ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া - পর্ব ০৩ | Valobasar Alto Chowa 03

কতোটা নিষ্ঠুর হলে আদি সোয়াকে এভাবে ধাক্কাটা দিতে পারে। সোয়া জ্ঞান হারিয়ে দরজার সামনেই পড়ে রইলো।

 

আদি এখনো দাড়িয়ে তাকিয়ে আছে সোয়ার ছবিটার দিকে। স্পর্শ ও তৎক্ষনাত চলে এলো আদিদের বাড়িতে।

স্পর্শ আদির মাকে জিজ্ঞেস করলো,,,,

---আন্টি আদি কোথায়?

 

---স্টোর রুমের দিকে গেলো ওখানেই আছে। 

---জ্বি ঠিক আছে আমি দেখছি।

স্পর্শ স্টোর রুমের ভিতরে ডুকলো দেখলো আদি সোয়ার ছবির সামনে দাড়িয়ে আছে।

 

---আজও ভালোবাসিস না ভাবিকে?

আদির স্পর্শের ডাকে হুশ আসে,,,

---কতোটা ভালোবাসি মুখে বলা যাবেনা জানিস। ওর মধ্যে অদ্ভুত একটা অনূভুতি আছে, ওকে দেখলে নিজেকে আমি ঠিক রাখতে পারিনা। আজ ১টি বছর নেই ও আমার কাছে ভেতরটা যে আমার পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে ওকে কাছে না পেয়ে।

 

---হুম,এখন পুরনো দিনের কাহীনি এইসব বাদদে আর চল দেড়ি হয়ে যাচ্ছে আমাদের।

---হুহ, চল যাই।

 

আদি সোয়ার ছবিটি সাথে নিয়ে নিলো।

আদি আর স্পর্শ দুজনে গাড়িতে গিয়ে উঠলো আর ড্রাইভার ও গাড়ি চালানো শুরু করলো।

 

---জানো তো আমার ছেলেটা আজও ভুলতে পারেনি বৌমাকে।

---হ্যাঁ, আমার ছেলে ওই কয়টা দিনেই কতোটা ভালোবেসে ফেলেছে দেখছো। আমি জানতাম আমার ছেলে একদিন না একদিন বৌমাকে ভালোবাসবে। আর দেখো আজও কতোটা ভালোবাসে।

 

---কতোটা মিস করি ভাবিকে জানো মা। কিন্তু, আজ আমার কিউটি ভাবিটা আমাদের মধ্য নেই। কতো ভালো ছিলো আমার ভাবি কি দোষ করেছিলো, কোনো অন্যায় করেনি !না ওই শয়তান তারার কোনো ক্ষতি করেছিলো ভাবি।

 

---থাক মা বাদদে এইসব আগের কথা মনে করে এখন মন খারাপ করে কোনো লাভ নেই তো। সুখ আমাদের ভাগ্যে ছিলোনা না ছিলো আমাদের বৌমা সোয়া আমাদের ভাগ্যে। তাই ও নেই আমাদের মাঝে। যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো।

 

মা -বাবা আদিরা তিনজন গিয়ে শুয়ে পড়লো।

আদি আর স্পর্শ এয়ারপোর্ট নেমে সেকআপ করিয়ে প্লেনে গিয়ে উঠলো পরেরদিন অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে যায় তারা। একটা টেক্সি ভাড়া করে তাদের ব্যাগ সবকিছু নিয়ে টেক্সিতে উঠায়।

এবং তারা নিজেরাও উঠে আর টেক্সি ড্রাইভার গাড়ি চালানো শুরু করে।

.

আদি সোয়ার ছবিটি বুকে নিয়ে গাড়িতে বসে রইলো।

তখন স্পর্শ বলে উঠলো,,,,

 

---আমরা ফাস্ট গিয়ে বাড়িতে উঠবো নিজেদের রুম বুক করে নিয়ে আজকের মতো রেস্ট নিবো। তারপর মিস্টার রাফিক খানের অফিসে যাবো।

---হুম, ঠিক আছে।

---আচ্ছা তুই এতো ভালোবাসিস কেনো ভাবিকে বলতো?

 

---ভালোবাসি কেনো জানিস,,

ওকে আমি যে ভালোবাসি সে হয়তো জানেনা কতোটা ভালোবাসতাম আমি তাকে। তারার খারাপ চরিত্র দেখে আমি তার থেকে সরে আসতে লাগলাম আর এই সোয়াকে দেখে তার একজন স্বামীর প্রতি কতোটা ভালোবাসা তা দেখে আমি যে কবেই তার ভালোবাসায় বিমোহিত হয়েছি বলতেই পারবো না। প্রতিটা ছেলের জিবনে সোয়ার মতো মেয়ে দরকার যে ভালোবাসা জিনিসটা বুঝাতে আসবে তার জিবনটা পাল্টে দিতে আসবে।

 

---ভাবিকে দেখলে তার রূপের প্রশংসা না করলেই নয় কতোটা রূপবতী ওনি। আল্লাহ তায়ালা তার কতো সুন্দর সৃষ্টি দিয়ে একজন মানুষকে এতো সুন্দর করে তৈরি করতে পেরেছেন। আমার সাথে ও ভাবির অনেক ভালো সম্পর্ক ছিলো ভাবির শুধু তোকে ভয় পেয়ে আমার সাথে কথা বলতে চায়নি।

 

---আমি না সোয়াকে যদি দেখি কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে তাহলে নিজের মাথা ঠিক থাকেনা। কই আমার সাথে তো ওতো সুন্দর হেসে কোনোদিন কথা বলতে আসেনি।

---বলবে কীভাবে তুই যে পরিমাণ রাগ দেখাস ভাবির সাথে। তোর সাথে কথা কী আমি হলে ধারে কাছেও আসতাম না।

 

---জানিসতো ওর গানের গলাটা কতো সুন্দর।

ড্রাইভার তখন বলে উঠলো,,,

---আপলোক কাহা যায়েগি ভাইসাব?

---আপ হিন্দিছে কেছে বাত কারতা হ্যাঁ। আপকো তো ইংলিশ পে বাত কারতি হ্যাঁ।

 

---নেহি ভাইসাব মে হিন্দি ছে বাত কারতা হু। মেরা গার ইন্ডিয়া পে। মেরা লেন্গুয়েজ বি হিন্দি।

---ওহ আচ্ছা, আচ্ছা।বাংলা চে বাত কার তা হে?

---হে! আপলোক বাঙ্গালী?

---হ্যাঁ!

---তাহলে বাংলায় বলে!

---হ্যাঁ তাই বলেন।

 

---আপনারা এখানে কেনো এসেছেন?

---আমরা এখানে একটা অফিসের কাজে এসেছি। মানে আমাদের অফিসের সাথে ওই অফিসের একটা বড় ডিল হতে চলছে।

---কোন অফিস?

---"খান কম্পানি "।

---ও আচ্ছা খান কম্পানি। এই খান সাহেব কে চিনেনা এখানে এমন কেউ নেই জানেন তো।

---ওহ। ওনি অনেক নাম করা একজন বিজনেস ম্যান আর অস্ট্রেলিয়ার আরো।

---হুম। আর ওনার একটা মেয়ে আছে "উপমা খান "ওনিও একজন নামকরা ডাক্তার এখানে। শুনেছি খুব ভালোও ওনি কিন্তু কখনো দেখিনি ওনাকে দেখার ও খুব শখ লোকের মুখে শুনেছি ওনি দেখতে নাকি খুব সুন্দর। ঠিক হুর পরীর মতো।

 

---ওহ থাক ওইসব জেনে আমাদের লাভ কী আমাদের ও ঘরে বউ আছে তাই তাকে সুন্দর বলে ও কোনো লাভ নাই এবং দেখে ও। আমাদের কাছে আমাদের বউই সুন্দরী।

 

স্পর্শ আদির কথা শুনে অবাক ওর ঘরে বউ আছে।স্পর্শ বললো____

---এই তোর ঘরে বউ আছে মানলাম কিন্তু আমার ঘরে কী আছে বউ। 

---আমার ঘরের বউ আমার সোয়া তাই অন্য কোনো মেয়েকে দেখার আমার রুচি নেই। তোর বউ আছে আই মিন ওটা আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।

 

---নিজের আছে বলে আমার আছে বানিয়ে দিলো।কতো বড় মিথ্যাবাদি আজ অবধি একটা প্রেম ও করলাম না আর বিয়ে হয়ে বউও আমার ঘরে চলে আসলো আমি জানিনা ওনি জানে।

---এই তুই এতো রিয়েক্ট করছিস কেনো বললাম তো মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। আর আমি বাংলাদেশে ফিরেই তোর বিয়ের জন্য আঙ্কেল আন্টির সাথে কথা বলছি ওয়েট কর।

 

---আচ্ছা, আচ্ছা বলিস। অনেক দিনের শখ বিয়ে করার বাট লজ্জায় মা -বাবার কাছে বলতে পারছি না।

---তুই বিয়ে পাগলা হলি কবে রে?

 

তারা দুজন কথা বলতে বলতে একসময় গাড়ি চালানো বন্ধ হয়ে যায়। তখন আদি বলে উঠলো,,,,

---ভাই গাড়ি থামালেন কেনো?

---ভাইসাব গাড়ি আমি থামাইনি নিজে থেকেই এটা থেমেছে। নেমে দেখছি কী হয়েছে এটার।

---আচ্ছা।

 

ড্রাইভার নেমে গাড়ি চেক করে দেখে বললো,,,,

---ভাইসাব গাড়িতে একটু প্রবলেম হয়েছে।

---ওহ তা ঠিক করতে কতোটুকু সময় লাগবে।

---১৫-২০মিনিট লাগবে।

---আচ্ছা তাহলে আপনি ঠিক করুন আমরা এখানেই আছি।

.

আদি আর স্পর্শ গাড়ি থেকে নেমে কিছুক্ষণ আশেপাশে ঘুরলো।স্পর্শ বলে উঠলো,,,

 

---যায়গা গুলো বেশ সুন্দর নারে দোস্ত?

---হুম অনেক সুন্দর কথা ছিলো এখানে হানিমুনে আসবো বাট আর তা হলোনা।

---আমার বউকে নিয়ে আমি হানিমুন এখানে অস্ট্রেলিয়াই করবো ডিসিশন ফাইনাল।

 

দুজনে কথা বলছে আর সামনে এগোচ্ছে,,

কিছুক্ষণের জন্য স্পর্শ একটা ফোনে কথা বলতে অন্যপাশে যায় ফিরে এসে দেখে আদি নেই। সে ভাবলো হয়তো গাড়ির কাছে চলে এসেছে কিন্তু এসে দেখে তাও নেই তার ভাবনা ভুল।

স্পর্শ চিন্তায় পরে যায় এই অচেনা দেশে আদি গেলো কোথায় আর খুজবেই বা কোথায়।

স্পর্শ সামনে যেয়ে দেখে আদি একটা হসপিটালের সিকিউরিটির সাথে জোড়াজোড়ি করছে ভেতরে ডুকার জন্য।স্পর্শ একপাশে আদিকে টেনে এনে বললো__

 

---আরে, আরে কী হলো তোর তুই এখানে এমন করছিস কেনো?

---ভেতরে আমি সোয়াকে ডুকতে দেখেছি। আমাকে যেতে দে আমি সোয়ার কাছে যাবো আমার "অপরিচিতার "কাছে।

 

---তুই পাগল হয়েছিস সোয়া ভাবি এখানে আসবে কীভাবে? তুই জানিস সোয়া ভাবি আর এই পৃথিবীতে নেই।

---ওহ আমার তো মনে নেই। সোয়াকে একটু বেশিই ভালোবাসি তো তাই ওকে সবখানেই দেখি। আচ্ছা চল আমরা যাই।

---হুম, চল।

 

আদি একবার হসপিটালের দিকে তাকালো আবার সামনে ফিরে হাটতে লাগলো।

রাতে বাসায় এসে নিজের রুমে ডুকে চেন্জ করে নিলো।স্পর্শ আদির কাছে আসলো,,

 

---তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়। কাল সকালে অফিসে যেতে হবে কিন্তু।

---হুম ঠিক আছে। তুইও গিয়ে শুয়ে পড়।

 

স্পর্শ চলে গেলো নিজের রুমে। আদি স্পর্শ চলে যাওয়ার পরই ব্যাগ থেকে ড্রিংসের বোতল বের করলো এবং তা নিয়ে সোফায় বসলো। একটা ড্রিংকসের বোতলের মুখ খুলে গ্লাসে নিয়ে খেতে লাগলো।

 

আবার হারিয়ে গেলো পুরনো দিনের স্মৃতিতে ।

আদি রাতে দরজা আটকানোর পর একটিবারে জন্য ও বাইরে এসে দেখেনি সোয়াকে। ভোরের আলো যখন ফুটলো তখন সোয়ার আস্তে আস্তে একটু একটু করে জ্ঞান ফিরতে লাগলো আর একসময় ফিরে ও এলো।

উঠে দাড়াতে একটু কষ্ট হলো মাথাটা খুব যন্ত্রণা করছে। মাথায় ভেজা ভেজা লাগছে তাই হাত দিয়ে দেখে রক্ত তার হাতে।

 

---কতোটা কেটে গেছে মাথা, কেউ দেখলে এখন কতো কি জিজ্ঞেস করবে যাই আদিরার রুমে গিয়ে চেন্জ করে নেই।

 

সোয়া অনেক কষ্টে হেটে আদিরার রুমে গেলো।

---আরে ভাবি তুমি এতো সকাল আমার রুমে?

---এমনি তোমার ভাইয়া ওয়াশরুমে চেন্জ হতে গেছে তো। আর আমার ও দেড়ি হয়ে যাচ্ছে নিচে যেতে হবে তাই তোমার এখানে চেন্জ হতে চলে এলাম।

 

---আচ্ছা যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেও।

সোয়া ওয়াশরুমে ডুকে ফ্রেশ হয়ে নিলো। আদিরার ডেসিন টেবিলের সামনে বসে চুলগুলো আচড়ে নিলো।

আদিরা বলে উঠলো,,,,

---আরে ভাবি, তোমার কপালের দিক দিয়ে কাটলো কীভাবে?

---কিছুনা আসার সময় ঘুমের গোরে দেওয়ালের সাথে লেগেছে একটু মাথাটা।

 

---ওহ, দেখেশুনে চলতে পারোনা তুমি। এখন যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো তাহলে?

---আরে এতো টেনশন নিচ্ছো কেনো কিছুই তো হয়নি আমার। ফাস্ট অফ বক্স আছে?

---হ্যাঁ আছে আমার। তুমি বসো আমি এনে দিচ্ছি।

 

সোয়া ওখান থেকে মাথায় ব্যান্ডেস করে নিলো। তারপর নিচে যেয়ে দেখলো আদির মা কাজের লোকদের কী রান্না করবে দেখিয়ে দিচ্ছে আর সকালের নাস্তা সাজাচ্ছে টেবিলে।

 

!!!

সোয়া মায়ের কাছে গিয়ে বললো ____

---আমার কাছে দেন মা আমি গিয়ে টেবিলের উপর রেখে আসছি।

--আচ্ছা নাও। বাড়ির নতুন বউ আজ প্রথম এই কাজ করছো, হাসি মুখে চাইছো তাই দিলাম কাজটা। যদি এখন বলতাম না আমরা করে নিবো তুমি গিয়ে বসে থাকো, তাহলে মুখটা কালো হয়ে যেতো আর এতো সুন্দর হাসিটা উদাও হয়ে যেতো তাই "না "করলাম না। শুনো নেক্সট টাইম কাজ করতে এসোনা এখানে বাসায় ননদ আছে শ্বশুর আছে তাদের সাথে গিয়ে বসে গল্প করো।

 

---কেনো কাজ করলে কী হবে মা। আর আমার কাছেও খুব ভালো লাগেতো সবাই মিলে কাজ করতে আমি করিনা প্লিজ বাদা দিও না।

---আচ্ছা যাও করো।

 

সোয়া টেবিলে খাবার সাজালো সাথে আদিরাও। সবাই একসাথে খাবারের টেবিলে খেতে বসলো আদিও।আদির মা সোয়াকে প্রশ্ন করলো,,,,

 

----সোয়া তোমার মাথায় এটা কি হয়েছে ব্যান্ডেস করা কেনো?

---কিছু হয়নি মা আসলে সকালে আসার সময় দেওয়ালে মাথাটা একটু লেগেছে আর কি।

----ও ঠিক মতো দেখে শুনে চলো মা। বেশিকিছু হয়নি এতেই আল্লাহর কাছে অনেক কিছু।

 

আদির জাস্ট অসহ্য লেগে গিয়েছিলো সোয়ার কথা শুনে।তাই উপরে চলে গেলো আর যাওয়ার সময় বলে গেলো তার কপিটা উপরে যেনো পাঠিয়ে দেয়।

 

আদির মা সোয়াকে বললো__

----যাও মা আদিকে কপিটা দিয়ে এসো,

---আমি দিয়ে আসবো?

---তো আমি কাকে বলছি।

---আচ্ছা দেন আমি দিয়ে আসছি।

 

সোয়া কপি নিয়ে উপরে আদির রুমে ডুকলো।দরজার সামনে থেকে দাড়িয়ে বললো__

----শুনছেন আপনার কপি!

আদি কল কেটে ফোনটা হাত থেকে বিচানার উপর ছুড়ে ফেলে রেখে দেয়। 

সোয়ার হাত থেকে কপিটা নিয়ে নিচে ফেলে দিলো সাথে মগটাও।

 

---আপনি এটা ফেলে দিলেন কেনো? 

সোয়া ভয়ে ভয়ে বললো। আদি সোয়ার গালদুটো চেপে ধরলো।

ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া

হাফিজ মাহমুদ

পর্ব : ০৩

চলবে,,,,

Previous Post Next Post