---আপনি কখন এলেন বাড়িতে?
---কিছুক্ষণ আগেই আসলাম!
আদির রাগটা এখনো রয়েছে গেছে।না বলে হুট করেই বাসায় চলে এলো একটা বার বলার প্রয়োজন মনে করেনি। যদি এখন কিছু হয়ে যেতো তার। আর এসেছে ভালো কথা গাড়িতে করে আসতে পারতো না। তাও তো ওর চিন্তা হতোনা, কোন একটা অচেনা গাড়িতে করে চলে এলো। তাই জেদের চোটে বলে উঠলো,,,
---বাড়িতে এসেছেন আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করেননি।কেমন মেয়ে আপনি? আমার যে চিন্তা হয়েছিল আপনাকে জানেননা আপনি?
সোয়া ভয়ে কিছুটা পিছনে চলে গেল আদি সোয়ার দিকেই তাকিয়ে কথাগুলো বলছিলো।
---আর এসেছেন বাড়ির গাড়িতে করে আসেননি কেনো? কোন অচেনা কার গাড়িতে করে এসেছেন?
---আসলে ....
---আসলে, আসলে কি?
আদি গিয়ে সোয়ার হাত চেপে ধরে ঝাকিয়ে বললো!
---আসলে আমার ভালো লাগছিলো না।আর আমি ওখানে থেকেই বা কি করতাম।
---তাই বলে একটিবারও জানালেন না আমায়!
---আপনাকে খুজেঁছিলাম পাইনি!
আদি ভাবছে ওতো ঠিকই বলেছে ও নিজেই ছিলোনা ঠিক মতো ওখানে। লোকজন এমন ভাবে ধরেছে তাকে, আর মেয়েরা ওদের সাথে তো সেলফি তুলতে তুলতে সময় গেলো।
---ওহ সরি! আমিই ছিলাম না ওখানে।
সোয়ার হাত ছেড়ে আবার বললো,
---সরি, সরি।
---ইটস ওকে।
আদি চলে যায় দরজা অবধি গিয়ে আবার ফিরে এসে বললো,,,
----আমায় একটা কপি বানিয়ে দিবেন?
----হ্যাঁ, আপনি ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসুন। আমি দু মিনিটে নিচে আসছি।
----নাহ, আমি ড্রয়িংরুমে যাবোনা এখন আর। আমার রুমে নিয়ে আসবেন?
---কিন্তু, আপনি তো আমাকে আপনার রুমে যেতে বারন করেছেন!
----হ্যাঁ করেছিলাম কিন্তু আজ থেকে আপনি আমার রুমে আসবেন সমস্যা নেই।
----আচ্ছা ঠিক আছে।
আদি চলে গেলো সোয়া ভাবতে থাকে কি আজব মানুষরে বাবা নিজেই যেতে বারন করে আবার নিজেই যেতে বলে হায়রে তার ভবিষ্যতের বউটার যে কি হবে। আর কোনো কিছুই হলে শুধু বলে সরি সরি। সরির ব্যাপারী ওনি।
সোয়া জামাকাপড় পড়ে নিয়ে নিচে গিয়ে একটা কপি তৈরি করে নেয়।কপিটা নিয়েই আদির রুমের দরজার সামনে এসে। দরজায় একটা টোকা দিয়ে বলে,,,,
---আসতে পারি?
---হ্যাঁ, আসুন।
ভেতরে ডুকে বললো,
---আপনার কপি!
----হুম, ধন্যবাদ।
---হুহ। আমি আসি শুভ রাত্রি!
সোয়া চলে যেতে নিলেই আদি ডাক দেয়,,
---শুনেন?
---জ্বি বলুন?
---আপনার গানের গলাটা খুব সুন্দর।
---ধন্যবাদ।
---ওয়েলকাম।
সোয়া আবার চলে যেতে নিলে আদি ডাক দেয়।
---শুনেন,
---হ্যাঁ বলুন?
---কিছুটা সময় আপনার সাথে কথা বলা যাবে?
সোয়ার ভেতর আনন্দ ও হচ্ছে আবার মনেও হচ্ছে ওনার সাথে কথা বললে এখন যদি ওর পরিচয় জিজ্ঞেস করে তাহলে কি বলবে ও। আর ওর সাথে কথা বলে ক্লোজ ও যদি হয়ে যায় তাহলে, একে তারা জানতে পারলে সমস্যা হবে আর তারপর রইলো সোয়ার সেই মানুষটা যদি ও জানতে পারে আদির কথা তাহলে তো আদিকে মেরে শেষ করে দিবে আর সোয়াকে ও কিছুক্ষণ বকবে।
---আপনার ভালো না লাগলে বলবেন না, আমি জোর করছি না। আসলে, আমার ভালো লাগছে না তাই আপনার সাথে কথা বলে মনটা একটু ভালো করতে চেয়েছিলাম।কারো সাথে একটু কথা বললে আমার মনটা ভালো হয়ে যায়।
---না না সমস্যা নেই চলুন কথা বলি।বাড়িতে কেউ নেই কেমন খালি খালি লাগছে।
---হুম,চলুন বারান্দায় যাই।
---হ্যাঁ।
দুজনে বারান্দায় গিয়ে সোফাতে বসলো। আদি কপি খেতে খেতেই বললো,,,,
---আপনার পরিচয়?
আদির প্রশ্নে সোয়ার বুক কেপে উঠলো। যেটা ভেবেছে ঠিক সেটাই হলো।
---মা....মানে বুঝলাম না আমি?
---মানে আপনার পরিচয়, আপনার দেশের বাড়ি কোথায় আগে কোথায় থাকতেন?
সোয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না! একটা সময় বলেই দিলো।
----আমি জানিনা আমার দেশের বাড়ি কোথায়! অধরাদের বাড়িতে আমি আশ্রিতা। ছোটবেলায় অধরার বাবা আমাকে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছিল।ওনার বাড়িতে এনে আমাকে নিজের মেয়ে অধরার মতোই আদর করতেন ওনার ওয়াইফ ও। পাচঁটি বছর আগে ওনার ওয়াইফ মারা যায়।অধরাও আমাকে নিজের বোনের মতো ভাবে খুবই ভালো সম্পর্ক আমাদের দুজনের।
---ওহ, গুড।
সোয়া মিথ্যা বলে হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
---ওইদিন আপনার গান শুনেছিলাম আমি খুবই ভালো গান আপনি।
---হুহ, রবীন্দ্র সংগীত আমার খুবই প্রিয়, তাই মাঝে মাঝে গাই।
---আরে আমার সাথে কতোটা মিল আপনার আমার ও রবীন্দ্র সংগীত খুব ভালো লাগে।
----স্বাভাবিক হতেই পারে।
---একটা গান শুনাবেন?
---এখন?
----হ্যাঁ তো সমস্যা কি?
---না সমস্যা নেই। আচ্ছা আপনি যে আমার সাথে কথা বলছেন তারা শুনলে রাগ করবে না।
----ও দেখবে কিভাবে? আমরা বাড়িতে রুমে কথা বলছি। আর এতো রাতে বা ও এখানে আসতে যাবে কেনো।
---হুম।
---আপনার ফোন এসেছে বোধহয়!
সোয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে কেটে আবার রেখে দিলো।
----কেটে দিলেন যে?
---প্রয়োজনীয় না তাই কেটে দিলাম।
---ওহ।
ওরা কথা বলছে আর সোয়ার ফোন আসছে। তাই এবার সোয়া ফোন একেবারে বন্ধই করে দিলো।
.
!!!
---চলুন শুরু করুন?
---ঠিক আছে।
সোয়া ওই দূর আকাশের চাঁদটার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো গান। আজ এই মন খুলে কথা বললো আদি আর সোয়া তাদের এই রাতের এই স্মৃতির সাক্ষী হয়ে রইলো ওই চাঁদটা। যদিও বা বারান্দায় লাইট জ্বালানো ছিলনা চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে বারান্দা। ওই চাঁদের আলো এসে পড়েছে দুজনার মুখে। আদি সেই চাঁদ মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে গান শুনতে লাগলো। কি সুন্দর চাঁদের আলোতে সোয়ার মায়াবী মুখটা দেখা যাচ্ছে।অদ্ভুত একটা মায়া আছে এই মুখে যে কেউ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে তার ওর প্রতি ভালোবাসা জন্মে যাবে।
♬♬ভালোবাসি, ভালোবাসি এই সুরে কাছে দূরে জলেস্থলে বাজায়।
বাজায় বাশি ভালোবাসি, ভালোবাসি। আকাশে তার বুকের মাঝে ব্যথা বাজে দিগন্তকে কালো আখিঁ , আখিঁর জলে ভেজায় বাশি, ভালোবাসি ভালোবাসি।
সেই সুরে সাগর কুলে, বাধন খুলে অতোল রতোল উঠে দূরে।সেই সুরে বাজে মনে অকারণে ভুলে যাওয়া গানে কদন। কাদন হাসি ভালোবাসি, ভালোবাসি।
সেই সুরে কাছে দূরে জলেস্থলে বাজায়, বাজায় বাশি ভালোবাসি, ভালোবাসি♬♬
সোয়া গান শেষ করে এখনো আকাশপানে তাকিয়ে আছে।পাশে তাকিয়ে দেখে আদি সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছে।সোয়া চাদরটা এনে গায়ে জরিয়ে দিয়ে চলে গেল রুম থেকে।
তারা অন্য দিকে প্লেন করছে,,
----আচ্ছা, তারা তুই কেনো আমায় ডেকেছিস বলতো?
---শুন রাফসান! তোকে যেহেতু আমি এখানে ডেকেছি নিশ্চয়ই কোনো কাজে ডেকেছি!
---হ্যাঁ তো কোন কাজ বলবি?
---হুম। একটা মেয়েকে নিয়ে তুই কিছুদিন খেলবি মানে গেম খেলবি। তারপর খেলা শেষ হলে কাজ সেরে চলে আসবি ঠিক আছে।
---কোন মেয়েরে অনেকদিন হয়েছে কোনো মেয়ের সাথে আর কি!
---থাপ্পড় চিনিস, রোজ রাতে রুমে যাস এখন বলছিস অনেকদিন তুই যাসনি।
---এতো রেগে যাচ্ছিস কেনো এমনিই তো বললাম।
.