ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া - পর্ব ০৬ | Valobasar Alto Chowa 06

বাবা আপনি বসুন নাস্তাটা করে নিন।

---হ্যাঁ।আদিরা এখনো উঠেনি ঘুম থেকে?

---মনে হয় এখনো উঠেনি ও।

 

আদিরা এসে সোয়াকে জরিয়ে ধরে সোয়ার গালের সাথে নিজের গাল লাগিয়ে বললো____

----আমি এসে গেছি মাই কিউটি ভাবি। 

---হ্যাঁ যাও বসো! 

আদিরা সোয়াকে ছেড়ে গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলো। বাবা আদিরাকে জিজ্ঞেস করলো___

---তোমার স্টাডি কেমন চলছে আদিরা?

---ভালোই বাবা!এক্সাম আছে সামনে একটা। 

---হুম ঠিক করে পড়াশোনা করো।

---জ্বি, বাবা!

 

---শুনো ভাবি, আজ তোমাকে নিয়ে আমাদের গার্ডেনে যাবো ঠিক আছে। আর আমাদের পুরো বাড়ির রুমগুলো ঘুরে ঘুরে দেখাবো আর দাদুর পুরনো জিনিস গুলো দেখাবো তোমায়।

----ঠিক আছে আগে খেয়ে নাও।

---ওকে!

 

----বাবা আপনারা খান আমি মাকে খাইয়ে আসছি!

---ঠিক আছে যাও!

 

সোয়া চলে গেলো মার কাছে নাস্তা নিয়ে। মার রুমে ডুকেই বললো,,

---আসতে পারি মা?

মা তখন জানালার পাশের চেয়ারটায় বসেছিলো। পিছনে না ফিরেই চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় বললো,,,,

---আমার রুমে আসতে তোর পারমিশন লাগে? আয় ভেতরে।

 

সোয়া ভিতরে আসলো মাকে বললো___

---শুনো রাগ করে থেকে নিজের শরীর খারাপ করো না তো। নাও নাস্তা করে নেও নিয়ে এসেছি তোমার জন্য।

---আমি খাবো না তুই নিয়ে যা!

--- তুমি খাবেনা মা?

---নাহ খিদে নাই।

---আমিও কিন্তু এখনো খাই নাই। তুমি না খেলে কিন্তু আমিও খাবো না এটা মনে রেখো।

 

----আহা জেদ ধরছিস কেনো আমার জন্য তুই কেনো শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দিবি কেন না খেয়ে।যা তুই খেয়ে নে!

---তুমি না খেলে আমিও খাবো না এটাই আমার শেষ কথা।

---আচ্ছা আচ্ছা আমি খাবো কিন্তু তোকেও আমার সাথে খেতে হবে।

---ওকে ওকে ঠিক আছে আমরা দুজন একই সাথে একই প্লেটে খেয়ে নেই।

 

সোয়া নিজের হাতে মাকে খাইয়ে দিচ্ছে। মা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সোয়ার দিকে।

চার দিনের পরিচয় এই মেয়ের সাথে অথচ মনে হচ্ছে যেনো কতো বছরের সম্পর্ক তার সাথে। বাড়ির মানুষগুলোকে নিজের কতো আপন করে নিয়েছে। আর ও নিজেও সবার মনে কতোটা যায়গা করে নিয়েছে। যদি সত্যি সোয়া এই বাড়ি ছেড়ে একদিন চলে যায় তাহলে কি করে থাকবে এই মানুষগুলো। আদির এই মায়া ভরা মুখটার দিকে তাকিয়ে একটুও মায়া হয় না। ওর মনে কি একটুও ভালোবাসা নেই, এই মেয়ের সাথে যে কেউ দুদিন থাকলে কতোটা ভালোবেসে ফেলবে তাকে।

 

অদ্ভুত একটা মায়া আছে সোয়ার মাঝে মনে তো হয় ওর মাঝে কোনো অলৌকিক ক্ষমতা আছে যা দ্বারা সে মানুষকে বশে আনতে পারে।মা বলে উঠলো,,,,

---একটা কথা রাখবি আমার তুই?

---কি বলো?

---তুই আমাদের ছেড়ে এই সংসারের সবাইকে ছেড়ে কোনোদিন কোথাও দূরে চলে যাবিনা।

 

সোয়া ভাবতে লাগলো একদিন তো তাকে এখান থেকে যেতেই হবে। সে আদি ডিবোর্স দেক বা না দেক ।

---কিরে বলনা যাবি না কখনো। 

---আমি যতদিন বাঁচবো এখানেই তো থাকবো, না হলে আর কোথায় থাকবো বলো। এখন এই বাড়ি ছাড়া যে আমার আর কোথাও যাওয়ার যায়গা নেই।

---সত্যি যাবি না। আর কোনোদিন ছেড়ে চলে গেয়েছিস তো তোকে একটা থাপ্পড় মেরে সবগুলো দাঁত ফেলে দিবো জানিস। ওই আদি তোকে ডিবোর্স দেক তাও তুই এই বাড়িতেই থাকবি। 

---আচ্ছা ঠিক আছে।

.

!!!

মাকে খাইয়ে সোয়া নিচে চলে গেল, তারপর সবগুলো প্লেট ধুয়েমুছে রেখে দিলো। এরপর দুপুরের জন্য রান্না করলো। আদিরা আসলো সোয়ার কাছে। আদিরা বললো___

 

---আহারে আমার ভাবিটা কাজ করতে করতে হতাশ হয়ে গেছে। চলো ভাবি একটু রেস্ট নিবে আর তোমায় তো বললাম আমি কি করবো।

---আর একটু তারপর যাচ্ছি।

---আচ্ছা দাও আমিও তোমায় হেল্প করি তাহলে তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।

 

---আরে না না আদিরা তোমায় এইসব করতে হবে না বুড়ি।

---ভাবি আমি করবো দাও তো! 

---আচ্ছা বাবা তাহলে তুমি এখানে বসে বসে এই ডিমের খোসা ছেড়ে দাও।

---ওকে।

দুজনে গল্প করতে করতে রান্নার কাজ সেরে নিলো। আদিরা সোয়াকে নিয়ে বাগানে গেলো বিশাল এক বাগান আর কতো রকমের ফুলগাছ। একেক শাড়িতে একেকটা গাছের ঝাক!বাগানের মালি ফুলগাছে পানি দিচ্ছিলো তখন সোয়া মালিকে উদ্দেশ্য করে বললো____

 

---আরে কাকু কেমন আছেন?

---এই তো মা ভালোই! তুমি?

---হ্যাঁ আমি ভালোই আছি। সেই বিয়ে বাড়িতে দেখেছিলাম আপনাকে আর দেখা হয়নি আর আজ এখানে দেখা ভালোই হলো।

---হুম, বাগানে ঘুরতে এসেছো না।

---হ্যাঁ আদিরার সাথে এসেছি। আপনি গাছে পানি দিচ্ছেন?

---হুম। 

---আমাকে একটু দিন না আমি গাছে পানি দেই?

---এই নেও।

সোয়া ফুলের গাছে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে পানি দিলো। আদিরা পাশে দাড়িয়ে ছিলো তখন সোয়া বলে উঠলো,,,,,

 

"অধীনে তোমাকে ছুঁতে সেপাশে,

আলোতে আলোচিতে রঙ্গে ওপাশে।"

 

---ভাবি কি সুন্দর তুমি বলে ফেললে প্রভাত বাক্য! অনেক সুন্দর হইছে জানো, আমি এতো সুন্দর করে বলতেই পারিনা।

---চেষ্টা করো একদিন ফেরে যাবে। উপন্যাস, কবিতার বই পড়ো তুমি?

---উপন্যাস পড়ি বাট কবিতা ওতোটা পড়ি না।

"আরন্যক "উপন্যাসটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।

---হুম আমিও পড়েছি খুব ভালো লেগেছে।

"পথের পাঁচালী "এটাও অনেক সুন্দর।

---আচ্ছা ওটা পড়বো না হয় পড়ে।এখন চলো? 

---হুম, চলো।

 

---ভাবি তোমাকে না আমার ফ্রেন্ডসরা দেখতে পুরো পাগল করে ফেলেছে আমায় জানো।

---একদিন বাসায় আসতে বলো।

---ওরা বাসায় আসবে না, এই ভাবি ভাবি চলোনা আমরা আজ রেস্টুরেন্টে যাই এক হিসেবে ওদের সাথে দেখা ও হয়ে যাবে!

---মা যদি কিছু বলে তখন?

---আমরা মার কাছে বলে যাবো কোনো সমস্যা নেই।

---আচ্ছা, তাহলে চলো যাই ঘুরে আসি আর তোমার ফ্রেন্ডসদের সাথে ও আমি দেখা সাক্ষাৎ করে ফ্রেন্ডস হয়ে আসি।

 

---হিঃহিঃ চলো।

.

!!!

দুজনে মার কাছে পারমিশন নিয়ে বেরিয়ে গেলো রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে।

 

তারা আদিকে বলতে লাগলো,,,, 

---এই তোমার বাবা এমন মেয়ে কোথায় পেয়েছি শুনি। অচেনা অজানা কোন কাজের মেয়ে একটা ধরে এনেছে।

---জাস্ট অসহ্য জানো তো ওই মেয়েটাকে দেখলে আমার লাগে। আমার পরিবারের সবাইকে ও বশ করে নিয়েছে। আজ সকালে বাসা থেকে ওর জন্য নাস্তা অবধি করতে পারিনি।

 

---একটা বার শুধু মেয়েটার সাথে আমার দেখা হোক তারপর দেখো আমি কি করি ওকে।

---কিছু করতে ও পারবে না ওই মেয়েকে তুমি। আজ সকালে আমার মা কি বলেছে আমায় জানো। বলেছে ওর সাথে আমার ডিবোর্স হয়ে গেলেও না ও ওই বাড়িতেই থাকবে।

---কুল বেবি কুল! এতো রেগে যাচ্ছো কেনো? আমি আছি না তোমাকে ওই মেয়ে ডিবোর্স যদি না দেয় আমি কিন্তু ওর থেকে ডিবোর্স পেপারে সাইন করিয়ে নিয়ে নিতে পারবো ওটা কিছু হবে না। ওই বাড়ি থেকে ওকে কিভাবে তাড়াতে হবে ওটাও আমি মেনেজ করে নিবো।

 

---দু চোখের বিষ আমার ওই মেয়েটা। কোথা থেকে উড়ে এসে ঝুরে বসেছে আমার গলায়।

---আচ্ছা এইসব থার্ড ক্লাস মেয়ের কথা বাদ দাও তো ওদের সামলানোর জন্য আমার ফ্রেন্ড আছে না। এখন কিছু অর্ডার দেও খাবো।

 

---ওকে দিচ্ছি! এই ওয়েটার এইদিকে আসুন?

---জ্বি স্যার বলুন?

---কি খাবে তুমি তারা অর্ডার দেও।

 

আদিরা বলতে লাগলো সোয়াকে,,,,

---জানো ভাবি এই রেস্টুরেন্ট টানা আমাদের সবার পছন্দের। যতবারই রেস্টুরেন্টে খেতে আসি বা এমনি কারো সাথে মিট করতে আসি এটাই আসি। মা -বাবা, ভাইয়া, আমার খুব পছন্দের রেস্টুরেন্ট। আর এখানের মেনেজার আঙ্কেল বাবার বন্ধু ও।

---খুব ভালো তো। চলো ভেতরে যাওয়া যাক!

---হ্যাঁ চলো!

---ও সেট। 

---কি হলো তোমার?

----আরে তোমার ভাই সকালে আজ ব্রেকফাস্ট করে যায়নি ওনার জন্য তো খাবার ও পাঠালাম না অফিসে।

---আরে চিন্তা করো না তো ভাইয়া খেয়ে নিবে।

ওই হারামী গুলা যে কই গেলো এখনো আসেনি বোধহয়।

---আরে এসে যাবে টেনশন নিয়ো না।

---আচ্ছা চলো ওরা আসতে আসতে আমরা দুজন বসে কপি খেতে খেতে গল্প করি।

 

---হুহ!

দুজন গল্প করতে করতে আদিরার ফ্রেন্ডসরা চলে আসে।খেয়া বললো,,,

 

---হাই জানু,

---হাই খেয়া, হাউ আর ইউ বাবু?

---আই এম ফাইন, ইউ?

---ফাইন সিট!

---ইয়াহ!

রোজা বলে উঠলো,,,

---ওয়াও হু ইজ সি?

---আমার কিউটি ভাবি তোরা না দেখতে চেয়েছিলি তাই নিয়ে এলাম।

---ভাবি ইউ লুকিং সো বিউটিফুল।

---থেন্কুউ!

---ভাবি আমি রোজা! এন্ড সি খেয়া মাই জানু।

---আম সোয়া।

 

সবাই কথা বলছে এমন সময় রেস্টুরেন্টের মেনেজার তাদের টেবিলের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো।আদিরাকে দেখে বললো____

---কেমন আছো, আদিরা মামুনি?

---জ্বি, আঙ্কেল ভালো, তুমি?

--হুম, ভালোই। নতুন তিনি কে তোমার বন্ধু?

--আঙ্কেল আপনি তো ভাইয়ার বিয়ের দিন দেশের বাইরে ছিলেন তাই আসতে পারেননি। আমার ভাবি ওনি।

 

----হোয়াট! তোমার ভাইয়ার বউ ও।

---এতো চমকে উঠার কি হলো আঙ্কেল। হ্যাঁ ভাইয়ার বউ আমার ভাবি।

---কিন্তু আদির ওয়াইফ তো ওর সাথে দোতলায় আছে।

---এইসব কি বলছেন আঙ্কেল। ভাইয়া তো অফিসে আর সোয়া ভাবিই ভাইয়ার ওয়াইফ।

---আদি একটু আগে তার ওয়াইফের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো। বিশ্বাস না হলে তুমি উপরে গিয়ে দেখতে পারো।

--ওকে, আমি এখনই যাচ্ছি।

 

সোয়ার কোনো আক্ষেপ নেই, কেননা সে জানে আদি তারাকেই তার ওয়াইফ বলে পরিচয় দিয়েছে। তাই সোয়া কোনো কথা বলেনি।

 

আদিরা দৌড়ে উপরে গেলো! গিয়ে যাহ দেখলো বাহ বেশ ভালো। নিজের বউকে রেখে অন্য মেয়েকে বউ বলে পরিচয় দেওয়া এটাই আদি।

ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া

হাফিজ মাহমুদ

পর্ব : ০৬

Previous Post Next Post