সোয়ার মন খারাপ হয়ে গেলো আজ তার জন্য কতো সমস্যা এই বাড়িতে। পরিবারের মানুষগুলো একে অপরের সাথে কথা বলছে না শুধুমাএ সোয়ার জন্য। সোয়াকে কতো কাজ করতে হবে সামনে হ্যাঁ অনেক কাজ সবাইকে আবার এক সাথে মিলিয়ে দিতে হবে।
আদিকে তার ভালোবাসার মানুষের সাথে মিল করাবে। তার পরিবারের সবার সাথেও করাবে। তারপর সবাইকে মিল করিয়ে দিয়ে সে এই সংসার ছেড়ে চলে যাবে বহূদূর। যাবেই বা কি করে মায়া জমে গেছে এই সংসারের পরিবারের প্রতিটা মানুষের প্রতি। আদি তাকে যতই কষ্ট দিক না কেনো যতই ঘৃনা করুক। সেই আদিকেও সোয়া খুব ভালোবাসে। আদিরা, মা -বাবার মতোই। আদির হাসি সে যে কতো সুন্দর সোয়া যদি একটিবার বলতে পারতো "শুনছেন আপনার হাসিটা না অনেক সুন্দর "যদি বলতে পারতো এই কথাটি।
আদির বাবা কোনো কথাই বললো না তার নিজের মতো খেতে লাগলো। তিনি জানেন প্রথম কয়দিন এমনি হবে পরে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। তাতে আর কান দেওয়ার দরকার নেই, সোয়া নিজের খাবার টুকুও খায়নি আবার কিচেনে গিয়ে প্লেট রেখে বেসিনে হাত ধুয়ে নিলো।
বাবা আর আদিও খেয়ে উঠে গেলো। সোয়া প্লেটগুলো নিয়ে টেবিল থেকে ধুয়ে সুন্দর করে পরিষ্কার করে রাখলো।যখন ঘুমাতে আদির রুমে গেলো তখন আদি বললো,,,,
---এই মেয়ে শুনেন,
---হ্যাঁ বলুন?
---আপনি আমার জিবনে নানান সমস্যা সৃষ্টি করেছেন। আমার মা-ছোট বোনটি শুধু মাএ আপনার জন্য আমার সাথে কথা বলছে না।
---আমি কি ওনাদের বলেছি যে আপনার সাথে কথা না বলতে। ওনারা নিজের ইচ্ছেতেই তো আপনার সাথে ..............
---চুপ একদম চুপ! মায়ের মাথায় আমার নামে আজে -বাজে কথা ডুকিয়ে আমার ছোট বোনটিকে অবুঝ পেয়ে তাদের কি না কি বলেছে আর তারা আমার সাথে কথা বলছে না।"কাজের লোক "সবসময় কাজের লোকের মতো থাকবেন, এই বাড়ির বউয়ের অধিকার ফলাতে আসবেন না। আপনি কখনো এই বাড়ির বউ হওয়ার যোগ্য নয়। যেদিন যোগ্য হতে পারবেন সেদিন ফলাতে আসবেন, আর আমার রুমের ধারে কাছেও আসবেন না। আমার রুমে থাকার অধিকার শুধুমাত্র আমার ভালোবাসা "তারার "।সে ছাড়া এই রুমে কেউ ঘুমাতে পারবে না। আজকে থেকে আর কোনোদিন আমার রুমে ডুকবার চেষ্টা করবেন না এবং কোনদিন আসবেন ও না। আমাদের বাড়ির কাজের লোকদের জন্য কিচেন আছে সেখানে একটা মাদুর পেতে শুয়ে পরবেন।
---সমস্যা নেই আমি ঘুমাতে পারবো কিচেনে নিচে ফ্লোরে। কথা দিলাম আপনাকে আজ থেকে এখন এই সময় থেকে আপনার রুমে আমি কোনোদিন আপনার পারমিশন ছাড়া ডুকবো না।
---হ্যাঁ এইভাবে বলে যেতেই পারবেন আগে করে দেখান তারপর না হয় বলতে আসবেন।যতদিন না ডিবোর্স হচ্ছে ততদিন আপনি কিচেনে কাটাবেন।
সোয়া মাথা নিচু করে দাড়িয়ে সব কথা শুনে তারপর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। সোয়া যাওয়ার সাথে সাথে আদি নিজের রুমের দরজা আটকে দিলো। সোয়া কিচেনে গিয়ে একটা মাদুর পেতে শুয়ে পড়লো।
.
ভোরের আলো চোখে এসে পড়ে সোয়ার ঘুম ভাঙ্গে। কেউ যেনো না দেখে যে সারারাত সোয়া কিচেনে কাটিয়েছে তাই তাড়াতাড়ি সব গোছগাছ করে রেখে দিলো। মা যদি একটিবার জানে এই কথা তাহলে সোয়াকে নিশ্চয়ই দু গালে দুটো থাপ্পড় মারবে।
সোয়া তার পছন্দের ফুলের বাগান পরিদর্শন করে এলো, তারপর সকালের নাস্তাও তৈরি করে ফেললো। ঘর সুন্দর করে পানি দিয়ে মুছে ফেললো।মা এসে দেখে সোয়া সবকিছু করে গোছগাছ করে কাজ সেরে ফেলেছে। হাসি মুখে সোয়াকে গিয়ে বললো,,,,
---আমার লক্ষী মা টা সব কাজ একেবারে করে নিয়েছে কোনো কাজ আমার জন্য রাখেনি।
---আপনার বয়স হয়েছে মা এখন কিসের কাজ করবেন। আমি তো এই বাড়ির "কাজের লোকের মতোই "তাই সেই হিসেবে করে নিলাম।
---কি বললি তুই "তুই এই বাড়ির কাজের লোক"আরেকটা বার যদি শুনি তোর মুখে এইসব কথা তাহলে তোর সাথে আর কোনোদিন আমি কথা বলবো না। সে তোকে ওই মহানায়ক আদি চৌধুরী বলুক কাজের লোক তা তুই একদম মাথায় নিবি না। তুই আমার মেয়ে এই বাড়ির মেয়ের মতোই থাকবি।
সোয়ার চোখ পানিতে টলমল করছিলো, আদি তাকে কতো অপমান করে। আর তার নিজের মা নিজের ছেলেকে সাপোর্ট না করে একটা অচেনা মেয়েকে সাপোর্ট করছে। এমন মা কখনো হয়, দু দিনের পরিচয় এই মেয়েটিকে তার মেয়েও বানিয়ে নিলো। সত্যি সোয়া তুই কতো লাক্কি রে স্বামীর থেকে স্বামীর অধিকার পাসনি তো কি হয়েছে। ভালো একটা শাশুড়ি, একটা মা পেয়েছিস তুই।
মা বলে উঠলো,,,,
---আচ্ছা, শুন আমি আজ নাস্তা করে তোর শ্বশুর বাবাকে নিয়ে আমরা দুজনে মিলে অনাথ আশ্রমে যাচ্ছি কিছু দান করবো তাই। তুই কি যাবি আমাদের সাথে?
---হ্যাঁ মা আমি যাবো। আমার কতো শখ নিজের হাতে গরিবদের দান করার, কতো আশা এই গরিবদের দুঃখ দূর করার। আপনাদের এই দেশে মা কতো দরিদ্র লোক তাদের দেখলে জানেন তো আমার বুকে কতো কষ্ট হয়। আমরা কতো খাবার না খেয়ে ফেলে দেই অথচ তারা খাবার টুকুও খেতে পায়না। আমরা জামা একদিন একটা পড়ে রেখে দেই পড়ে সেটা আর পড়িনা কিন্তু তারা ছেড়া জামা কাপড় পড়ে কতোদিন কাটায়।ঠিক মতো তারা খেতে পায়না, ঘুমাতে পারেনা রাস্তায় একটু খালি কোনো যায়গা ফেলে একটা চাদর বিচিয়ে শুয়ে পড়ে, টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারেনা ভালো।
---"আপনাদের দেশ " মানে? তুই কি অন্য দেশের নাকি?
---ওহ সরি, আমার ভুল হয়ে গেছে। চলো নাস্তা করে নিবে।
---হ্যাঁ চল।
আদিরা বাবা -মা সবাই একসাথে নাস্তা করে নিলো। সোয়া ও করেছে আদিকে একটিবার ডাকেনি, কেননা ডাকতে গেলে তার রুমে যেতে হবে তারপর ডাকতে হবে। আর আদির রুমে যাওয়া সোয়ার বারন আছে তাই সোয়া ডাকতে যায়নি।
আদিরাও জেদ ধরলো তাদের সাথে অনাথ আশ্রমে যাবে। ভার্সিটি বাদ দিয়ে অনাথ আশ্রমে যাবে বলে জেদ ধরেছিলো আদিরা তাই মা বকা দিতে গেলে সোয়া আটকিয়ে দেয়।
সবাই রেডি হয়ে একসাথে যাবে বলে বের হয়। তখন সোয়া বলে উঠলো,,,,
---মা ওনি তো এখনো নাস্তা করেনি!
---নাস্তা করেনি তো কি হয়েছে, ওনি নিজে ঘুম থেকে উঠে করে নিবে। যে তোকে বউয়ের মর্যাদা দেয় না তুই আবার তার কথা চিন্তা করিস, কেন করিস রে। ও তোর কথা চিন্তা করে, ওনার গার্লফ্রেন্ড আছে চিন্তা করার জন্য চল তুই আমার সাথে।
মা সোয়াকে তার সাথে করে নিয়ে গেছে। আদি ঘুম থেকে উঠে নিচে নেমে দেখে কেউ নেই কারো ছায়াও নেই একটু বাড়িতে।
---রহিমা আন্টি,
---হ্যাঁ, বলো আদি?
---বাড়ির সবাই কোথায়?
---বৌমনি, মাসিমা, দাদাবাবু, আর আদিরা চারজন অনাথ আশ্রমে গিয়েছে। কেন তোমায় বলে যায়নি বাবা!
---আমাকে বলে গেলে তোমায় জিজ্ঞেস করছি কেনো।যাও তো এখন!
রাহিমা চলে গেলো।
আদি নিজে নিজে বলতে লাগলো,,
---বাহ আমি যে একটা মানুষ বাড়িতে রয়েছি তাদের কোনো সেদিকে খেয়াল নেই। আমায় ভুলেই গেছে তারা দূর আর ভাল্লাগেনা এই পৃথিবী ছেড়ে আজই আমি ভিনদেশের বাসিন্দা হবো টাটা পৃথিবী।
আদি নেকা কান্না করতে করতে বললো। বাচ্চারা ঠিক যেমন করে আদিও ঠিক তেমনি করছে।
---সবাই নিজ নিজ দায়িত্বে নাস্তা করে চলে গেলো। আমার জন্য একটুও অপেক্ষা করেনি, কেন করবে আমায় তো সবাই ভুলেই গেছে। যাই দেখি কিচেনে কিছু পাই কিনা। আমার নাকি বিয়ে হয়েছে ঘরে বউ আছে একটা সে তো অন্তত আমার কথাটা ভাবতো। যে আমার বরটা তো এখনো নাস্তা করেনি, একটা বার ডাকতেও যায়নি।
তখন মনে পরে গেল আদির কাল রাতের কথা সে নিজেই তো বারন করলো সোয়াকে তার ঘরে যেনো সে না যায়। তাহলে ডাকতে যাবে কেন। আর সোয়ারই বা তার জন্য মায়া হবে কেনো, সে নিজেই সোয়াকে দেখতে পারেনা সোয়াকে কতোগুলো কষ্ট ও দিলো। সেই সোয়া এতো কিছুর পরও তাকে ডাকতে যাবে কেন।
ভাবতে ভাবতে গেলো কিচেনে গিয়ে আদি খুজতে লাগলো তার জন্য নাস্তা রেখে গেছে কিনা। কিন্তু কোথায় রেখে যায়নি পরে চোখ পরলো কিছু একটা প্লেট দিয়ে ডেকে রাখা। সেটা উল্টিয়ে দেখে তার পছন্দের সেন্ডুয়েজ। একটা নিয়ে একটু খেলো।
---ইয়াম কি টেস্টি! কে বানালো আমার এই ফেবারিট সেন্ডুয়েজ?
তারপর আবার ডাকলো রহিমাকে।
---রহিমা আন্টি,,
---জ্বি বলো?
---সেন্ডুয়েজ কে বানিয়েছে?
---বৌমনি সকালে আপনার জন্য বানিয়েছে।
---ওহ আচ্ছা।
---একটা কথা বলি বাবা?
---হ্যাঁ বলো!
---সকালে যাওয়ার সময় বৌমনি, যখন তুমি নাস্তা করোনি এটা বললো আর ফিরে রেখে যেতে এসেছিলো। তখন মা বাদা দিয়েছিলো, তাও বৌমনি গাড়িতে উঠার সময় একটা বাহানা দিয়ে এসে রেখে যায় তোমার জন্য এগুলো। আর বলে গেছে তুমি উঠলে যেনো দেই।
---নেকামি সব, যত যাই করুক আদির মনে যায়গা করা ওতো সোজা না।
রহিমা কিছুটা দূর যেয়ে মনে মনে বললো,,,
---কতো স্বার্থপর, মেয়েটা মিথ্যা বলে বাড়ি এসে তার জন্য খাওয়ার রেখে গেছে। তাও বলে এইসব নেকামি তার মনে যায়গা করার ধান্ধা ছিঃ। আমি হলে কবেই এমন ছেলেকে স্বামী না মেনে রেখে চলে যেতাম তার ঘর ছেড়ে।
আদি বলতে লাগলো,,,
---কি ডেন্জারাস মেয়ে ভেবেছে আমার পছন্দের খাবার আমাকে বানিয়ে খাওয়ালে আমি তাকে বউ হিসেবে মেনে নেবো। হুহ কখনোই না।
.
গাড়ি এসে থাকলো অনাথ আশ্রমের কাছে। সবাই নামলো ভেতরে যেতে নিলেই দেখা হয় আদির বন্ধু রাইজানের সাথে।
---হেলো,আদিরা এন্ড অচেনা ব্যক্তি!
---হুম, কেমন আছেন ভাইয়া?
---ভালো, আদিরা কে ওনি?
---কে আবার আমার ভাবি।
---কি আদির বউ না অধরা?
আদিরা সব বলে আগের ঘটনা রাইজানকে।রাইজান বললো,„
---ওহ আচ্ছা তাই তো চিনিনা। তা সুন্দরী ভাবি কেমন আছেন?
---জ্বি ভালো। আপনি?
--ভালো।
--ভাবি আমার একটা ফোন আসছে, আমি ওপাশে গিয়ে কথা বলে আসি।
--আচ্ছা যাও।
আদিরা চলে গেলে রাইজান আর সোয়া একে অপরের সাথে কথা বলে। সোয়া হাসছে রাইজানের কথা শুনে, আর রাইজান অদ্ভুত দৃষ্টিতে সোয়ার হাসিটা দেখছে। কি মিষ্টি হাসি সোয়ার যে কেউ দেখলে ক্রাশ খাবে নয়তোবা প্রেমে পড়বে। যেমনটা পড়েছে রাইজান, আদিরা কথা বলে এসে সোয়া আর রাইজানকে নিয়ে ভেতরে যায়।
রাইজান বার বার শুধু সোয়ার দিকেই তাকাচ্ছে, কিন্তু সোয়া একটিবারের জন্য ও রাইজানের দিকে তাকায়নি। সবাইকে দান করা শেষে বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা হয় সবাই।
রাইজান ও তাদের সাথে যায় সামনেই রাইজানের বাসা তাই নেমে পড়ে।
অফিস অফ আজ আদির তাই বাড়িতেই আছে। সোয়া আদিরার সাথে কথা বলছিলো, আর আদি তখন সিড়ি দিয়ে নেমে আসছিলো। কেউ বেল বাজায় আর সোয়া গিয়ে দরজা খোলে দেখে রাইজান এসেছে।
---আমি এসে গেছি সুন্দরী।
---ভালো করেছেন আসুন ভেতরে আসুন।
রাইজান ভেতরে এসে সোফায় বসে, রাইজান আদিকে দেখে আগে গিয়ে জরিয়ে ধরতো। আর আজ হাই বলেই সোয়ার সাথে কথা বলা শুরু করলো।রাইজান সোয়াকে বললো „„
---সুন্দরী! তোমায় কাল রাতে কতোবার স্বপ্নে দেখেছি জানো। কতো মিস করেছি তাই আজ চলে এলাম দেখা করতে,