ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া - পর্ব ০১

পূর্নিমা রাতে আকাশের দিকে তাকালে দেখা যায় দুর আকাশের এই চাঁদ আর মিটি মিটি তারা গুলো কখনো মেঘের আড়ালে হারিয়ে যায় আবার ভেসে উঠে, মনে হচ্ছে চাঁদ আর তারারা লুকোচুরি খেলছে। আদি একাকি বসে আছে, আকাশের দিকে চেয়ে, সামনে তাকালে মনেহয় আকাশ অতি নিকটে কিছুদুর গেলেই মনেহয় আকাশের সিমান্ত শেষ , সাথে সদ্য ফোটা হাসনাহেনা ফুলের সুভাষ এই মনোরম পরিবেশে আদি বসে আছে ছাদে, 

দোলনায় দোল খাচ্ছে আর মনে মনে ভাবতাছে আকাশকে দেখলে যেমন অনেক কাছে মনে হলেও তার শেষ সীমানা কোথায় তা দেখা যায় না তাকে ছোঁয়া যায়না। ঠিক সোয়া ও তার কাছে ওই দুর আকাশে মতো, তাকে ভালোবাসে কাছে পাওয়া য়ায়না, তাকে স্পর্শ করা যায়না।

পুরনো স্মৃতি, পুরনো দিনগুলো মনে করতে করতে কখন যে দোলনায় ঘুমিয়ে পড়লো আদি টের পায়নি। রাত তখন বোধহয় ২টা বাজে স্পর্শ ফোন করলো আদিকে,আদি ঘুমঘুম কণ্ঠে বললো____

 

--আরে ভাই এতো রাতে ফোন করলি কেন?

--এত রাতে ফোন করলাম মানে তুই ঘড়িতে দেখেছিস কয়টা বাজে, রাত ২টা বাজে।

--হুম তো। ২টা বাজে কি হয়েছে?

 

--তোর কি মনে নেই আজকে ভোর ৪টায় আমাদের অস্ট্রেলিয়ার ফ্লাইট।

-- আমার তো মনেই নেই। তুই এয়ারপোর্ট চলে যা আমি রেডি হয়ে চলে আসছি।

--আমি তোর বাসায় আসতেছি গাড়ি নিয়ে।

 

--তোর আসতে হবে না, আমি নিজেই যেতে পারবো।

স্পর্শ রেগে গিয়ে বললো,,,

--বলছিনা আমি আসতেছি।

--এতো জেদ ধরছিস কেন। আচ্ছা ঠিক আছে চলে আয় দুজনে একসাথে যাবো।

 

আদি ফোন রেখে তড়িঘড়ি করে বিচানা থেকে উঠে মুখ ধুয়ে রেডি হয়ে নিলো। তারপর আলমারি থেকে ট্রলিতে নিজের জামাকাপড় ও প্রয়োজনীয় জিনিস কাগজ পএ নিয়ে নিলো।

নিজের রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে আসলো। মা -বাবাকে উদ্দেশ্যে করে বললো____

 

--মা -বাবা আসছি।

আদির মা বললো,,,,

--হুম সাবধানে যাস বাবা। 

--জ্বি। দুজনের খেয়াল রেখো, আর বাবা তুমি ঠিক মতো ঔষুধ খেয়ো কেমন।

 

আদির বাবা আদির কাধেঁ হাত রেখে বললো,,,,

--হুম, রাখবো আর ঠিক মতো ঔষুধ ও খাবো। তুইও নিজের খেয়াল রাখিস। 

--হ্যাঁ বাবা। আদিরা ভাইয়া আসি হ্যাঁ বাবু নিজের খেয়াল রাখিস ঠিক মতো খাবার খাবি। তুই আস্ত একটা পাগলী না খেয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়িস।

 

আদিরা কাদোঁ কাদোঁ কণ্ঠে বললো,,,, 

--ভাইয়া তুমি কিন্তু তাড়াতাড়ি চলে এসো অস্ট্রেলিয়া থেকে। তোমাকে ছাড়া ভালো লাগেনা।

--এই পাগলী কাঁদছিস কেনো হুহ।আমি কি ওখানে থেকে যাবো নাকি। আমিতো চলেই আসবো। 

কষ্ট ভরা একটা হাসি মুখে এনে বললো আদি কথাটা।

 

সবার সাথে কথা বলার পর বিদায় নিয়ে সর্বশেষ গিয়ে দাড়ালো সোয়ার ছবির সামনে। খুব যত্ন করে আগলে রেখেছে ছবিটা। কী অদ্ভুত সুন্দর লাগছে না সোয়াকে কালো শাড়ি আর কপালে কালো টিপে। একদম অস্পরীর মতো লাগছে। আদি নিচে স্টোর রুমে অনেক পুরনো জিনিস পএের পিছনে দেওয়ালে টাঙিয়ে রেখেছিলো। সোয়া নিজেও তো জানেনা সেই কবে আদি তার এই ছবিটি এখানে তার অজান্তে লুকিয়ে রেখেছে। আজ একটি বছর হয়ে গেলো এখনোও টাঙানোই আছে সেই ছবিটি।

.

আদি ছবিটির সামনে গিয়ে দাড়ালো। আদি আবারও প্রেমে পরলো তার সোয়ার প্রেমে। অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে তার সোয়া তারদিকে। আদির বলতে মন চাইছে "এই তুমি এভাবে তাকিয়ো না তো যে কেউ দেখলে প্রেমে পড়বে তোমার "।আর সোয়া লজ্জা পেয়ে চোখ নিচু করে নিতো। আদির মন চাইছে সোয়ার এই ছবিটি বুকে নিয়ে এখানেই থেকে যেতে।

 

আবার যদি সোয়াকে তার কাছে পেতো তাহলে নিজের বুকের ভেতর খুব যত্ন সহকারে লুকিয়ে রাখতো। যেনো কেউ তাকে ছুঁয়ে ধরতে না পারে নিয়ে যেতে না পারে। আবার আদির জিবন থেকে আদিকে একা করে দিয়ে চলে যেতে না পারে। 

প্রথম সেদিন সোয়াকে দেখেছিলো আদি অধরাদের বাড়িতে সাধারণ একটা গ্রাউন পড়নে চুলগুলো খোলা কানের কাছে গুজে রেখেছিলো সোয়া। বেশ ভালো লাগছিলো সেদিন সোয়াকে।

 

বাসায় আদি এসেছিলো বলে সোয়া নাস্তা -পানি আনতে গেলো তার জন্য। বাড়ির নতুন জামাই হবে আদি নাস্তা পানি না দিলে কেমন দেখায়।

 

আদি রেগেই সম্ভবত রুম থেকে বেরিয়ে আসছিলো আর সোয়াও নাস্তা নিয়ে রুমে ডুকছিলো। দুজনেই বরাবর ধাক্কা খেলো ট্রে থেকে সরবতের গ্লাসের খানিকটা সরবত আদির ব্লেজারে পড়ে যায়।

 

---হোয়াট দ্যা।

---সরি, সরি আম সো সরি আমি আসলে দেখতে পাইনি।

সোয়া বলেই আদির ব্লেজারের দিকে হাত বাড়িয়ে পরিষ্কার করতে নিলেই আদি সরিয়ে দেয়।

 

আদি রাগে জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,,

---চোখ কোথায় থাকে আপনার। দেখে শুনে চলতে পারেন না, আর চলতেই যখন পারেননা তখন বসে থাকলেই তো হয় হাঁটার দরকার কী।

যতসব ..........

 

সোয়া মাথা নিচু করে বলল,,, 

---আমি সরি বলেছি,,

---সরি ইজ মাই ফুট। যতসব চাকর বাকরের দল, এইসব চাকরানী গিরি ছাড়া আর কিছুই তো পারেনা আবার আসছে সরি বলতে ননসেন্স কোথাকার।

 

---আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি আপনি একটু বসুন।

--ইউ লিসেন। আপনার মতো চাকরের হাতে আমি আমার ব্লেজার পরিষ্কার করতে দিবো ভেবেছেন। কখনোই না, এতো দামী জামা কাপড় ধোয়া আপনাদের কাম্য নয়। আমার বাড়িতে আমাদের সব জামা কাপড় ধোয়ার জন্য আলাদা লোক আছে। যাকে তাকে দেই না এইসব কাজ ওকে।

আর কথা বলে আমার টাইম লস করার দরকার নেই। নেক্সট টাইম দেখে শুনে চলবেন।

.

বলেই আদি রাগ দেখিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। সোয়া পিছন ফিরে একবার আদির দিকে তাকালো আবার নিচে বসে ভাঙ্গা গ্লাসের টুকরো গুলো উঠিয়ে নিলো।

 

সোয়া শান্ত একটা মেয়ে প্রয়োজনের তুলনায় কথাই বলে না। আদি তাকে এতো নিচু করে কথা বললো এতো কিছু বললো সে এইসব কানেই নেয়নি।

 

আদি বাড়িতে এসেছিলো অধরার বাবাকে এই বিয়ে ভাঙ্গার কথা বলতে। সে চায়না অধরাকে বিয়ে করতে। অধরার বাবা আর আদির বাবা দুজনেই ছেলে বেলা থেকে বন্ধু। ব্যবসার দিক থেকেও ভালো সম্পর্ক তাদের।

 

তাদের বন্ধুত্ব রক্ষা করার জন্য আদি আর অধরার এই বিয়ে। কিন্তু আদি এই বিয়ে করবে না সে অন্য কাউকে ভালোবাসে আর তাকেই বিয়ে করবে! অধরার বাবাকে এইনিয়ে বললে তিনি "না "বলে দেন।। তাই আদি রেগে চলে যায়।

 

আদি অধরার সাথেও একদিন এই সম্পর্কে কথা বলেছিলো। কিন্তু, অধরার "না "বলেই দেয়। অধরাও চায় না তার বাবার বিরুদ্ধে যেয়ে এই বিয়েটা ভেঙ্গে যাক।

 

বিয়ের দিন চলে এলো, আদি জামাই সেজে বসে আছে ড্রয়িংরুমে। সোয়া গেলো অধরাকে রুম থেকে আনতে।

 

---অধরা, অধরা কোথায় তুই? নিচে সবাই ওয়েট করছে। কাজী সাহেব সেই কখন এসে বসে রয়েছে।

 

সোয়া সাড়া না পেয়ে অধরার পুরো রুম খুজেঁ দেখলো রুমটা সম্পূর্ণ ফাকা। কেউ নেই সোয়া ছাড়া, অধরা তো রুমের দাড়ে কাছেও নেই। সোয়া সম্পূর্ণ রুম খুজে দেখলো নেই অধরা রুমে।

.

সোয়া গিয়ে জানালো অধরার বাবাকে। একে একে বাড়ির সবাই জেনে গেলো অধরা রুমে নেই। পুরো বাড়ি খুজে নিলো অধরার ছায়াটুকু নেই বাড়িতে।

 

সোয়া বললো,,,, 

---আঙ্কেল, টেনশন করবেন না। হয়তো ও প্রয়োজনে গেছে কোথাও চলে আসবে।

---তুমি বলছো টেনশন করবো না। ও যদি কোথাও যেতো তাহলে কাউকে বলে যেতো হুট করে কোথাও চলে যাওয়ার মেয়ে ও নয়। হয়তো পালিয়েছে আমার সম্মান নষ্ট করার জন্য।

এখন আমি আশরাফকে কি বলবো।

 

আদির বাবা ও তাৎখনিক চলে এলো,,

---কিরে তুই এভাবে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছিস কেনো। আর কাজী সাহেব সেই কখন এসে বসে রয়েছে তোর মেয়েকে নিয়ে আয়।

 

সবাই চুপ করে রইলো কেউ কিছুই বললো না।আদির বাবা সবাইকে চুপ থাকতে দেখে আবার বললো,,,

---অদ্ভুত তো চুপ করে আছো কেনো তোমরা কিছুতো বলো আমায়।

সোয়া বললো__আমি বলছি আঙ্কেল! আসলে অধরাকে পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও।পুরো বাড়ি তারপর বাড়ির আশ -পাশ সব দেখলো ও নেই। আঙ্কেলের ধারনা ও পালিয়ে গেছে।

 

---এখন তাহলে কী করবো।

আদির বাবা পাশের চেয়ারটায় ধুম করে বসে যায়। সোয়ার এ কি বললো শুভ কাজেই অমঙ্গলের চিহ্ন।

 

এতক্ষণে আদির কানেও খবর পৌছে গেছে। বউ পালিয়েছে, শুনে তো আদি মহাখুশি। এতোদিনে আদি বলে বিয়ে আটকাতে পারেনি আর আজ অধরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করে দিলো। মনে করেই নাচতে মন চাচ্ছে আদির।

 

অধরার বাবা বলতে লাগলো,,

 

---ও এমন ভাবে আমার বিপদ ডেকে আনবে কখনো বুঝতে পারিনি আমি। কি করবো এখন আমি।

---এখন বাইরের লোক জানতে পারলে কতো রকম কথা বলবে। আর শুভ কাজও এমনভাবে ফেলে রাখা উচিত নয়।

 

অধরার বাবা কিছুক্ষণ ভেবে সোয়ার দিকে তাকিয়ে তার সামনে যেয়ে সোয়ার দুটো হাত মুস্ঠি বদ্ধ করে নিজের হাতে নিলো। ঠিক বিপদের সময় যেমনটা একে অপরের কাছে বিক্ষা চায়। বিপদে পড়ে আজ অধরার বাবাও সোয়ার কাছে বিক্ষা চাইবে।

 

বিপদে পড়লে মানুষ অন্য কারো কাছে বিক্ষা চাইতে হয় এটাই নিয়ম হয়তো জগতের।

অধরার বাবা বলতে লাগলো,,,

---তোমার কাছে আমি মা একটা বিক্ষা চাইছি দিবে?

--জ্বি বলুন আঙ্কেল?

 

ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া

হাফিজ মাহমুদ

সূচনা: পর্ব

Previous Post Next Post