আদিরা আদির টেবিলের সামনে এসে বললো,,,,
---গুড জব ভাইয়া!
---তুই এখানে?
---আমি আসাতে কি তোমার কোনো প্রবলেম হয়েছে ভাইয়া। প্রবলেম হলে বলতে পারো আমি চলে যাবো।
---আরে না আমার কেনো প্রবলেম হতে যাবে!
---না তোমার প্রবলেম তো হতেই পারে, অন্য একটা মেয়ের সাথে এসেছো রেস্টুরেন্টে। তাকে নিজের বউ বলে পরিচয় দিয়েছো অথচ নিজের বউ ঘরে।
---আদিরা এখানেও সেই একই কথা।
---কেনো বললে কি তোমার গায়ে লাগে। নিজের ঘরে বউ থাকতে অন্য কোথাকার কোন মেয়ের সাথে রেস্টুরেন্টে এসে তাকে খাইয়ে দিচ্ছো। বাহ বেশ ভালো! চৌধুরী বাড়ির ছেলে আদি চৌধুরী না বললেই নয় আপনাকে ভাইয়া। ভালো তো আপনি থাকুন আমি চলি।
তারা বলে উঠলো,,,,
---আদিরা!
---লিসেন ডোন্ট টোক টু মি!
আদি বললো,,,
---আদিরা তোর ব্যবহার এমন কেনো হঠাৎ? তুই তো কোনদিন কারো সাথে এমন করিসনি।
---আদি থাক না ও বাচ্চা মেয়ে তো। কেমন আছো আদিরা ননদীনি?
---এই যে শুনেন আপু আমাকে আপনার ননদীনি বলতে আসবেন না ওকে। আমি অন্য কারো ননদ, আর আমাকে বাচ্চা ভাবতে আসবেন না।
---ওকে ওকে সরি!তুমি ওই কাজের লোকের ননদ আমার তো মনেই ছিলোনা।
---মাইন্ড ইউর লেন্গুয়েজ! কাজের লোক কাকে বলছেন হ্যাঁ কাকে বলছেন?
---কাকে জানো না তোমার বাবা যাকে জোর করে আদির গলায় ঝুলিয়েছে তাকে। শুনো তোমার ভাইয়ার সাথে না ওর কিছুদিন পর ডিবোর্স হয়ে যাবে তারপর আমি তোমার ভাইয়ার বউ হয়ে ওই বাড়িতে যাবো।
----ওহ রিয়েলি! তো জাননা আপনাকে ধরে রাখছে কে এখনি যান আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু, ওই বাড়িতে গেলে না আপনাকে আমার ভাবি নয় একটা কাজের লোকের মতো দিদি বলে ডাকবো। ভাবি হওয়ার যোগ্যতা আছে আপনার।
---আদিরা তুই কি এখানে ঝগড়া করতে এসেছিস ওই মেয়েকে নিয়ে।
---নো, মিস্টার আদি আমি ঝগড়া করবো কেনো।আপনাদের সাথে আমার ঝগড়া করতে বয়েই গেছে।
সোয়া তাৎখনিক চলে এলো। আদিরাকে বললো____
---আদিরা চুপ করো। আর ওনাদের সাথে এমন করে কথা বলছো কেনো?
---ও তাহলে আপনি সেই কাজের মেয়ে।যে বড়লোক ছেলে দেখেছে আর বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
---আমার ভাবিকে কাজের লোক বলবেন না। যদি কাজের বলতে হয় তো আপনি নিজেই একটা কাজের লোক একটা পুরুষের ওয়াইফ থাকা সত্ত্বেও তার সাথে চলাফেরা করছেন রেস্টুরেন্টে এসে বসে খাচ্ছেন। লজ্জা করেনা আপনার, আর লজ্জা করবেই বা কেনো আপনাদের কাজই তো এটা একশ ছেলের সাথে থাকা আর পুর্তি করা।
আদি রেগে গিয়ে বললো,,,,
---আদিরা একটা থাপ্পড় মারবো তোকে!
আদি আদিরাকে থাপ্পড় মারার জন্য হাতও তুলে ছিলো। আদিরা থাপ্পড় দিবে ভেবে গালে হাত দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো। এই প্রথম আদি আদিরাকে থাপ্পড় দেওয়ার জন্য হাত তুললো। আদিরার চোখগুলোতে পানি টলমল করছিলো। কোনো একটা মেয়ের জন্য আজ এই প্রথম তার নিজের ভাই গায়ে হাত তুলতে গেলো। ভাবতেই বুক ফেটে কান্না আসছে আদিরার।
---মারলেন না কেনো থাপ্পড় মারুন।অচেনা একটা মেয়ের জন্য তাকে দু কথা বলেছিলাম বলে নিজের বোনের গায়ে হাত তুলতে এলেন। বাহ বেশ ভালো, নিজের বউকে মুখ দিয়ে যা আসছে তাই বলছে তার কোনো প্রতিবাদ নেই। এখন আমি তাকে উচিত কথা বলছিলাম বলে আমাকেই ছিঃ আপনাকে, আপনাকে না আমার রক্তের সম্পর্কের ভাই বলতে ঘৃনা হচ্ছে। আপনার মতো ভাই আমার প্রয়োজন নেই, যান এই অচেনা মেয়েকে নিয়ে থাকুন। ভাইয়ের ভালোবাসারও দরকার নেই আমার, আমাকে না ভালোবাসার জন্য আমার মা-বাবা আর একটা বোনের মতো ভাবি আছে। আজ থেকে আপনাকে আমি আমার ভাই বলে পরিচয় দিবো না। পরিচয় সেদিনই দিবো যেদিন আপনি একজন আদর্শ মানুষ হবেন। আমার আমার এই ফুলের মতো সুন্দর ভাবিকে বউ হিসেবে পরিচয় দিবেন সেদিন। আসি আপনার এই অচেনা বউকে নিয়ে সুখে থাকুন ভালো থাকুন এটাই প্রত্যাশা।
আদিরা কান্না করতে করতে চলে গেলো সেখান থেকে পিছন পিছন সোয়াও চলে গেলো।আদির নিজের উপর চরম পরিমানে রাগ হচ্ছে নিজেকে মন চাইছে গালে কিছুক্ষণ থাপ্পড় দিতে। বোনের চোখে কোনোদিন পানি আসতে দেয়নি সবসময় হাসি-খুশি রেখেছে। আজ সেই বোনের চোখে পানি। কতো সুন্দর করে ডাকতো "ভাইয়া "শব্দটি। বোনটা কতো আবদার করতো তার কাছে, কতো কি চাইতো। সেই বোন আজ কান্না করছে। মাকেও সকালে কতোগুলো কথা শুনিয়ে এলো। মাও নিশ্চয়ই খুব কেঁদেছে।
.
!!!
আদি নিজের চুলগুলো দুহাত দিয়ে টানতে লাগলো।আর চেয়ারে বসে পড়লো তারা বললো__
----আদি মন খারাপ করোনা বেবি। ওই মেয়ের জন্য দেখেছো তোমার লাইফে আজ কতো সমস্যা।ওর কোনো একটা ব্যবস্থা করতেই হবে, না হলে যে এই মেয়েটা বড্ড বাড় বেড়ে যাচ্ছে।
---ওই মেয়েটা আমার পরিবার ছিনিয়ে নিয়েছে আমার কাছ থেকে, আমার মা-বোন কে আজ আমি কি বললাম। ওরতো ব্যবস্থা আমি করবোই, পদে পদে শুধু কষ্ট দিবো কষ্ট। এর চেয়ে বেশিকিছু সে আমার কাছে পাবেনা।
---গুড আইডিয়া।
তারা মনে মনে বলতে লাগলো,,,
---মিস আদিরা তোমার ব্যবস্থা তো আমি নিচ্ছি আমাকে কথা শুনানো না এই তারাকে কথা শুনানো সব বের করছি আমি। আজ অবধি তারাকে কেউ কিছু বলতে পারেনি তার বাবা -মাও না। আর তুমি আমাকে কাজের লোক বললে এর শোধ তো আমি তুলবোই।আর সোয়া তোকে তো আমি একে বারে মেরেই দিবো তোর কারনে আজ আমাকে আদিরা কাজের লোক বলেছে শুধু মাএ তোর জন্য।
তিলে তিলে তোকে আমি কষ্ট দিয়ে মারবো। আর এই পৃথিবী থেকে টাটা গুড বায় বলবো। খুব শীগ্রই দেখা হচ্ছে সি ইউ মিস সোয়া ওরপে চৌধুরী।
একটা শয়তানি হাসি দিয়ে তারা মনে মনে কথাগুলো বললো।
আদিরা কাদতেঁ কাদতেঁ সোয়াকে বলতে লাগলো,,,
---আমি ভাইয়াকে আজ কিভাবে বলতে পারলাম ওই কথাগুলো! ভাইয়া তো খুব কষ্ট পেয়েছে না ভাবি, ওই শয়তান মেয়েটার কারনেই তো আজ আমি ভাইয়াকে কথাগুলো বলেছিলাম।
---তোমাকে কে বললো শুধু শুধু এতোগুলো কথা বলতে, ওরা যা বলেছে তা তাদের মুখেই থাক তোমার তো কান দেওয়ার কোনো দরকার ছিলো না।
---কি দরকার ছিলো না, তোমাকে ওই শয়তান মেয়েটা কি বলেছে তুমি শুনোনি। ভাইয়ার সাথে কথা বলতে না পারলে নাই তো কি হয়েছে আমার ভাবি তো আছে না তার সাথে কথা বলবো। তোমাকে কেউ কিছু বললে জানো আমার কতোটা কষ্ট লাগে, মন চায় তাকে গিয়ে কয়েকটা কথা শুনাই। একদম মেরেই ফেলি, ভাবি সত্যি কি ভাইয়া তোমাকে ডিবোর্স দিয়ে দিবে আর তুমি আমাদের মাঝখান থেকে চলে যাবে। বলনা ভাবি ও ভাবি বলনা?
আদিরা সোয়াকে জরিয়ে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে।সোয়া আদিরার মুখ তুলে ধরে চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,,
----এই পাগলী কান্না থামাও বলছি! আমি কোথাও যাবো না আমার ভালোবাসা না তোমার সাথে আছে তোমার হ্নদয়ে আছে সবসময় তোমার সাথে আছে। তাহলে আমি যাবো কোথায় বলো।
---সত্যি কোথাও তুমি আমাদের ছেড়ে যেও না ভাবি। আমি তাহলে খুব কষ্ট পাবো, তুমি আমার আপন বোনের মতো। তোমাকে ছাড়া আমার ভালো লাগেনা, আই লাভ ইউ ভাবি লাভ ইউ সো ম্যাস।
কিছুক্ষণ পর সোয়া আর আদিরা বাড়িতে আসে। বাড়িটা কেমন ফাকাঁ লাগছে যেনো কেউ নেই বাড়িতে। সবাই নিরবতা পালন করছে যেনো কেউ মারা গিয়েছে। সন্ধ্যা ফেরিয়ে রাত হয়ে গেলো,সেই সকালে সবাই নাস্তা করেছে আর এখনো কিছু খায়নি।
আদিও বাসায় আসলো দেখলো সোয়া কিচেনে কাজ করছে আর আদিরা বসে বসে টিভি দেখছে। মা -বাবা বোধহয় উপরে নিজেদের ঘরে আছে। সোয়াকে দেখে তার গায়ে জ্বালা করতে লাগলো এর কারনে আজ তার বোন তার কাছে দৌড়ে এসে বলেনা "ভাইয়া আমার কিটকেট আর ডেইরিমিল্ক চকলেট এনেছো"।বোনটা না আনলে গাল ফুলিয়ে বসে থাকতো, রাগ করতো । আর যখন আনতো ভাইয়া হাতে দিতো তখন খুশিতে ভাইয়াকে জরিয়ে ধরে গালে একটা কিস করতো। এখন সেই বোনটি তার সাথে কথা বলবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেছে। এর তো কোনো একটা ব্যবস্থা করতেই হবে আর এই বাড়ি থেকে তাড়াতেই হবে নাহলে তো এই মেয়ে বেশি বার বেড়ে যাচ্ছে।
আদি রাগি দৃষ্টিতে সোয়ার দিকে তাকিয়ে, উপরে সিড়ি দিয়ে উঠে চলে যাবে বলে যেতে লাগলো।তখন আবার বোনের দিকে তাকালো, ভাইয়া এসেছে টের পেয়েও একটি বার তাকিয়ে দেখেনি।
আদি ফিরে এসে পকেট থেকে চকলেট গুলো বের করে আদিরাকে দিয়ে বললো,,
---তোর চকলেট নে?
আদিরা নিশ্চুপ হয়ে রইলো উওর দিলো না।
---ঠিক আছে কথা বলতে হবে না, আর তোকে হাত দিয়ে ধরেও নিতে হবেনা। আমি টেবিলের উপর রেখে যাচ্ছি তুই পরে নিয়ে নিস।
আদি আদিরার সামনের টেবিলের উপর চকলেট গুলো রেখে উপরে উঠে গেলো। আদি উপরে উঠে দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেসে দাড়িয়ে দেখতে লাগলো আদিরা চকলেট পেয়ে আগের মতো খুশি হয় কিনা। কিন্তুু না আদিরা খুশি হয়নি।আদিরা রহিমাকে ডাক দিলো____
----রহিমা আন্টি!
---হ্যাঁ বলো মা?
---এই চকলেট গুলো তুমি নিয়ে বাইরে ডাস্টবিনে ফেলে দিও।
---কেনো?
---এইগুলার ডেট নেই, খেলে পেটে সমস্যা হবে তাই বলছি ফেলে দাও।
---আচ্ছা, ঠিক আছে।
রহিমা চকলেট গুলো বাইরে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে গেলো।আদিরাকে সোয়া খেতে ডাকলো তাই আদিরা টিভি অফ করে খেতে গেলো। সোয়া মা -বাবাকেও খেতে ডাকলো,সবাই খেতে আসলো শুধু আদি ছাড়া। আদি যখন দেখলো চকলেট গুলো রহিমা ফেলে দিতে বাইরে গেছে তখন বুকে একরাশ কষ্ট নিয়ে নিজের রুমে গেলো।
সোয়া আদিকে খেতে ডাকতে গেলে আদিরা ও মা দুজনেই বাধা দেয়। আদি রাতে না খেলে আবার ঘুমাতে পারেনা তাই নিচে না এসেও পারছে না। তার কাছের মানুষগুলো কতোটা স্বার্থপর হয়ে গেলো এই সোয়াকে পেয়ে একটিবার খেতে অবধি ডাকলো না।
আদি নিচে নেমে একটা চেয়ার টেনে বসলো খেতে, সোয়া সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। আদিকেও দিলো কিন্তু আদির দিকে তাকালোও না একটিবার।মা বললো,,
---তুই খেতে বসে যা সোয়া।
---আপনারা খান মা আমি পড়ে খেয়ে নিবো।
---তুই আমার কথার উপর কথা বলছিস!
মা একটু রাগ দেখিয়ে বলাতে সোয়া খেতে বসে পড়লো।টেবিলে সোয়া বসে খেতে নিলেই আদি বলে উঠলো,,
---হোয়াট ইজ দিস!
---কি হয়েছে তোর?
---বাবা আমাদের সাথে ওই কাজের মেয়েটা একই টেবিলে বসে খাবে এটা কোন নিয়ম?
---ও কাজের লোক ও তোর বউ এই বাড়ির বউ।এই বাড়ির একজন সদস্য ও।
--- সদস্য ইজ মাই ফুট। আমি খাবোনা খাবার যদি ওই মেয়েটা আমাদের সাথে একই টেবিলে বসে রাতের খাবার খায়।
আদির কান্ড দেখে মা বললো,,
---তুমি ওকে বলে দাও আদিরার বাবা না খেলে নাই আমরা কাউকে জোর করে খেতে ডাকিনি। সে সেচ্ছায় খেতে এসেছে সো ও খাবে না, না খাবে তাতে আমাদের কিছু এসে যায়না। আমাদের মেয়ে আমাদের সাথে একই টেবিলে বসে খাবার খাবে।
---না না আপনারা খান। শুধু শুধু আমার জন্য কেনো আপনারা খাবেন না। আমি উঠে যাচ্ছি।
সোয়া নিজের খাবার নিয়ে নিচে গিয়ে বসলো এবং খেতে লাগলো।মা সহ্য করতে পারেনি তাই খাবার রেখেই উঠে চলে গেল। আদিরাও না খেয়েই চলে গেল।