেটাকে আমার এখানে পাঠিয়ে দাও। আমি তোমাকে ঠিকানা দিচ্ছি। ( তামান্না)
- কাব্য কে ? ( লাবন্য)
- হ্যা ঐ ক্লিনার কে। তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিয়ো ( তামান্না)
- ম্যাডাম সবাই তো চলে যাচ্ছে। ( লাবন্য)
- সবাই যাক আমার ওকে দরকার। যা বলেছি কর। ( তামান্না)
তামান্না কলটা কেটে দিলো। আর কোনো কিছু বলতে পারলো না। সবাই চলে গেলো কাব্য যেতে যাবে তখন লাবন্য কাব্যকে বললো
- তোমাকে ম্যাডামের ওখানে যেতে হবে৷ তোমার ছুটি হয়নি । ( লাবন্য)
কাব্য অবাক হয়ে
- ঐ ডায়নি ম্যাডামের ওখানে। ( কাব্য)
- এরকম ভাবে বলে না। শুনতে পেলে তোমাকে আস্ত রাখবে না। ( লাবন্য)
লাবন্যর ফোনে ম্যাসেজ আসলো৷ ম্যাসেজ এ ঠিকানা দেওয়া। লাবন্য কাব্যকে বাইরে নিয়ে এসে
একটা খাম দিয়ে
- এটা তোমার বেতনের টাকা। ( লাবন্য)
কাব্যের চোখ মুখে আনন্দে ভরে উঠলো। খামটা হাতে নিয়ে
- আমার প্রথম মাসের টাকা। মা পেলে কতো খুশি হবে নে। ( কাব্য)
কাব্যের আনন্দ দেখে লাবন্য হাসলো৷ খামটা লাবন্যকে দিয়ে
- ম্যাডাম টাকাটা যদি আপনি পাঠিয়ে দিতেন ভালো হতো। আমার কাছে তো ফোন নেই। ( কাব্য)
- ঠিক আছে আমি টাকা পাঠিয়ে দিবো। তোমাকে আগে ম্যাডামের ঠিকানায় পৌঁছে দি। দেরি হলে বকা দিবে। ( লাবন্য)
- ঠিক আছে চলেন। ( কাব্য)
লাবন্য কাব্য কে নিয়ে তামান্নার দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে দিলো। তামান্না লাবন্যকে বললো
- এতো দেরি হলো কেন? ( তামান্না)
- রাস্তায় জ্যাম ছিলো। ( লাবন্য)
- ঠিক আছে তুমি যাও তাহলে। ( তামান্না)
লাবন্য চলে আসলো। লাবন্য মনে মনে ভাবছে, কাব্যকে নতুন করে অত্যাচার করবে না তো। তামান্না ম্যাডামকে সুবিধা মনে হলো না। বড় স্যারকে কি জানাবো৷ জানালে যদি আবার এইখানে ঝামেলা হয়। লাবন্য সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে চলে গেলো।
তামান্নারা সবাই মিলে সিগারেট খাচ্ছে কাব্য এক কোণে দাঁড়িয়ে আড় চোখে দেখছে। তামান্না কাব্যের দিকে তাকিয়ে
- আমার পায়ের জুতা ময়লা পড়ছে মুছে দে। ( তামান্না)
কাব্য বাধ্য ছেলের মতো তামান্নার পায়ের জুতা মুছতে লাগলো। তামান্নার দেখাদেখি সবাই তাদের জুতা মুছিয়ে নিলো কাব্যকে নিয়ে। সবাই হাসাহাসি করছে। কাব্যকে দিয়ে কাজ করাতে লাগলো। নানা রকম কথা বলে সবাই অপমান করতে লাগলো। কাব্য চুপচাপ সব সহ্য করতে লাগলো। কাব্য ওদের সাথে কথা বলে না। বোবা বললেই চলে।।
**
দিন দিন কাব্যের উপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিলো তামান্না। কাব্য সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করতে লাগলো। কোনো কিছুই বলে না। এতে তামান্নাদের অনেক আনন্দ হয়। মজা নেয়।
দেখতে দেখতে এভাবে আরো ১ মাস কেটে যায়। লাবন্য বাহিরে নিয়ে কাব্যকে বেতন দেয়। কাব্য লাবন্যকে পাঠিয়ে দিতে বলে৷ সে মাসের টাকা লাবন্য করিম চাচার কাছে পাঠিয়ে কাব্যের মা কে একটা ফোন কিনে দিতে বলে সিম কিনে দিতে বলে তার নাম্বারে বিকাশ খুলে দিতে বলে৷ করিম চাচা সবকিছুই করে দিছে। লাবন্য ফোন দিয়ে কাব্য তার মায়ের সাথে কথা বলে। এবার টা ও লাবন্য টাকাটা পাঠিয়ে দিলো। কাব্যের জন্য লাবন্যর মায়া হয়৷ এতো অত্যাচারের পর ও এখানে আছে। অন্য জায়গায় যেতে বলছে যায় না। এখানেই থাকবে৷
এভাবে কেটে গেলো বেশ কিছু দিন
একদিন
আজমল চৌধুরী রেস্টুরেন্টে রাগি গলায় লাবন্যকে ধমকাতে লাগলো। লাবন্য ভয় পেয়ে গেলো। অনেক বেশি ঘাবড়ে গেলো। আজমল চৌধুরী র এমন রুপ লাবন্য আগে দেখেনি..........
চলবে..........
Ek villian
Part 5
Writer
Meheab Kabbo