এক ভিলিয়ান পর্ব ৩

 পর্ব ৩

ফাইজার কথা মতো কাব্য রেস্টুরেন্টের ভেতর টেবিলের কাছে এসে প্লেট নিতে লাগলো।  লাবন্য কাব্যের প্লেট নেওয়া দেখে ক্যাশ কাউন্টার থেকে কাব্যের সামনে এসে দাঁড়িয়ে
- কি করছো এ গুলো?  ( লাবন্য) 
- পরিষ্কার করছি।  ( কাব্য) 
- এভাবে না।   আমাকে দেখো।  আমি কি ভাবে করি।  ( লাবন্য) 

কাব্য লাবন্যর দিকে তাকালো।  লাবন্য টিস্যু নিয়ে প্লেট ওঠালো  তারপর টিস্যু দিয়ে টেবিল মুছলো।  নিচে পড়ে থাকা টিস্যু তুললো।  কাব্য অবাক হয়ে লাবন্যর দিকে তাকিয়ে আছে।  তখনি ফাইজা এসে
- ম্যাম আপনি এই কাজ করছেন কেন?  ( ফাইজা) 
- ওকে দেখিয়ে দিচ্ছি।  নতুন তো।  একবার শিখে গেলে আর সমস্যা হবে না।  ( লাবন্য) 
- এই জন্য বলি নতুন মানুষ নেওয়ার কি দরকার।  অভিজ্ঞতা মানুষ ছাড়া।  উটকো ঝামেলা।  ( ফাইজা) 

লাবন্য ফাইজার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে
- ভেতর যাও আসছি আমি।  ( লাবন্য)

ফাইজা আর কিছু বলার সুযোগ পেলো।  ফাইজা চলে গেলো।  কাব্য লাবন্যের এমন ব্যবহার দেখে।   অবাক।  লাবন্য কাব্যের দিকে তাকিয়ে
- তুমি এভাবে করতে পারবে তো।  ( লাবন্য) 
- হ্যা পারবো। ( কাব্য) 

লাবন্য চলে গেলো। কাব্য টেবিল পরিষ্কার করতে লাগলো।  লাবন্য ভেতরে যেয়ে ফাইজাকে বললো
- ফাইজা দিন দিন তোর ব্যবহারের উন্নতি হচ্ছে।  ব্যবহার ঠিক করে নে না হলে তোকে এই রেস্টুরেন্টে রাখবো না।  ( লাবন্য) 
- আমি আবার কি করলাম?  তুই ঐ গ্রামের ক্ষ্যাত ছেলেটার জন্য আমাকে এমন কথা বলতে পারলি।  ( ফাইজা) 
- কর্মের ক্ষেত্রে আমরা সবাই সমান।  কে ক্ষ্যাত আর ক্ষ্যাত না এটা দেখার বিষয় না।  একজন না পারলে তাকে আমরা সাহায্য করবো সেখানে সাহায্য না কর কটু কথা বলে তাকে কষ্ট দেওয়া চলবে না।  আমি কেমন মানুষ তুই ভালো করেই জানিস।  তোকে আমি সাবধান করে গেলাম।  ( লাবন্য) 

লাবন্য ফাইজাকে বকে চলে গেলো।  ফাইজা মনে মনে বলছে, 
ক্ষ্যাত এই রেস্টুরেন্টে কিভাবে কাজ করে তা  আমি দেখে নিবো। 

কাব্য টেবিল পরিষ্কার করে প্লেট নিয়ে এসে ধুতে লাগলো।  ফাইজা রাগি ভাবে কাব্যের দিকে তাকিয়ে
- তুই লাবন্য কি বলছিস?  ( ফাইজা) 
কাব্য ফাইজার দিকে তাকালো।  ফাইজা রাগে
- তুই কি বোমা।   শোন এখানে যদি কাজ করতে চাস তাহলে আমার কথা মতো চলবি৷  না হলে ঘাড় ডাক্কা দিয়ে বের করে দিবো।  ( ফাইজা) 

কাব্য মাথা নাড়ালো।  ফাইজা বললো
- এবারের মতো তোকে মাফ করে দিলাম।  পরের বার আর মাফ করবো না।  ( ফাইজা) 

ফাইজা চলে গেলো।  কাব্য মনে মনে ভাবছে,  এক এক জনের এক এক রকম ব্যবহার।  শহরের মানুষ স্মার্ট।  করিম চাচা বলেছে তাল মিলিয়ে চলতে।  না হলে শহরে টিকা মুশকিল হয়ে যাবে। 

রাত ১০ টা
লাবন্য কিচেন রুমে এসে কাব্যকে ডাকলো।  কাব্য লাবন্যের সামনে দাড়ালো।  লাবন্য বললো
- এখন আমাদের রেস্টুরেন্ট বন্ধ হবে। তুমি ভেতর টা ক্লিন করে পরিষ্কার করে ফেলো।  আর কোনো কাস্টমার আসবে না।  ঠিক আছে।  ( লাবন্য) 

কাব্য মাথা নাড়িয়ে  চলে গেলো। লাবন্য সবার কাছে জিঙ্গেস করলো
- সবকিছু করা শেষ হয়ে গেছে।  ( লাবন্য) 

লাবন্যের কথায় সবাই শায় দিলো।  লাবন্য ভেতর টা দেখে ক্যাশ কাউন্টারে চলে আসলো।  এসে ক্যাশ থেকে টাকা গুছিয়ে গুনতে লাগলো।  মাঝে মাঝে কাব্যের দিকে দেখছে কিভাবে কাজ করছে।  লাবন্য টাকা গুলো ক্যাশে রেখে কাব্যের সামনে যেয়ে দাঁড়িয়ে
- তোমাকে আমি এভাবে পরিষ্কার করতে বলছি।  আগে পড়ে কখনো ফ্লোর পরিষ্কার করো নি। ( লাবন্য) 

লাবন্যর কথা শুনে কাব্য ঘাবড়ে গেলো।  কাব্য মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।  লাবন্য ধমক দিয়ে
- কথা বলো না কেন?  বোমার মতো রইছো কেন?  ( লাবন্য) 
কাব্য ভয়তে মাথা নিচু করে আছে কোনো কিছু বলছে না।  লাবন্য কাব্যের মুখের দিকে তাকিয়ে পিছনের দিকে ফিরে ফাইজাকে ডাকলো।  ফাইজা এসেই
- কি হয়েছে এভাবে ডাকছিস কেন?  ( ফাইজা) 
- ক্লিন করার ঝাড়ু টা নিয়ে আয়।  ( লাবন্য) 
- কেন ও আনে নি?  (ফাইজা) 
- ও আনলে আর তোকে ডাকতাম না। ( লাবন্য)
- বলছি তোকে এসব লোক দিয়ে রেস্টুরেন্টের কাজ হবে না।  বাদ দিয়ে দে।  ( ফাইজা) 

লাবন্য ফাইজাকে চোখ গরম দিলো।  ফাইজা আর কিছু না বলে চলে গেলো। 

কাব্য আড় চোখে দুজনকে দেখছে৷  ফাইজা চলে যেতে লাবন্য বললো
- আমি জীবনে তোমার মতো বলদ দেখি নি৷  ( লাবন্য)

কাব্য মাথা উঁচু করে লাবন্যর দিকে তাকালো।  ফাইজা ফ্লোর ক্লিন করা ঝাড়ু এনে দিলো।  লাবন্য ফাইজাকে যেতে বললো। ফাইজা চলে গেলো। লাবন্য কাব্যকে দেখিয়ে দিলো পরিষ্কার করা।  দেখিয়ে দিয়ে লাবন্য বললো
- এখন পারবে তো।  ( লাবন্য) 

কাব্য মাথা নাড়ালো।  লাবন্য চলে গেলো।  কাব্য কাজ করতে লাগলো।  লাবন্য ক্যাশে এসে টাকা গুনে আজমল চৌধুরী কে কল করলো।  কল ধরতেই লাবন্য টাকার এ্যামাউন্ট জানিয়ে বললো
- টাকা কি ক্যাশে রেখে যাবো।  ( লাবন্য) 
- না।  আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি ড্রাইভাবের কাছে দিয়ে দাও।  আগামিকাল কি লাগবে লিস্ট করেছো।  ( আজমল চৌধুরী) 
- জ্বি স্যার।  ( লাবন্য) 
- ঠিক আছে।  ড্রাইবারের কাছে টাকা সহ লিস্ট দিয়ে দিয়ো৷  ( আজমল চৌধুরী ) 
- আচ্ছা স্যার।  ( লাবন্য) 

লাবন্য কল টা কেটে দিলো।  কাব্য ভেতর টা পরিষ্কার করে কিচেনে এসে বললো
- এইটা রাখবো কই। ( কাব্য) 
- আমার মাথার উপর রাখ।  কাজ পারিস না আসিছ কেন কাজ করতে।  ( ফাইজা) 

কাব্য মাথা নিচু করে নিলো।  ফাইজা কাব্যকে নানান কথা বলে অপমান করতে লাগলো। কাব্যের মুখটা কালো হয়ে গেলো।   যখনি লাবন্য কে দেখলো।  ফাইজা উঠে কাব্যের হাত থেকে জিনিস টা নিয়ে
- এইটা এখানে  থাকে।  এখান থেকে নিয়ে কাজ করে আবার জায়গার টা জায়গা রাখবা বুঝছো। ( ফাইজা) 

লাবন্য ভেতরে ঢুকে বললো
- তাহলে আজকের মতো কাজ এখানে এই পর্যন্ত।  আগামিকাল সকালে সময় মতো সবাই চলে আসবা।  ( লাবন্য) 

এক এক করে সবাই চলে গেলো।  কাব্য দাঁড়িয়ে রইলো।  লাবন্য বললো
- কিছু বলবা তুমি।  ( লাবন্য) 

কাব্য মাথা নাড়ালো।  লাবন্য বললো
- মন খারাপ করো না।  নতুন অবস্থায় কাজ করতে এসে আমরা অনেকের অনেক কটু কথা শুনেছি।  খারাপ ব্যবহার ও করছে।  আস্তে আস্তে সবকিছু শিখে গেছি। তুমি ও শিখে যাবে৷ আর এভাবে চুপচাপ থাকবে না।  কিছু বলার প্রয়োজন হলে আমাকে বইলো।  ( লাবন্য) 
- আ আ আপনার ফোন হবে। ( কাব্য) 
- কেন কি করবা?  ( লাবন্য) 
- বাসায় ফোন দিতাম । এসে তো জানাই নি।  ( কাব্য) 
- ওহ আমি তো ভূলেই গেছিলাম।  তোমার ফোন নেই। ( লাবন্য) 
- না।  ( কাব্য) 

লাবন্য ফোনটা বের করলো।  কাব্য কাগজে লেখা নাম্বার টা লাবন্য কে দিলো।  লাবন্য নাম্বার উঠিয়ে কল করে কাব্যর কাছে ফোনটা দিলো।  কাব্য সাবধানতার সাথে ফোনটা ধরে কানে ধরলো।  করিম চাচা ফোন ধরতে কাব্য বললো
- চাচা আমি কাব্য।  মায়ের খোঁজ নিয়েছেন৷  মা কেমন আছে। ( কাব্য) 
- তুুই পৌঁছে গেছিস।  হ ভালো আছে।  বাজার করে দিয়েছি।  চিন্তা করিস না।  ঠিক মতো কাজে মন দিস। ( করিম চাচা) 
- আইচ্ছা চাচা। মা কে জানিয়ে দিয়েন  ( কাব্য) 

কাব্য লাবন্যের দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে
- ম্যাডাম কেটে দেন।  ( কাব্য) 
লাবন্য ফোনটা নিয়ে মুচকি হেসে কল কেটে দিলো।  কাব্য বললো
- ম্যাডাম আপনার ফোনটা অনেক সুন্দর।  ( কাব্য)
- কেন এর আগে ফোন দেখো নি। ( লাবন্য) 
- দেখেছি বন্ধু দের হাতে।  কখনো ধরে দেখতে পারিনি।  আজ ফাস্ট ধরলাম।  ( কাব্য)

লাবন্য হাসলো।  লাবন্য বললো
- কাল ৯ টার ভেতর চলে এসো।  ঠিক আছে। ( লাবন্য) 
- আচ্ছা।  ( কাব্য) 

কাব্য ব্যাগটা নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলো।  লাবন্য  সবকিছু চেক দিয়ে ক্লোজ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেলো। কাব্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাবছে,  এখন কোথায় যাবো।  থাকবো কই।  কিছুই তো চিনি না।
কাব্য রাস্তার ওপার তাকাতে দেখলো কয়েকজন শুয়ে আছে।  কাব্য রাস্তা পার হয়ে ওপারে যেয়ে শোয়া লোকদের পাশে যেয়ে দাড়ালো।  সবাইকে দেখতে লাগলো।  কাব্য আর কোনো কিছু না ভেবে ওদের থেকে দূরত্ব রেখে রাস্তার পাশে শুয়ে পড়লো। 

রাত ৩ টা
গাড়ির হরেনের শব্দে কাব্যের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।  কাব্য সামনের দিকে তাকাতে ভয়তে কাঁপতে লাগলো।  কয়েকজন মিলে একটা লোকরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করছে।  গাড়ির হরেনের আওয়াজে লোকটার আত্ম নাদ শোনা যায় না।  লোকটা কে কুপিয়ে রাস্তার উপর রেখে চলে গেলো।  কাব্য উঠে লোকটার কাছে যেতে যাবে পেছন থেকে একজন বললো
- যাস না।  যাস না। 
কাব্য লোকটার কথা শুনে পিছনে তাকিয়ে
- কেন?  গেলে কি হবে?  ( কাব্য)
- মরণ হবে মরণ।  এই শহর অভিশপ্ত।  রাত হলেই অন্ধকার নেমে আসে।  অহরহ খারাপ কাজ চলে।  কেউ এসব দেখে না।  তুই কি নতুন। শুয়ে থাক চুপচাপ।  ও মরলে মরুক।  যাস না ( লোকটা) 

কাব্য লোকটার কথা কানে না নিয়ে কুপিয়ে জখম করা লোকটার কাছে গেলো।  তখনি একটা রিকশা আসলো।  কাব্য রিকশা থামালো।  রিকশা ওয়ালা রাজি হলো না যেতে।  কাব্য অনেক কষ্ট করে রিকশাওয়ালাকে রাজি করিয়ে লোকটাকে রিকশায় তুলে হাসপাতালে নিয়ে গেলো।  পিছন থেকে লোকটা বলতে লাগলো
- তুই মরবি।  তুই এই শহর সম্পর্কে কিছু জানিস না।  ( লোকটা) 

কাব্য লোকটাকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে গেলো।  লোকটারে স্ট্রে চারে শুয়ে দেওয়া হলো। ডাক্তার বললো পুলিশ কেস।  পুলিশের অনুমতি ছাড়া তারা চিকিৎসা করতে পারবে না।  কাব্য এসবের কিছু বুঝে না।  কাব্য ডাক্তারকে অনুনয় করে বললো
- আমি গ্রাম থেকে এসেছি শহরে নতুন। লোকটারে পড়ে থাকতে দেখে নিয়ে এসেছি।  আপনারা কিছু করেন।  লোকটা মারা যাবে।  ( কাব্য) 
ডাক্তার রাগান্বিত স্বরে বললো,  গ্রাম থেকে আসছিস তো এই উটকো ঝামেলা কেন  নিয়ে আসছিস।  বেশি মানবতা দেখাস।  যা এখান থেকে।

কাব্য ডাক্তারের কথা শুনে ডাক্তারে পা জরিয়ে ধরে
- স্যার চোখের সামনে লোকটাকে মরে যেতে দেখতে পারবো না।  আপনি চাইলে সব পারবেন। উনি যদি আপনার কেউ হতো আপনি কি এভানে পারতেন ফেলে রাখতে।  ( কাব্য)

ডাক্তার আর কিছু বললো না।  কাব্যকে তুললো।  লোকটাকে ওটিতে নিয়ে গেলো।। কাব্য হাসপাতাল থেকে সেই জায়গায় আসতে ভোর হয়ে গেলো।  সবে মাত্র ভোরের আলো ফুটছে।  কিছু  ট্যাক্সি রিকশা চলাচল করছে।  কাব্য নিজের জায়গায় এসে ব্যাগটা নিবে তখন পিছে ডাকা সেই লোকটা কাব্যের হাত ধরে
- তোর জামায় রক্ত লেগে আছে।  কেউ দেখলে তোকে পুলিশে ধরিয়ে দিবে। একবার পুলিশে ধরলে তুই তো আর বেরোতে পারবি না।  বদলিয়ে ফেল এখন।  ( মিরান)

কাব্য মিরানের কথা মতো জামা খুলে অন্য একটা জামা পড়ে নিলো।  রক্ত মাখা জামা মিরান নিজের কাছে রেখে দিয়ে
- এটাকে আমি ফেলে দিবো৷  রাতে যা হয়েছে তা যদি কেউ জিঙ্গেস করে তাহলে বলবি তুই জানিস না।  ( মিরান)
কাব্য কৌতুহল নিয়ে  
- আপনি কে? ( কাব্য) 
- আমি মিরান।  এখানেই থাকি।  ভিক্ষা করে খায়।  তোরে দেখে সহজ সরল মনে হয়।  তুই মানুষের উপকার করিস তোর সাহস আছে।  ( মিরান) 

কাব্য মাথা নিচু করে
- কেউ বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য করতে হয়।  মা বাবা সব সময় শিখিয়েছেন বিপদের সময় কাউকে ছেড়ে আসতে হয় না।  তার উপকার করতে হয়।  ( কাব্য) 

মিরান উঠে দাঁড়িয়ে কাব্যের হাত ধরে নিয়ে চায়ের দোকানে গেলো।  একটা বন রুটি আর দুধ চা কাব্যকে দিলো।  কাব্য অবাক হয়ে মিরানের দিকে চেয়ে আছে।  মিরান বললো
- খা। আর শোন এই শহরে চোখের সামনে যা ঘটতে দেখবি তা দেখে ও না দেখার ভান করবি।  তুই নতুন তাই জানিস না।  ( মিরান) 

কাব্য মিরানের কথা শুনে অবাক হতে লাগলো। 

সকাল ৮ টা ৩০
কাব্য রেস্টুরেন্টের সামনে এসে অপেক্ষা করতে লাগলো। ৯ টা বাজতে সবাই চলে আসলো।  কাব্য ভেতরে ঢুকে নিজের কাজ করতে লাগলো।  ফ্লোর ক্লিন পরিষ্কার করলো আবার ও।  ফাইজা কাব্যের পিছু লেগে থাকলো।  সুযোগ পেলে কাব্যকে অপমান করে। 

সকাল ১০ টা ৪০ এ লাবন্য রেস্টুরেন্টে এসে সব চেক করে ক্যাশ কাউন্টারে বসলো।  কাব্য কে ডাক দিলো।  কাব্য আসতে লাবন্য বললো
- ভেতর প্লেট পরিষ্কার হলে বসে থাকবা না৷  এখানে এসে দাড়াবা।  যে টেবিলটা খালি হবে সেই টেবিলটা যেয়ে পরিষ্কার করবে।  বুঝছো। ( লাবন্য) 
কাব্য মাথা নাড়ালো।  রেস্টুরেন্টে আজকে কাসৃটমারের চাপ বেশি।  কাব্য প্লেট নিয়ে যেয়ে ধুয়ে দিতে আজ একটু কষ্টই হচ্ছে।  কিছুক্ষণ পর পর ফাইজা এসে বলছে
- হাত চালিয়ে কাজ কর।  প্লেট ঠিক করে পরিষ্কার কর।  কত কাস্টমার বসে আছে এখনো তোর প্লেট ধোঁয়া হয় নি।  খাবার কি তো মাথার উপর দিবো।  ( ফাইজা) 
এক ভিলিয়ান পর্ব ৩



ফাইজা কাব্যকে নানা ভাবে অপমান করতে লাগলো।  কাব্য দু চোখের পানি ফেলে সব সহ্য করছে। 

রেস্টুরেন্টের কাজ শেষে রাতে কাব্য রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে রাস্তার ওপারে মিরানের পাশে শুয়ে পড়ে।  রাত ২ টাই একটা মেয়ের চিৎকারে কাব্যের ঘুম ভেঙ্গে যায়।  কাব্য চোখ খুলে দেখলো কয়েকটা ছেলে মিলে একটা মেয়েকে নিয়ে টানা হিচড়া করতে লাগলো। কাব্য উঠতে যাবে তখনি মিরান কাব্যকে টেনে ধরলো।  কাব্য উঠতে পারলো না।  মিরান বললো
- উঠিস না চুপচাপ শুয়ে থাক।  ওরা প্রভাবশালীর ছেলে ফেলে।  ওরা যা ইচ্ছে করতে পারে।  তুই গেলে তোকে মারবে৷  ওরা ভালো না।  ( মিরান) 
- তাই বলে একটা মেয়েকে এভাবে ওরা।  ( কাব্য) 
- এমন কতো মেয়ের জীবন নষ্ট করে ফেলছে।  কেউ কিছু বলতে পারে না ।  কেউ বললে তার আর রক্ষা নেই।  ঘুমিয়ে পড়।  ( মিরান) 
- পুলিশ প্রশাসন কিছু নেই।  ওদের কিছু বলে না।  ( কাব্য) 
- ওরা তো ওদের পা চাটা গোলাম।  কি আর বলবে। ( মিরান) 

একটা গাড়ি এসে থামতে মেয়েটাকে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেলো।  কাব্য উঠে বসলো।  ঘুম জেনো এক নিমিষে হারিয়ে গেলো।  মিরান উঠে বসে
- আমার বয়স হয়ে গেছে এসব দেখতে দেখতে।  অনেক অপকর্ম হয় এই শহরে। ( মিরান) 

মিরান এক এক করে কাব্যকে শহরের ঘটনা বলতে লাগলো।  কাব্য যতই শুনছে ততই শরীরের লোম খাড়া হয়ে উঠছে।  খুবই ভয়ংকর ঘটনা।  মিরানের কথা শুনতে শুনতে ভোর হয়ে গেলো।  চায়ের দোকানে যেয়ে রুটি আর চা খেলো দুজনে। 

সময় মতো রেস্টুরেন্টে গেলো কাব্য।  রাতে ঘুম হয়নি বলে ঝিমাচ্ছে কাব্য কাজ করতে।  এই সুযোগটা ফাইজা নিয়ে কাব্যকে কটু কথা বলতে লাগলো।  ফাইজার সাথে আরো তিন জন যোগ হয়েছে।  কাব্য কে কথা শোনাতে ২য় বার ভাবে না৷ কাব্য কেমন জেনো এদের গায়ের জ্বালা।  সহ্যই করতে পারে না। 

রাত হলেই কাব্যের সামনে একটা না একটা ঘটনা ঘটবে।  দু চোখ দিয়ে দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।  কোনো কিছু করার মতো সাহস ও নেই।  কেউ মেরে ফেলে রাখলে দেখার কেউ নেই।  মিরান কাব্যকে যে কথাগুলো বলছে তা শুনে কাব্যের রাত কাটে ভয়তে।  কখন জানি আবার ওদের উপর এসে হামলা চালায় ।  রাস্তায় শুয়ে থাকা ও বিপদ।  বাসা ভাড়া নেওয়ার মতো সামর্থ্য কাব্যের নেই।  টাকা নেই কাছে। 

এভাবে দেখতে দেখতে বেশ কিছুদিন কেটে গেলো।  কাব্য এখন কাজ শিখে গেছে।  ফাইজা দের কথা গায়ে শয়ে গেছে।  ওদের কথায় এখন আর কষ্ট লাগে না।  হাসি পায় কাব্যের।  কাব্য ঠিক মতো কাজ করছে দেখে কাব্য কে অন্যভাবে ফাসাবে কিভাবে সেই পরিকল্পনা করতে লাগলো।

কাব্য মাঝে মধ্যে এসে ক্যাশ কাউন্টারের পাশে বসতো।  লাবন্য কম্পিউটারে কাজ করতো কাব্য তা খেয়াল করতো।  লাবন্য কাব্যকে বললো
- কম্পিউটার চালাতে পারো।  ( লাবন্য) 
- না।  ( কাব্য) 
- শিখবে চালানো। ( লাবন্য) 

কাব্য মাথা নাড়ায়।  লাবন্য কাব্যকে কম্পিউটার সম্পর্কে বলতে লাগলো।  কাব্য র আগ্রহ টা জানো আরো বেড়ে গেলো। 

রাত ১০ টা ৩০

রেস্টুরেন্টে অবশিষ্ট কিছু খাবার রয়ে  গেলো।  ফাইজা লাবন্যকে বললো
- খাবার গুলো ডাস্টবিনে ফেলে দি।  ( ফাইজা) 
- তোদের সবার খাওয়া হয়ে গেছে।  ( লাবন্য) 
- হ্যা।  এগুলো রেখে আর কি করবো। ( ফাইজা) 
- বাসায় নিয়ে যা সবাই ভাগ করে।  ( লাবন্য) 

কেউ নিতে রাজি হলো না।  কাব্য চুপচাপ দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনতে লাগলো।  লাবন্য সবার কথা শুনে
- তাহলে আর কি করার ফেলে দিতে হবে ডাস্টবিনে।  ( লাবন্য) 
- আমরা যায়।  তুই ওকে দিয়ে ফেলাস।  আমরা সব গুছিয়ে ফেলছি।  ( ফাইজা) 
লাবন্য কিছু বলতে যাবে তখন আরো দুজন বলে উঠলো, আজ অনেক কাজের চাপ গেছে।  আর পারবো না। 

লাবন্য আর কিছু বললো না। সবাই চলে গেলো।  লাবন্য কাব্যকে বললো
- তুমি কি পারবে ফেলে দিতে নাকি চলে যাবে।  ( লাবন্য) 
- একটা কথা বলবো ।  ( কাব্য) 
- হ্যা বলো।  ( লাবন্য) 
- খাবার গুলো রাস্তার পাশের শুয়ে থাকা ক্ষুধার্ত মানুষগুলোকে দিলে হয় না।  ( কাব্য) 

কাব্যের কথা শুনে লাবন্য অবাক হয়ে
- আমার মাথায় তো এই কথা আসে নি।  খাবার গুলো না ফেলে ওদের দেওয়া উচিত ।  একদিন তো ক্ষুধা মিটাতে পারবে।  চলো।  ( লাবন্য) 

কাব্য খুশি হয়ে  খাবারগুলো  নিয়ে নিচে নেমে রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা লোকদের দিতে লাগলো৷ খাবার দেওয়া শেষে লাবন্য চলে গেলো। 

এভাবে দেখতে দেখতে বেশ কিছু দিন কেটে গেলো। 
একদিন

রেস্টুরেন্টের ভেতর ঠাস ঠাস চড়ের শব্দে ভরে উঠলো।  লাবন্য অবাক হয়ে তাকিয়ে পড়লো.......

চলবে.......

Ek Villian

Part 3

লেখা 
Meherab Kabbo  
Previous Post Next Post