ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া - পর্ব ০২

আমাদের এই অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে তুমি এই বিয়েটা করে নেও মা। দয়া কর মা আমাদের দয়া। 

আদির বাবাও ঠিক একই কথা বললো। সোয়া কী করবে ভেবে পাচ্ছেনা, একটা অচেনা লোককে সে কীভাবে বিয়ে করবে। ঠিক করে চিনেনা জানেনা।

 

আর আঙ্কেল ও যেভাবে বলছে সে কি করবে বিয়ে নাকি করবে না। তারপর ভাবতে ভাবতে একসময় "হ্যাঁ "শব্দটি বলে দেয়।

 

তাকে অন্য মেয়েরা বৌ সাজাতে ঘরে নিয়ে যায়। আর কিছুক্ষণ পর সোয়াকে বৌ সাজিয়ে ড্রয়িংরুমে সোফায় বসায়। আদি এখনো সোয়ার মুখ দেখেনি তবুও মনে মনে বলছে "অধরা তো পালিয়েছে তাহলে এ আবার কে "কথাটা ভাবতেই আবার তার রাগ উঠে গেল।

 

কাজী সাহেব তাদের বিয়ে পড়িয়ে দিলো। অধরার বাবা সোয়াকে গাড়ি পর্যন্ত বিদায় দিয়ে আসলো। সোয়া গাড়িতে উঠে বসলো।

 

আদিদের বাড়িতে ২ঘন্টা পর পৌঁছে যায়। আদির বাবা আদিকে ড্রয়িংরুমে দাড়িয়ে বুঝালো যে অধরা পালিয়ে গেছে তাই তাদের দু বন্ধুর অনুরোধে সোয়া এই বিয়েটি করে।

 

আদি বরাবরই কোনোদিন বাবার কথা অমান্য করেনি সবসময় সব কথা শুনেছে। আদির বাবা আদিকে যা বললো তার উওর না দিয়েই সোজা উপরে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দেয়।

.

আদিরা আজকে রাতে সোয়ার থাকার জন্য সোয়াকে নিজের রুমে নিয়ে যায়।

 

---তুমি এখানে বসো ভাবি, আমি আমার এখান থেকে তোমার জন্য কাপড় আনছি তুমি চেন্জ করে নিও।

সোয়া বললো,,,

---ঠিক আছে।

 

---আচ্ছা, ভাবি আমি যে প্রথমেই তোমাকে তুমি করে বলছি কিছু মনে করছো না তো। আসলে আমি এমনি অচেনা হোক বা সে চেনা ছোট হোক বা বড় তুমি করেই বলতে থাকি।

---না, না বলতে পারো। আমি আবার কী মনে করবো।

 

---ওকে, থেন্কুউ মাই কিউটি ভাবি।

সোয়ার গাল দুটো টেনে ধরে বললো আদিরা।

সোয়া কাপড় পাল্টে বেশ কিছুক্ষণ আদিরার সাথে কথা বললো। তারা দুজনে অনেকটা ক্লোজ হয়ে গেছে ঠিক একটা ভালো বন্ধুর মতো।যে কেউ দেখলে বলবে তারা দুজন বোধহয় অনেক ভালো ফ্রেন্ড অনেক ভালো সম্পর্ক তাদের। তারপর দুজনে কিছুক্ষণ কথা বলার পর শুয়ে পড়ে।

 

সকালে সোয়া ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নেয়। আদিরা ঘুম থেকে উঠে দেখে সোয়া বারান্দায় যে ফুলের টবগুলো আছে তাতে পানি দিচ্ছে যত্ন করছে।

আদিরা পিছন থেকে সোয়াকে গিয়ে জরিয়ে ধরে বললো,,,

---গুড মর্নিং মাই কিউটি ভাবি।

---গুড মর্নিং। রাতে ঘুম কেমন হলো তোমার ননদীনি।

 

---খুব ভালো, তোমার?

---হুম ভালোই।যাও ফ্রেশ হয়ে আসো আমি এখানেই তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।

---আচ্ছা ঠিক আছে।

 

আদিরা চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো,,, 

---ভাবি, জানো তোমাকে না আমার কাছে খুব ভালো লাগে।

 

সোয়া একগাল হেসে বললো,,

---আমাকে ভালো লাগার কারন কি?

---এই তুমি আমার মায়ের মতো কতো ভালো ভাবে কথা বলো। আমার একটা বোন নেই এটাই দুঃখ আজ থেকে আমার ভাবি প্লাস একটা আবদার করার মতো বোনও হয়ে গেলো। তোমার ভয়েসটা খুব মিষ্টি জানো একদম মিষ্টির মতো।

 

---হাঃহাঃহাঃ আমি তোমার কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো ভেবে পাচ্ছি না। তুমি কি আমার ভয়েস খেয়ে দেখছো যে মিষ্টি বললে?

---ইয়াম, ইয়াম খুব টেস্টি তোমার কণ্ঠস্বর আমি খেয়ে নিয়েছি।আচ্ছা, তুমি এতো সুন্দর কেনো দূর ভাল্লাগেনা আমার হিংসা হয় তোমায় নিয়ে জানো।

 

---ওমা কেনো হিংসা হয় আমায় নিয়ে?

---কেনো হয় জানো তোমার ভয়েস যেমন মিষ্টি আর তুমি আমার থেকে তেমন সুন্দর। আর আমি সুন্দর না কালো তাই। 

---ওমা কে বললো তুমি তো দেখতে একটা পরীর মতো।

---সত্যি?

---হ্যাঁ সত্যি।

---আমি দেখতে পরীর মতো ইয়েহ।

.

আদিরা টাওয়ালটা বিচানার উপর রেখে ডেসিন টেবিলের সামনে চলে গেল। আর সোয়া বিচানার উপর থেকে টাওয়ালটা নিয়ে বারান্দায় দড়িতে মেলে দিলো।

 

দুজন কথা বলতে বলতে আদিরার মা চলে এলো।সোয়া শাশুড়ি মাকে দেখে মাথায় গোমটা দিলো।শাশুড়ি মা বললো,,,

---মা তুমি আমার সাথে নিচে এসো আমাদের কয়েকজন আত্মীয় তোমায় দেখতে এসেছে।

 

---জ্বী চলুন।

ওরা চলে যেতে নিলেই আদিরা বলে উঠলো,,,

---এ আমি যাবো আমি যাবো দাড়াও।

---হ্যাঁ আসো আদিরা।

 

নিচে নিয়ে সোয়াকে আদির মা সোফায় বসালো। আত্মীয়রা বললো,,,

---বাহ আদির মা এটা কী মেয়ে নাকি অন্যকিছু। কী সুন্দর মিষ্টি দেখতে গো। 

তা তোমার নাম কি মা?

--জ্বি, আমার নাম সোয়া।

 

যখন সোয়া নিজের নাম সোয়া বললো তখন কেমন জানি গলাটা কেপে আসছিলো।আত্মীয়রা বললো,,,, 

---তোমার মতোই দেখতে তোমার নামটা মিষ্টি।দুঃখ আমার ছেলের জন্য আজও এমন মেয়ে ফেলাম না।

 

আদির মা বললো,,,

---ওয়েট করুন পাবেন ভাবি ধৈর্যহারা হবেন না। ---খুঁজতেছি আজ ও একটা ফেলাম না। আচ্ছা আমি যাই বাসায় কাজ পড়ে রয়েছে।

---সন্ধ্যায় আসবেন অনুষ্ঠানে কিন্তু ভাবি।

---আচ্ছা আসবো।

 

রাতে অনুষ্ঠান হলো অনেক মেহমান আসলো সবার মুখে একটাই কথা "আপনাদের বউটা অনেক সুন্দর হইছে "।আদির তো জাস্ট অসহ্য লাগছে সবার মুখে একই বানী শুনে।

 

আদিরা নিজের হাতে সোয়াকে খুব সুন্দর করে সাজালো তারপর আদির রুমে গিয়ে বসিয়ে দিয়ে সোয়াকে চলে গেলো।

 

সোয়া আদির অপেক্ষায় বসে আছে, খুব ভয় করছে তার। আদি তো তাকে দেখতেই পারেনা আজ জানি কি বলে। ওইদিন ভুলবশত সরবতটা পড়ে গেলো আদির গায়ে যার জন্য সোয়া "সরি "ও বললো। তাও কতো রেগে গেলো। একজন মানুষ এতো রাগী হয়ে কীভাবে আল্লাহ।

 

সোয়ার অপেক্ষার প্রহর পেরিয়ে একসময় আদি এসে রুমে ডুকে। আদির তো সোয়াকে বিচানায় দেখেই রাগ চরম সীমান্তে উঠে গেলো। সোয়া উঠে আদিকে ভয়ে ভয়ে সালাম করতে গেলো। পা ছুয়ে সালাম করতে নিলেই আদি ধাক্কা দিয়ে সোয়াকে নিজের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়।

 

---ইউ লিসেন, আমি আপনাকে বউ হিসেবে মানিনা। বাবার কথায় জাস্ট বিয়েটা করেছি আমি ওকে। আপনাকে আমি কোনোদিন স্ত্রীর অধিকার দিবো না। স্বামীর ভালোবাসা কোনোদিন পাবেন না আমার কাছ থেকে। আমি কাউকে ভালোবাসি তাকেই আমার জিবনে চাই ঠিক আছে আর আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না।এই বিয়েতো আমি মানিই না শুধু শুধু রুমটা সাজিয়েছে।

 

আদি গিয়েই বিচানার উপরের সবগুলো ফুল তুলে সোয়ার মুখের উপর ছুড়ে ফেলে। টাঙানো ফুলগুলোও ছিড়ে ফেলে আদি।

 

সেদিনের পর থেকে আদি সোয়াকে দু চোখেও দেখতে পারেনা।সোয়া বলে উঠলো,,,

---শুনেন?

---ডোন্ট টোক টু মি। আই জাস্ট হেট ইউ হেট ইউ। নাউ লিভ মাই রুম।

 

সোয়া আদির দমক শুনে ভয়ে কেঁপে উঠলো। সোয়া যাচ্ছেনা দেখে আদি সোয়ার একটা হাত ধরে টেনে বাইরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় আর ভেতর থেকে দরজাটা আটকে দেয়।

সোয়াকে যেভাবে আদি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো তাতে সোয়া অনেক ব্যথা পায়।ধাক্কা দেওয়ার সাথে সাথেই সোয়া গিয়ে দেওয়ালের সাথে মাথাটা চোট খায়।কপালের দিকটা ফেটে রক্ত ও পড়তে থাকে।

 

সোয়া মাথায় হাত দিয়ে ধরে দাড়াতে নিলেই ঠাস করে নিচে পড়ে যায়। জ্ঞান হারিয়ে সে দরজার সামনেই পড়ে থাকে।

 

ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া

হাফিজ মাহমুদ

পর্ব : ০২

চলবে,,,,,,,

Previous Post Next Post