সোয়া ব্যথায় ছাড়ানোর চেষ্টা করছে নিজেকে আদির থেকে কিন্তু পারছে না। আদি যেভাবে সোয়াকে চেপে ধরে আছে সোয়ার পক্ষে আদির থেকে নিজেকে ছাড়ানো কষ্টকর। আদি বললো___
---এই মেয়ে আপনার সমস্যা কি হ্যাঁ। বারবার আমার সামনে আসছেন কেনো, আপনার কারনে আমার লাইফে নানান সমস্যা লেগে আছে জানেন না। বিয়ে করার যখন এতোই ইচ্ছে ছিলো তখন অন্য ছেলেকে গিয়ে করতে পারলেন না।ওহ করবেন বা কেনো বড়লোক ঘর পেয়েছেন তাই কেউ বললো আর হ্যাঁ বলে দিলেন।
---আপনাকে বিয়ে করার আমার কোনো প্লেন বা ইচ্ছে ছিলো না, আর বড়লোক ঘরে বলে যে আমি রাজি হয়ে গেছি তা নয়। আঙ্কেল আর আপনার বাবা আমায় অনেক জোর করেছিলো অনেক অনুরোধ করেছিলো এই বিয়েটা করার জন্য। তাদের নামেও আমি লোকের মুখে কোনো খারাপ মন্তব্য শুনতে চাইনি তাই বাদ্য হয়ে বিয়েতে হ্যাঁ বলেছি।
---ওহ রিয়েলি! জাস্ট হাস্যকর, সম্মান যাবে তাই বিয়ে করেছেন আপনি। শুনুন, স্ত্রীর অধিকার তো আমার কাছে কোনোদিন পাবেনই না বরং আমার কাছে পাবেন শুধু কষ্ট। আমি পদে পদে শুধু কষ্ট দিয়ে যাবো এটাই মনে রাখবেন।
আদি বলেই সোয়াকে একটা ধাক্কা দিলো আর সোয়া সেই ভাঙা মগটার উপর গিয়ে পড়ে। ব্যথা পেয়ে সোয়া "আহ "শব্দটি অবধি বলতে পারেনি। আর বললেও বা কি হতো আদি কি দৌড়ে এসে একটি বার তার হাতটি দেখতো যে কতোটা কেটেছে সোয়ার হাতটা। নাহ দেখতো না আদি, আদি একটা স্বার্থপর একটা অমানুষ যে মানুষকে দেখতে পারেনা। যেমন মানুষ সোয়া পছন্দ করেনা ঠিক তেমনটাই আদি।
কতোটা নিষ্ঠুর আদি একটি বার পিছন ফিরেও তাকিয়ে দেখলো না। আর ধাক্কাটা যে দিলো একটু ভেবে চিন্তে দিলো। তার বিবেকে একটু বাদেনি যে এখন ওকে ধাক্কাটা যদি দেই যদি কিছুতে গিয়ে পড়ে ও খুব ব্যথা পায়। আর ওর বিবেকে বাদবে কীভাবে ওতো বিবেকহীন মানুষ।
সোয়া নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাত থেকে কেটে রক্ত পরছে। সোয়া সেই রক্তমাখা হাত দিয়ে আস্তে আস্তে ভাঙ্গা টুকরো গুলো তুলে নিয়ে চলে গেলো।
আদি টেবিলের উপর থেকে একটা ফাইল নিয়ে হাটতে হাটতে সোফায় গিয়ে বসবে ঠিক তখনি দেখলো যে রক্তের ফোটা নিচে ফ্লোরে পড়ে আছে।
---এই রক্ত আসলো কোথা থেকে এখানে?
আর আমার হাত ও তো কাটেনি যে রক্ত পড়বে।
আদি নিজের হাত পা ঘুরে ফিরে দেখলো কই তার তো কোথাও কাটা যায়নি। কিছুক্ষণ পর মনে হলো,,,,,
---ওহ সেট আমি এতোটা খারাপ কীভাবে হতে পারি। ধাক্কাটা যে দিলাম একটু ভেবেচিন্তে দিলাম না এতোটা রাগি হলাম কিভাবে আমি। মেয়েটার কতোটা রক্ত পড়েছে হাত থেকে না জানি। যাই গিয়ে দেখে আসি কতোটুকু লেগেছে তার।
আদি দৌড়ে নিচে গেলো। তারপর দেখলো যা আর শুনলো,,,,,,
---বউমা তোমার হাতে ভাঙ্গা টুকরো আসলো কোথা থেকে?
সোয়া কাটা হাতটি শাড়ির পিছনে লুকালো।মাকে বললো__
---আসলে মা আমি যখন রুমে ডুকতে গেলাম আর ওনিও বের হতে গেলো। তখন ধাক্কা লেগে হাতের ট্রে থেকে কপির মগটা পড়ে যায়।
---ওহ, আচ্ছা। তা তুমি আবার এইসব উঠিয়ে আনতে গেলে কেনো সুফিয়াকে বলতে ও গিয়ে এইসব ভাঙ্গা উঠিয়ে আনতো।
---আমার কিছু হয়নি তো।
---হয়নি মানে হাতটা তো কাটা যেতো না।
---আচ্ছা, সরি আমার ভুল হয়েছে এরপর সুফিয়া দিদিকে বলবো।
আদির মা হেসে বললো,,,
---রাগ করোনা মা আমার তোমাকে নিয়ে ভয় হয়। যদি তোমার কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার কতোটা কষ্ট লাগবে জানো।
---জানিতো তুমি আমায় নিয়ে ভয় পাও তাই সাবধানে থাকতে বলো। আর আমি নিজেকে সবসময় নিরাপদে রাখবো। তুমি টেনশন করোনা।
---হুম, সুফিয়া, সুফিয়া?
---জ্বি খালাম্মা বলেন?
---বৌমনির হাত থেকে ভাঙা টুকরোগুলো নিয়ে ফেলে দিয়ে আয় যা।
---ঠিক আছে খালাম্মা।
সুফিয়া সোয়ার হাত থেকে নিয়ে গেলো ভাঙ্গা টুকরোগুলো।
---আমি আদিরার কাছে যাই হ্যাঁ মা।
---আচ্ছা যাও।
সোয়া দৌড়ে গেস্ট রুমের পাশের খালি রুমটায় গেলো। সাথে পিছনে পিছনে আদিও গেলো।
সোয়া ডুকে নিজের হাতে ফু দিতে লাগলো হয়তো খুব জ্বালা করছে হাতে।
পাশে একটা কাপড় থেকে খানিকটা ছিড়ে নিজের হাতে লাগাতে নিলেই আদি এসে হাত ধরে ফেলে।আদি নিজের হাত দিয়ে সোয়ার হাতটি ধরে,ব্যান্ডিস করে দিলো।সোয়া বললো___
---আপনি এখানে?
---হ্যাঁ আমি কেনো আপনার তাতে কোনো সমস্যা আছে। ধাক্কা দিয়েছি আমি হাত কেটেছে আপনার পরে বলবেন এই লোকটা কতোটা খারাপ হতে পারে কতোটা হিংস্র। কিভাবে ধাক্কা দিয়ে আমার এতো সুন্দর হাতটা নষ্ট করে দিলো। ব্লা ব্লা আরো কতো কি বলতেন।
---জ্বি আমি ওইসব কেনো বলতে যাবো। আমি তাল সামলাতে পারিনি তাই পড়ে গিয়েছিলাম এতে অন্য কাউকে দোষারোপ করার আমার মনোস্তোব নেই।
---গুড গুড।
আদি হেসেই "গুড "শব্দটি বলে ছিলো। সোয়া আদির হাসির দিকেই তাকিয়ে থাকলো।ছেলেদের হাসি এতোটা সুন্দর হয় তার আগে জানা ছিলোনা আর কতোটা সুন্দর আদির হাসিটা।
সোয়া মনে মনে আদির হাসির দিকে তাকিয়ে বলতো লাগলো।
তোমার ও ওই মায়াবী হাসি,
আমি যে বড্ড ভালোবাসি।
কোনো যাদু আছে কি তোমার ও ওই হাসিতে।
কতো বছরের যেনো ক্লান্তি যায়,
মোর ওই হাসিটি দেখে।
তোমার ঠোঁটের কোনের,
এক চিলটি হাসি কতো মায়াভরা।
অদ্ভুত অনুভূতি জাগে তোমায় ও দেখলে আমার।
মোর প্রান পনে শুধু তোমাকেই চায়।
এ কোন মায়া তোমার ও মাঝে,
বারে বারে শুধু আমায় টানে।
তবে কি এ কোনো অজানা অনুভূতি।
--ও হ্যালো নিজের হাতের খেয়াল রাখবেন আর এখন কোনো পানি লাগাবেন না হাতে ঠিক আছে।
---হুম, ঠিক আছে।
সোয়ার হঠাৎ আদির প্রতি এ কোন অনূভুতি প্রসারিত হলো। হঠাৎ ওর ভেতরটা কেমন জানি করতে লাগলো। আর আদি কিছুক্ষণ আগেই তো কতোটা মিসবিহেভ করলো সোয়ার সাথে আর এখন ভালো। ওহ গড সোয়া কাঁদবে না হাসবে ভেবে পাচ্ছেনা। একটা মানুষের কয়টা রূপ থাকে।
.
আদি চলে গেলো সেখান থেকে, সোয়া যাওয়ার প্রানেই চেয়ে রইলো।রাতে ডিনার করে যে যার ঘরে ঘুমাতে চলে গেলো। সোয়াও আদির রুমে গেলো।সোয়া আদিকে উদ্দেশ্যে করে বললো__
---কিছু বলার ছিলো আপনাকে?
---হ্যাঁ বলুন।
---যদিও বা এটা আমাদের বিয়ে নিয়ে।অধরার সাথে আপনার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। কোনো কারনে হয়তো সে বাড়ি থেকে পালিয়েছে নয়তোবা অন্য কিছু। আর আমাদের বিয়েটা ও ধরুন বিপদে পড়ে করা হয়ে গেছে। আমিও আপনাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে পারিনি আর আপনিও আমাকে স্ত্রী হিসেবে। এভাবে আমাদের তো দিন চলবে না আপনি অনেক বার বলেছেন আপনি অন্য কাউকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন আর আমিও চাই আপনার তার সাথেই যেনো বিয়ে হয়।
---আপনি কি বলতে চাইছেন ক্লিয়ারলি বলুন।
---বিয়ে হয়েছে আজ তিনটি দিন। ওতো তাড়াতাড়ি ও ওই কাজটি করা পসিবল না কোট আমাদের আলাদা করবে না।
---আপনি ডিবোর্সের কথা বলছেন?
---হ্যাঁ ডিবোর্স চাই। আমাদের ডিবোর্সই হবে। আপনি নিজের ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেতে পারেন তাতে। আর আমিও আপনার জিবনের কাটা হিসেবে আছি সরে যাবো।
আদির সোয়ার মুখে ডিবোর্সের কথা শুনে নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। সত্যি ডিবোর্স দিবে সোয়া। আর দিলে তো ভালোই তার আর তারার মাঝের কাটার বেড়া সরে যাবে তারা একে অপরকে পাবে।
----হুম ঠিক আছে আমি লয়ারের সাথে কথা বলবো।
---হুহ।
সোয়া একটা বালিশ হাতে নিলো সাথে চাদরও। নিচে একটা মাদুর পেতে শুয়ে পরলো।
আদির জিবনের কাটা সরে যাবে সে নিজের মুখেই ডিবোর্স চেয়েছে এতো মেঘ না চাইতেই জল। খুশির সংবাদটা তো তারাকে দিতে হয়।