ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া - পর্ব ১৩ | Valobasar Alto Chowa 13

--আমি ওকে কি করবো জানিস?

থাক যখন করবো তখন তো দেখবি! এখন বলে মজাটা নষ্ট না করাই বেটার।

---এজ ইউর ইউস।

 

তারা আর তার ফ্রেন্ড মিলে কিছুক্ষণ কথা বলে।আদি সোয়াকে বললো_____

---নামুন!

---হ্যাঁ কি বললেন?

---বলেছি আমরা এসে পড়েছি। নামুন গাড়ি থেকে।

---ও হ্যাঁ নামছি।

 

তারা তার ফ্রেন্ডকে বললো___

---ওইতো চলে আসছে আদি!

---সাথের মেয়েটাই কি ওই মেয়েটা তারা।

---হ্যাঁ, একে নিয়েই আজকে মজা হবে।

 

তারা দৌড়ে গিয়ে আদিকে জরিয়ে ধরলো আর বললো,,,

---তুমি এসেছো আদি?

---হ্যাঁ এসেছি।

---অফ তোমাকে যে আমি কতোটা মিস করছি জানো।

 

তারা সোয়াকে শুনিয়ে শুনিয়ে জোরে বলতে লাগলো,,,,,

---তোমায় না দেখে আমি বোর হয়ে গেছি।খুব কষ্ট লেগেছে আমার জানো!

---তাই, আচ্ছা ঠিক আছে। এখন তো আমি এসেছি না তাহলে আর মন খারাপ করতে হবে না।

 

সোয়ার কাছে খুব খারাপ লেগেছিলো তখন যখন তারা আদিকে জরিয়ে ধরে ছিলো। আর খারাপ লাগারই তো কথা নিজের স্বামীকে অন্য কেউ এসে এভাবে জরিয়ে ধরলে কার না খারাপ লাগবে।তারা আদিকে বললো,,

 

---চলো ভেতরে যাই।

---হ্যাঁ চলো।আপনিও চলুন!

তিনজন ভেতরে গেলো। তারা আর আদি অন্যদের সাথে কথা বলছে আর সোয়া একটা চেয়ার টেনে তাতে বসে আছে। তারার কিছু ফ্রেন্ডস সোয়াকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলছে,,,,

 

---আরে ওইতো সেই মেয়েটা যে তারার জিবনের কাটা হয়ে আছে।কতোটা স্বার্থপর নিষ্ঠুর মেয়েটা অন্যের জিবন ধ্বংস করার জন্য চলে আসছে।

---ছিঃ এমন মেয়েকে কয়েকটা থাপ্পড় মারা উচিত। অসভ্য মেয়ে একটা এদের ধরে একেবারে গারদে ডুকানো ভালো।

 

---হ্যাঁ ঠিক বলেছিস! কাজের মেয়ে হয়ে এতো হিংসুক।

 

সোয়া তার প্রতিউত্তর কিছুই দিলো না মাথা নিচু করে চুপ হয়ে শুনে গেলো। বিয়েতে হ্যাঁ উক্তিটি বলাই তার ভুল ছিলো কেনো বলতে গেলো।আর ও যদি জানতো তারার কথা তাহলে কখনোই বলতো না! আজ তার কারনে লোকের কাছে কতোকথা শুনতে হচ্ছে।পদে পদে আদি কষ্ট দিয়েছে এইসব সহ্য করে তাও সোয়া।কেনো সোয়াকে এতো কষ্ট পেতে হচ্ছে ওর কি দোষ ও কি এই বিয়েটা জোর করে করেছে নাকি ওকে অনেক বলায় তারপর সে রাজি হয়েছে।

 

আল্লাহ না করুক সোয়ার মতো যেনো অন্য কোনো মেয়ের এমন না হয়। তাকে এভাবে কষ্ট না দেয়।তারা বলে উঠলো,,,

 

----Hello Guys!

----Hello '

----আজকের পার্টিটা আমার আর আদির জন্য! আজ আমাদের ভালোবাসার দু বছর পূর্ণ হলো।

 

সবাই একটা হাত তালি দিলো।তারা আবার বললো___

---My Boyfriend Adi Cowdhury.

আর পাঁচমাস পর আমরা বিয়ে করছি।ওর যে কাজের মেয়েটার সাথে বিয়ে হয়েছিলো তার সাথে ওর আর পাঁচমাস পর ডিবোর্স হবে। যেদিন ডিবোর্স হবে ওইদিন রাতেই আমাদের এন্গেজমেন্ট।সো, গাইজ লেটস পার্টি!

 

মিউজিক অন করলেই আদি আর তারা এবং অন্য সকলে তাদের পার্টনার নিয়ে ডান্স করতে থাকে।সোয়া এখনো বসেই রয়েছে! একটা ছেলে এসে তার পাশে বসলো!

 

---হাই প্রিতি গার্ল!

---হ্যাঁ বলুন?

---হোয়াট ইজ ইউর নেম?

---সোয়া!

---ভেরি নাইস নেম।

 

---ধন্যবাদ।

সোয়ার কথা বলতে বিরক্তি লাগছিলো লোকটার সাথে! ড্রিংকস করেছে মনে হয় তাই মাতালের মতো ঠোলে পড়ছে আর মুখ থেকেও গন্ধ আসছে।লোকটি বললো,,,,

 

----হেভ এ ডান্স ...........

---নো, নো থেন্কস।

 

সোয়া উঠে যেতে নিলেই সামনে কারো সাথে ধাক্কা খায়। আর তার হাত থেকে জুসের গ্লাসটা পড়ে যায়।মেয়েটা বললো,,,,,

---হোয়াট এ রাবিশ।

---সরি, সরি আমি খেয়াল করি নাই।

---আমার গায়ে ফেলে এখন সরি বলতে এসেছে। বেয়াদপ মেয়ে কোথাকার।

 

---আমি সত্যি বলছি দেখি নাই।

---দেখেন নাই, কেন দেখেন নাই। গড চোখ দিয়েছে কেনো তাহলে আপনাকে?

 

সোয়া মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।মেয়েটা বললো,,,,,

---চোখ থাকতেও অন্ধ নাকি। যত্তসব, আমার ড্রেসটাই নষ্ট করে দিলো। কতো দামের এই ড্রেসটা জানেন?

 

----জ্বি, না!

-- ডলার লানডান থেকে আনা।এতো দামি ড্রেস জিবনেও দেখেছেন আপনি! দেখবেন কিভাবে আর আপনার তো চোখই নেই অন্ধ আপনি।

 

তারা চিল্লাপাল্লার আওয়াজ পেয়ে ওদের কাছে আসলো।তারা বললো,,,,,

----কি হচ্ছে এখানে?

----তারা, তুই এইজন্য আমাকে পার্টিতে ইনবাইট করেছিস?

 

---কেনো? কি হইছে তোমার!

---এই অন্ধ মেয়েটা দেখেছিস জুস ফেলে আমার ড্রেসটা নোংরা করে দিয়েছে। কতো দামি এটা জানিস।

 

----আই নো, আই নো বেবি। জাস্ট কুল, ও এর দাম কীভাবে জানবে কাজের মেয়ে ও।

----ওয়াট কাজের মেয়েও এখানে। আমি এখনি চলে যাবো এখান থেকে।

 

----না, না কি বলছো কি তুমি এইসব। তুমি পার্টিতে না থাকলে কিভাবে হবে। যেতে হলে ও যাবে।

 

ওদের এইসব কান্ড দেখে লোকজন এসে বিড় জমিয়েছে।তারা বললো,,,

---শুনো,জুসটা তুমি ওর গায়ে ফেলেছো। গ্লাসটাও ভেঙেছে এখন যতটুকু যায়গা এখানে নোংরা হয়েছে ততটুকু যায়গা তুমি পরিষ্কার করবে। ওয়েটার ....

 

---ইয়েস ম্যাম? 

---একটা নেকড়া আর বালতি এনে ওকে পরিষ্কার করতে দাও।

---ওকে ম্যাম।

.

!!!

ওয়েটার একটা নেকড়া আর বালতিতে করে পানি এনে দিলো। সোয়া কিছুই না বলে সবার সামনে দিয়ে বালতি হাতে নিয়ে বসে ভাঙ্গা গ্লাসের টুকরোগুলো একসাথে করে পাশে রাখলো। তারপর নেকড়াটা পানিতে ভিজিয়ে ফ্লোরে মুছে দিলো।

 

উঠে দাঁড়ালেই সেই মেয়েটা একটা গ্লাস থেকে জুস পুরোটা সোয়ার মাথায় ঠেলে দেয়। সোয়া শুধু মেয়েটার দিকে তাকিয়েই রইলো কিছুই বললো না। মেয়েটা বললো,,,,

 

---আমার গায়ে ফেলেছিলে না জুস! ঠিক আমিও তার শোধ নিয়ে নিলাম।

 

সেখানের সবাই সোয়াকে এভাবে দেখে হো হো করে হেসে দিলো।অন্যের বিপদে তারা হাসে মানুষ নাকি তারা। এতটুকুও ভাবেনি যে যদি এখন সোয়ার মতো তাদের হতো বিপদটা। আসলে তাদের জ্ঞান বলতে কিছুই নাই। প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন,,,,

"যে জাতি মনে বড় নয়,

সে জাতি জ্ঞানেও বড় নয়। "

 

ঠিক মিলে গেলো না, তারার মনে নেই কোনো দয়া আরে তার তো মনই নেই। মানুষকে অসম্মান করতে জানে সম্মান নয়।আর জ্ঞান তো নেই যদি থাকতো তো নিজের কথা বিবেচনা করে হলেও অন্যের উপর এমন করতো না।

 

একজন একজন করে সবাই চলে গেলো ভিড় ছেড়ে। তারার আশা পূর্ণ হয়েছে সে তো এমনটাই করতে চেয়েছিলো সবার সামনে অপমান।কাউকে ছোট করে দেখতে নেই, নাহলে নিজেও যে একদিন তার কাছে ছোট হতে হয়। সেটা বোধহয় ওর মনে নেই।আদি এখানে ছিলো না ভালোই হলো সে থেকেও বা কি করতো কোন প্রতিবাদ না কখনোই না।

 

আদি সোয়াকে এই অবস্থায় দেখার আগে সোয়া সেখান থেকে চলে যায়।পার্টি শেষ হলে আদি সোয়াকে খুজঁতে থাকে।

---কোথায় গেলো মেয়েটা এখানে ধারে কাছে তো ওর ছায়াও পর্যন্ত নেই। যাই দেখি গাড়ির কাছে আছে কি -না।

 

গাড়ির কাছে এসে দেখলো না কই এখানেও তো নেই। তাই ড্রাইভার কাকুকে জিজ্ঞেস করলো,,,,

 

---কাকু, আপনি কি বৌমনিকে দেখেছেন?ও কি এখানে এসেছে?

---না এখানে আসেনি তো।

---বাড়িতে কি তাহলে চলে গেলো।

---না বাড়িতে যায়নি। ও হ্যাঁ মনে পড়েছে!

 

---কি মনে পড়েছে?

---কিছুক্ষণ আগেই হয়তো বৌমনি ওখানে দাড়িয়েছিলো। আমি একবার ভাবলাম জিজ্ঞেস করবো বাড়িতে যাবে কি না, কিন্তু তার আগেই!

 

---তার আগে কি?

---তার আগেই বৌমনি অন্য একটা গাড়িতে উঠে চলে যায়।

---কোন গাড়ি কি গাড়ি, আর কোথায়ই বা গেলো ও।

 

আদি চিন্তায় পড়ে গেলো কোথায় গেলো সোয়া কাউকে কিছু না বলে। আমাকে না বলুক অন্তত ড্রাইভার কাকুকে তো বলে যেতো পারতো।

---কাকু একটু তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাবেন প্লিজ!

---ঠিক আছে।

 

যত দ্রুত পারে তত দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছে ড্রাইভার। বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামে, দারোয়ান গেট খুলে দিতে তখন গাড়িটা থেমেছিলো গেটের সামনে। আদি গাড়ির জানালা দিয়ে দেখে কিছুটা দূর একটা গাড়ি যাচ্ছে।

 

তারপর গেট খোলা হলেই গাড়ি ভেতরে ডুকে। আদি বাড়িতে যেয়ে প্রথম কিচেন চেক করলো না নেই। তারপর আদিরার রুমের দরজা খোলা ছিলো। তাই আদি তাড়াহুড়োতে হুট করেই ডুকে পরে রুমে।সোয়ার ওয়াশরুমে গিয়েছিল শাওয়ার নিতে। আদি রুমে দেখতে না পেয়ে ওয়াশরুমের দরজা খুলে ডুকে দেখতে যায় আর সোয়া ও তখন বের হতে যায়।দুজনেই ধাক্কা খায় আর সোয়া আদির উপর পড়ে যায়।

 

---আউচ! 

বলেই সোয়া চোখ বন্ধ করে নিলো।

আদি ও নিচে পরে সোয়াকে একহাত দিয়ে জরিয়ে ধরে।আদি চোখ তুলে দেখে সোয়া চোখ জোড়া বন্ধ করে আছে।তারপর আদি বললো,,,

 

---সরি!

সোয়া উঠে দাড়াতে নিলেই দেখে যে আদি তাকে হাত দিয়ে ধরে জরিয়ে আছে।হাতের দিকে তাকাতেই আদি দ্রুত হাত সরিয়ে নিলো।

---ইটস ওকে!

 

সোয়া উঠে দাড়ালো তার মনেই ছিলোনা যে তার পড়নে শুধু টাওয়াল ছিলো।সোয়া টের পেয়ে টাওয়াল জরিয়ে নিলো।

---আপনি এখানে?

 

আদিও সোয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে টাওয়াল পড়ে আছে সোয়া।তাই সোয়াকে পিছন ফিরে তাকিয়ে বললো,,, 

ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া

হাফিজ মাহমুদ

পর্ব : ১৩

.

Previous Post Next Post