এক ভিলিয়ান পর্ব ২

 কালু মাস্তান কে এক এক করে সবাই চাঁদা দিচ্ছে।  কাব্য অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে৷  কাব্য মনে মনে ভাবছে,  মানুষগুলো এত কষ্ট করে টাকা উপার্জন করলো সেই কষ্টের টাকা আরেকজন বসে বসে ভাগ বসাচ্ছে শান্তি তে। 


কাব্য করিম চাচাকে বললো
- চাচা এই লোকটারে কেউ কিছু বলে না।  ( কাব্য)
- কে কি বলবে?  বলতে গেলে তো মরতে হবে।  কালু মাস্তান এই ঘাটের নাম করা মাস্তান সবাই ওকে ভয় পায়।  ওর ধান্দা শুধু এই একটা না আরো আছে।  ( করিম) 
- আইনের লোকেরা কিছু বলে না।  ( কাব্য)
- কি বলবে?  টাকা দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করে রেখেছে।  ওর নামে থানায় মামলা ও হয় না।  কেউ করতে গেলে তার লাশ পরের দিন নদীতে পাওয়া যায়।  ( করিম) 

কাব্য করিম চাচাকে আর কিছু জিঙ্গেস করলো না।  কালু মাস্তানের দিকে চেয়ে থাকলো।  কালু মাস্তান সবার থেকে টাকা নিয়ে চলে গেলো। করিম  কাব্যের হাতে ১০০ টাকা দিয়ে
- বাসায় বাজার করে নিয়ে যাস।  ( করিম) 

কাব্য টাকাটা হাতে নিয়ে মাথা নাড়ালো।  বাজার থেকে বাজার করে নিয়ে বাসায় গেলো।  কাব্য রা নিত্যান্ত গরীব হওয়ায় ওদের উপর অনেকে অনেক ঝুলুম করে।  কেউ কেউ জোর করে ওদের থেকে কাজ করিয়ে নেয়।  বাধ্য হয়ে কাজ করে দেয় কাব্য আর করিমুন বেগম। 

কাব্য রোজ কাজে যায়। কালু মাস্তান সবার থেকে টাকা চাঁদা তুলতো।  এতে শ্রমিকরা অতিষ্ঠ হলে ও কেউ কিছু বলতে পারতো না।  কাব্য কাজ শেষে  যা টাকা পায় তা দিয়ে কোনো রকম টেনে টুনে সংসার চলে ওদের।  আশরাফ মিয়ার ওষুধ কিনতে হিমশিম খেয়ে যায় কাব্য। 
দেখতে দেখতে ১ মাস কেটে যায়

১ মাস পর
রাত ৪ টা
কাব্য আর করিম চাচা নদীর ঘাটে যেতেই চমকে উঠলো।  কালু মাস্তানের লাশ রসি দিয়ে বাঁশের সাথে বাঁধা ।  করিম চাচা চিল্লিয়ে উঠলো।  শ্রমিকরা সবাই করিম চাচার চিল্লানো শুনে সবাই এসে কালু মাস্তান কে দেখে থ হয়ে যায়।  পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসে।  কালু মাস্তানের লাশ নদী থেকে তোলা হয়।  সবাই অবাক হয়ে কালু মাস্তানের চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে।  চেহারা দেখলেই যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে।  মুখ পুরো থেঁতলে গেছে৷  পুলিশের অফিসার সবাইকে জিঙ্গেস করলে করিম চাচার কথা বলে।  করিম চাচা অফিসার কে বললো,  স্যার এখানে এসে দেখি কালু মাস্তান বাঁধা ।  তারপর সবাই এসে দেখে।  পুলিশ কালু মাস্তান কে নিয়ে চলে গেলো ময়নাতদন্তের জন্য।  শ্রমিকরা কালু মাস্তান মারা যাবার কারণে সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো ।  কেউ কেউ বলতে লাগলো,  এখন থেকে আর আমাদের কষ্টের টাকা কাউকে দিতে হবে না।  আমাদের টাকা আমরা বাসায় নিয়ে যেতে পারবো।  অনেক অত্যাচার করেছে আমাকে।  না জানি আরো কতো মানুষের সাথে খারাপ কিছু করছে।  একে মেরে ফেলেছে ভালো কাজ করেছে।  না হলে আরো কতো মানুষের ক্ষতি করতো কে জানে। 

এক এক জন এক এক ধরণের কথা বলতে লাগলো।  আজ আর কাজ হবে বলে সবাইকে ছুটি দিয়ে দিলো।  কালু মাস্তান মার্ডার হয়েছে এটা নিউজে দেখে সবাই অনেক খুশি হয়ে গেছে।  পুরো এলাকাটা দখল করে খাচ্ছিলো। এখন আর পারবে না। 

**
কাব্য  ৭ টায় বাসায় ফিরতে করিমুন বেগম কাব্যকে দেখে
- কাজে যেয়ে চলে আসলি কেন?  তোর শরীর ঠিক আছে।  ( করিমুন) 
- হ্যা মা।  কালু মাস্তানকে কে বা কারা মেরে ফেলছে এই জন্য আর কাজ হয় নি। ( কাব্য)

করিমুন বেগম কাব্যের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে
- কি বলছিস?  ওকে মারার মতো কেউ নেই এখানে।  ( করিমুন) 
- নেই বলেই তো মেরে দিলো। ( কাব্য) 
- তুই আবার এ ভেতর জড়াস না।  ( করিমুন)
- না মা আমি কেন জড়াবো এসবে।  ( কাব্য) 
- হ্যা ঠিক আছে।  ঘরে বাজার নেই।  বাজার করতে যাবি।  ( করিমুন) 

কাব্যের মুখটা কালো হয়ে গেলো।  করিমুন বেগম বুঝতে পেরে
- কি রে কি হয়েছে?  ( করিমুন) 
- গতকাল বাবার ওষুধ কিনতে সব টাকা খরচ হয়ে গেছে।  ভাবছি আজ কাজ শেষ করে বাজার নিয়ে বাসায় ফিরবো ( কাব্য) 
- কারো থেকে তো ধার করে নিয়ে আসতে পারতি। ( করিমুন বেগম) 
- সবার কাছেই চেয়েছি  কারো কাছে ছিলো না।  ( কাব্য) 
- ঠিক আছে দেখি আমি কিছু পায় কি না।  ( করিমুন) 
করিমুন বেগম চলে গেলো।  কাব্য  মনে মনে বলতে লাগলো,  একদিন কাজ না করলে খাবারের অভাব পড়ে যায়।  এখন কোথায় বের হলো।  রাস্তায় বের হলে সবার  খারাপ কথা শুনতে শুনতে আর বাসা থেকে বের হয় না কাব্য। 

এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেলো।  পুলিশ কালু মাস্তানের খুনের তদন্ত করতে লাগলো কিন্তু কোনো প্রমাণ এ পাচ্ছে না। 
একদিন
দুপুর ১২ টা
শ্রমিকরা সবাই কাজ শেষ করে বসে আছে।  তখনি কালু মাস্তানের লোকজন এসে সবার কাছে চাঁদা দাবি করে।  সবাই কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।  করিম চাচা সবার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
- যাকে চাঁদা দিতাম তাকে নিয়ে এসো।  সে ছাড়া আমরা অন্য কারো কাছে চাঁদা দিবো না।  আমাদের কষ্টের উপার্জিত টাকা আমরা আর কাউকে  দিবো না।  ( করিম)

করিম চাচার কথা শুনে একজন করিম চাচার দিকে তেড়ে এসে বলতে লাগলো,  এই বুড়ো বেশি বেশি বুঝে।  ওকে উত্তম মাধ্যম দিবো।  আমাদের চাঁদা দিবি না। 

করিম চাচার কাছে আসতেই শ্রমিকরা সবাই এগিয়ে আসলো।  কাব্য বলে উঠলো,  কেউ জানো পালিয়ে যেতে না পারে। 

শ্রমিকরা সবাই কালু মাস্তানের লোকদের উপর ঝাপিয়ে পড়লো।  মারতে শুরু করলো।  এর ভেতর পুলিশ এসে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে মারার কারণ জানতে চাইলে করিম চাচা বললো,
- আমাদের কাছে চাঁদা দাবি করতে আসছে।  ভালো মতো চাঁদা বুঝিয়ে দিলাম।  ( করিম চাচা) 

পুলিশ ওদের সবাইকে দড়ি দিয়ে বেঁধে গাড়িতে তুললো।  পুলিশ বললো,  এই ঘাটে কেউ যদি চাঁদা চাইতে আসে তাহলে আমাদের ইনফর্ম করবে।  আর তোমরা সবাই মিল এভাবে চাদাবাজকে পতিহত করবে। 

পুলিশ চলে গেলো।  করিম চাচা হয়ে গেলো সবার সর্দার।  এতে সবাই বেশ খুশি। 

কাব্য বাজার করে বাসার সামনে আসতে দেখলো বাসার সামনে ভিড় জমে আছে।  কাব্য বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে ভিড় ঠেলে সামনে যেতে কাব্যের হাত থেকে বাজারের ব্যাগটা পড়ে গেলো।  চাদরে ঢাকা আশরাফ মিয়া মুখটা খোলা শুধু ।  পাশে বসে করিমুন বেগম কান্না করছে।  আগর বাতি জ্বলছে।  কাব্য নিজেকে সামলাতে না পেরে আশরাফ মিয়ার মুখ ধরে হাউ মাউ করে কান্না করতে লাগলো।  করিমুন বেগম বললো
- বাজান রে তোর বাবা আর চিকিৎসা করাতে হবে না৷  আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে।  চিকিৎসা করানোর আগে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।  ( করিমুন) 

কাব্য কান্না করছে আর বলছে
- বাবা চোখ খুলো।  আমি তোমার চিকিৎসা করাবো।  এভাবে যেতে পারো না আমাদের ছেড়ে।  আমি এখন কর্ম করি।  টাকা গুছিয়ে তোমার চিকিৎসা করাবো।  বাবা চোখ খুলো।  তোমাকে ছাড়া আমরা থাকবো কিভাবে।  আমি পারলাম না তোমার চিকিৎসা করাতে।  তোমাকে কষ্ট পেয়ে এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করতে হলো।  আমি নিজেকে কিভাবে ক্ষমা করবো।  ( কাব্য) 

অনেকে অনেক ভাবে বোঝাতে লাগলো।  শান্তনা দিতে লাগলো।  করিম চাচা শুনে চলে আসলো।  কাব্যকে ধরে বোঝাতে লাগলো।  আদি মিয়া আশরাফ মিয়া কে দেখে 
- এই কে কোথায় আছিস আমার ভাইয়ের দাফনের ব্যবস্থা কর।  আমার ভাই চলে গেলো এভাবে।  ( আদি) 

হ্যাপি করিমুন বেগমের পাশে বসে কান্না করতে লাগলো।  হাজেরা বেগম আসে নি দেখতে। 

কাব্য নিজের মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পাচ্ছে না।  আশরাফ মিয়াকে গোসলের জন্য নেওয়া হলো। গোসল করানো শেষ করে কাফনের কাপড় পড়ানো হলো। মাগরিবের সময় জানাযার জন্য নেওয়া হলো মসজিদে।  জানাযা শেষে আশরাফ মিয়াকে দাফন করে যে যার মতো করে চলে গেলো।  কাব্য কবরের সামনে দাঁড়িয়ে কান্না করছে।  করিম চাচা কাব্যকে নিয়ে বাসায় আসলো।  করিম চাচা বললো
- আরে বেটা তুই যদি এভাবে ভেঙ্গে পড়িস তোর মা কে দেখবে কে?  তোর মা কিভাবে ভালো থাকবে তাই নিয়ে ভাব এখন।  তুই ভেঙ্গে পড়লে তোর মা আরো ভেঙ্গে পড়বে।  ( করিম) 

কাব্য করিম চাচাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।  করিম চাচা কাব্যকে বোঝাতে লাগলো। 

ঘরের দুয়ারে বসে দরজার সাথে মাথা ঠেকিয়ে দিয়ে করিমুন বেগম মনমরা করে বসে আছে। চোখ বেয়ে পানি ঝড়তে লাগলো।  হ্যাপি করিমুন বেগমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে
- ছোট মা এভাবে ভেঙ্গে পড়ো না।  তুমি এমনটা করলে ভাইয়ার কি হবে।  ভাইয়াকে কে দেখবে?  ( হ্যাপি) 
- আমার সব শেষ হয়ে গেলো রে মা।  ( করিমুন) 
- ভাইয়া তো আছে।  কিছুই শেষ হয় নি।   ( হ্যাপি) 

হ্যাপি করিমুন বেগমকে শান্তনা দিতে লাগলো। 

দেখতে দেখতে ৩ দিন কেটে গেলো।  কাব্য কিছুটা স্বাভাবিক হলো।  করিম চাচা থেকে দোয়ার সব ব্যবস্থা করে দিলো। 

এক ভিলিয়ান পর্ব ২



পরের দিন
রাত ৪ টায়
করিম চাচা কাজের জন্য কাব্যকে ডেকে নিয়ে গেলো।  করিম চাচার সাথে মন খারাপ করে হাঁটছে।  করিম চাচা কাব্যকে নিয়ে একটা চায়ের দোকানে বসলো।  কাব্য বললো
- চাচা কাজে দেরি হয়ে যাবে না।  ( কাব্য) 
- তোকে আর কাজে যেতে হবে না। তাই চায়ের দোকানে এসে বসলাম। ( করিম)

কাব্য অবাক হয়ে
- কেন চাচা? আমি কি কোনো ভূল করেছি।  আমি কাজে না গেলে আমার পেট চলবে না।  কি খাবো আমি।  মা রয়েছে ঘরে।  ( কাব্য) 
- আরে আমার পুরো কথাটা তো শোন।  তারপর কথা বল।  ( করিম) 
- কি চাচা?  ( কাব্য)
- তুই পড়াশোনায় ভালো।  ভালো রেজাল্ট তোর৷ তোকে আর এই গ্রামে থেকে কামলার কাম করতে হবে না।  নানান মানুষ নানান কথা বলে আমার শুনতে ভালো লাগে না।  ( করিম) 
- তাহলে আমি কি করবো?  ( কাব্য) 
- তোকে আমি শহরে পাঠাবো।  তুই শহরে কাজ করবি।  তখন আর কেউ দেখতে যাবে না তুই কি কাজ করিস।  ( করিম) 
- শহরের কাউকে আমি চিনি না।  কে কাজ দিবে আমাকে।  ( কাব্য) 

করিম মিয়া কাব্যের দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে
- এখানে ঠিকানা আছে তুই এই ঠিকানায় চলে যাবি।  বাকীটা ওরা তোকে বুঝিয়ে দিবে।  সকাল ৭ টায় তোর বাস ।  ( করিম)
- মা কে রেখে আমি কোথা ও যাবো না চাচা।  ( কাব্য) 
- আরে রেখে যাবি কেন?  ওখানে চাকির করে ৪ মাস পর তোর মা কে নিয়ে যাবি।  আমরা  আছি তো।  তোর মা কে দেখে রাখবো কোনো অসুবিধা হবে না।  ( করিম) 
কাব্য উঠে দাঁড়িয়ে
- না চাচা আমি পারবো না।  আমি এখানেই কাজ করবো।  কোথা ও যাবো না।  ( কাব্য) 

করিম চাচা কাব্যের কাঁধে হাত রেখে
- বোঝার চেষ্টার কর বাপ।  একটা কথা সব সময় মনে রাখবি সাফল্য আনতে হলে কিছু জিনিস ত্যাগ করতে হয়।  আর তুই পারবি সাফল্য আনতে।  তোর এই সাফল্য দেখে দেখবি গ্রামের ছেলেরা আর গ্রামে পড়ে থাকবে না।  সফলতার পিছু ছুটবে।  ( করিম) 

করিম চাচা কাব্যকে বুঝিয়ে ফেললো।  কাব্য যেতে রাজি হলো।   করিম চাচা হাসি মুখে
- তাহলে বাসায় যেয়ে জামা কাপড় গুছিয়ে বাস স্টান্ডে চলে আয়।  ( করিম) 
কাব্য মাথা নাড়িয়ে  বাসায় চলে আসলো।  বাসায় এসে করিমুন বেগম কে সব কিছু বললো। করিমুন বেগম সবটা শুনে কাব্যকে বারণ করলো না।  কাব্যকে উৎসাহ দিয়ে বললো
- তোর দেখাদেখি বাকিরা ও গ্রাম থেকে শহরে কাজের জন্য যাবে।  কেউ আর অলসে কাটাবে না।  আমি চাই তুই ভালো কিছু করবি।  ( করিমুন)
- তোমার একা থাকতে কষ্ট হবে না তো।  ( কাব্য) 
- দূর পাগল ছেলে কষ্ট হবে কেন?  তুই ভালো কিছু করলে আমার শান্তি লাগবে।  ( করিমুন) 

কাব্য করিমুন বেগমকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো।  করিমুন বেগম নিজেকে শক্ত রেখে বললো
- আর পাগল ছেলে এভাবে ভেঙ্গে পড়লে হবে।  পরে তো আমার টেনশন হবে।  ( করিমুন) 

কাব্য করিমুন বেগম কে ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছে
- তোমার খেয়াল রেখো।  ( কাব্য)
- হ্যা রাখবো।  হ্যাপি তো আছে। ও দেখবে আমাকে।  ( করিমুন) 
করিমুন বেগম কাব্যের ব্যাগ গুছিয়ে দিলো।  ভোর ৬ টায় কাব্য করিমুন বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। 

৬ টা ৩০ এ  কাব্য বাস স্টান্ডে পৌঁছে গেলো।  করিম চাচা বসা ছিলো বাস স্টান্ডে।  কাব্যকে দেখে বললো
- এসে গেছিস।  শোন আমি সব কিছু বলে রাখছি।  তুই গেলেই হবে।  আমি সুপার ভাইজারকে বলছি সে তোকে নামিয়ে দিবে।  ( করিম) 

কাব্য মাথা নাড়ালো।  করিম চাচা কাব্যকে বাসে তুলে দিলো।  কাব্য বললো
- চাচা মা কে দেখে রেখেন।  ( কাব্য) 
- তুই চিন্তা করিস না।  তোর মা ভালো থাকবে।  যেয়ে যোগাযোগ করিস।  ( করিম) 
- ঠিক আছে।  ( কাব্য) 

৭ টা বাজতেই বাস ছেড়ে দিলো।  বাস চোখের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত করিম চাচা দাঁড়িয়ে ছিলো।  বাস চোখের আড়াল হতেই করিম চাচা চলে গেলো।  কাব্য বাসের ভেতর বসে ভাবতে লাগলো, শহরের মানুষগুলো কেমন হবে।  ভালো হবে না খারাপ হবে।   গন্তব্য নতুন।  জানি না কপালে কি আছে।  কাব্য ভাবতে ভাবতে বাসের ভেতরই ঘুমিয়ে পড়লো। 


সকাল ১০ টা
হ্যাপি স্কুলে যাওয়ার আগে  কাব্যদের বাসায় আসলো করিমুন বেগমকে দেখে যাওয়ার জন্য।  হ্যাপি বাসায় আসতে দেখলো করিমুন বেগম  মন খারাপ করে দুয়ারের সামনে বসে আছে।  হ্যাপি বললো
- ছোট মা কি হয়েছে।  এভাবে বসে আছো কেন?  ভাইয়া কই।  কাজে যায় নি।  ( হ্যাপি) 
- তোর ভাইয়া শহরে চলে গেছে।  ( করিমুন)
হ্যাপি অবাক হয়ে
- শহরে চলে গেছে মানে।  কখন গেছে।  আমাকে তো বলো নাই।  ( হ্যাপি) 
- শহরে নতুন চাকরি করতে।  হঠাৎ করে।  ভোরে চলে গেছে।  ( করিমুন)
- এই জন্য তুমি মন খারাপ করে আছো।  ( হ্যাপি) 
- না ঠিক আছি।  তুই স্কুলে যাবি না।  ( করিমুন)
- হুম যাবো।  তোমাকে দেখতে আসলাম।  এসে  শুনি এই কথা। ভাইয়া আসুক তারপর বোঝাবো আমাকে না বলে যাওয়া।  তুমি চিন্তা করো না।  তোমার এই মেয়ে কিন্তু বাসায় আছে বুঝছো।  ( হ্যাপি) 
- জানি তো।  ( করিমুন বেগম) 

হ্যাপি করিমুন বেগমকে হাসিয়ে স্কুলে চলে গেলো।

**
বিকাল ৫ টা
সুপার ভাইজার কাব্যকে বাস থেকে নামিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট দেখিয়ে দিয়ে  চলে গেলো।  কাব্য রেস্টুরেন্টে র সামনে দাঁড়িয়ে সিকিউরিটি গার্ডকে কাগজ দিলো।  কাগজ দেখে দরজা খুলে দিলো ভেতরে যাওয়ার জন্য।  কাব্য ভেতরে কাউন্টারে সামনে দাঁড়ালো ।   লাবন্য কাব্যকে দেখে বললো
- বলুন স্যার আপনার কি লাগবে?  ( লাবন্য) 

লাবন্যর কথা শুনে কাব্য কিছু বলতে পারলো না।  কাব্য কাগজটা লাবন্য কে দিলো।  লাবন্য কাগজ টা পড়ে কাব্যের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো।  লাবন্য ফাইজাকে ডাক দিলো।  ফাইজা এসেই
- বলুন ম্যাম। ( ফাইজা) 
- স্যার সকালে ওনার কথা বলছিলো।  তুমি নিয়ে যেয়ে ওকে ওর কাজটা বুঝিয়ে দাও।  ( লাবন্য) 
- ঠিক আছে।   আপনি আসুন।  ( ফাইজা) 
- ওর সাথে যান।  ও আপনাকে সব দেখিয়ে দিবে।  ( লাবন্য) 

কাব্য ফাইজার পিছু গেলো।   লাবন্য এই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার।  সবকিছু দেখভাল লাবন্যই করে। 

ফাইজা কাব্যকে ভেতরে নিয়ে গেলো।  ভেতরো আরো অনেকে কাজ করতে  ব্যস্ত।  ফাইজা বললো
- আমাদের সবার মাঝে নতুন এক ফকিন্নি যুক্ত হয়েছে কাজ করার জন্য।  গ্রাম থেকে এসেছে রেস্টুরেন্টের থালা বাসন বাজতে।  পোশাকের কি ছিড়ি।  হাহাহাহা।  ( ফাইজা) 

ফাইজার কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো।  কাব্য মাথা নিচু করে নিলো।  ফাইজা বললো
- দাঁড়িয়ে আছিস কেন?  তোর টোপলা রেখে যা ওখানে।  প্লেট গুলো ধুতে বস।  ( ফাইজা) 

কাব্য ফাইজার কথা মতো ব্যাগ রেখে প্লেট এর ওখানে চলে গেলো।  ফাইজা বললো
- এই তোর না কি?  ( ফাইজা) 
- কাব্য।  ( কাব্য) 
- কাজ করতে পারবি তো।  যদি না পারিস তোরে ঘাড় ডাক্কা দিয়ে বের করে দিবো৷   এই ওকে একটু দেখিয়ে দে কিভাবে বাসন ধুতে হয়।  ( ফাইজা)

কাব্য ফাইজার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবলো,  বাহিরে কত সুন্দর ব্যবহার আর ভেতর এনে এতো বাজে ব্যবহার৷

ফাইজার কথা মতো একজন কাব্য দেখিয়ে দিলো।  কাব্য দেখে নিলো।  তারপর কাব্য কাজ করতে লাগলো।  তখন লাবন্য ভেতরে এসে
- কি রে ফাইজা তুই কাজ না করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?  ( লাবন্য) 
ফাইজা লাবন্যকে বললো
- করতাছি তো।  তুই কিন্তু আমাকে অপমান করবি না এই নতুন ক্ষ্যাতের সামনে। ( ফাইজা) 
- যাবি নাকি বলবো।  ( লাবন্য)
- যাচ্ছি।  ( ফাইজা) 

ফাইজা বাহির হয়ে গেলো।  লাবন্য কাব্যকে ডাক দিলো।  কাব্য উঠে লাবন্যর সামনে দাঁড়ালো ।  লাবন্য বললো
- তোমার নাম কি?  ( লাবন্য) 
- কাব্য।  ( কাব্য)
- আমি লাবন্য।  এই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার।  এসো সবার সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দি।  ( লাবন্য) 

লাবন্য কাব্যকে নিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।  পরিচয় করানো শেষে
- আমরা এখানে সবাই বন্ধু সূলভ আচরন করি তুমি কিছু মনে করো না। ( লাবন্য) 

কাব্য মাথা নাড়ালো।  লাবন্য বললো
- কোনো রকম সুবিধা অসুবিধা র কথা আমাকে জানাবে। ( লাবন্য) 
- আচ্ছা।  ( কাব্য) 

লাবন্য চলে গেলো। 

কাব্য প্লেট ধুতে বসে গেলো।  প্লেট ধোঁয়া শেষ করে বসতে যাবে তখনি ফাইজা এসে বললো
- তোকে কি এখানে আরাম করার জন্য নিয়ে আসছি নাকি।  টেবিল পরিষ্কার করবে কে?  যা টেবিল পরিষ্কার কর।  ( ফাইজা) 

কাব্য উঠে গেলো।  ফাইজা টেবিল দেখিয়ে দিয়ে সব টেবিল পরিষ্কার করবি।  অপরিষ্কার জানো একটা ও না থাকে। 

**
রেস্টুরেন্টের ভেতর ঠাস ঠাস চড়ের শব্দে ভরে উঠলো।  লাবন্য অবাক হয়ে তাকিয়ে পড়লো.......

চলবে.......

   Ek villian

Part 2

Writer 

Meherab Kabbo  
Previous Post Next Post