ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া - পর্ব ১০ | Valobasar Alto Chowa 10

আদির রাগ উঠে গেল রাইজানের সোয়ার সাথে হ্যান্ডসিপ করতে দেখে। মনটা চাইছে আদির রাইজানকে গিয়ে কটা থাপ্পড় মারতে অসভ্য ছেলে, অন্যের বউয়ের সাথে এখানে ভাব জমাতে আসছে কতো খারাপ হলে হতে পারে।

 

রাইজান সোয়াকে বললো____

---আমার প্রানের ভাবি, সুন্দরী ভাবি। আপনার ভয়েস এতো সুন্দর কেনো, সত্যি খুব খুব সুন্দর হইছে আপনার ওই মিষ্টি কণ্ঠে গানটা।

---ধন্যবাদ রাইজান ভাইয়া।

 

পরপর সবাই সোয়ার গুনগান গাইছে আর রাইজান মনে মনে বলতে লাগলো,,,,

---হায়রে অন্য নামে ডাকলে ও পারতো, ভাইয়া বলার কি হলো এখানে। দূর সালা আমার কপালই খারাপ।

 

তারা আদিকে ডাক দিয়ে বললো_____

---এই আদি তুমি এখানে কি করছো? 

---না কিছুনা ভেতরে চলো।

---হুম, চলো।

 

রাহুল আদিকে বললো,,,,,

---তুই সত্যি ডিবোর্স দিবি ওকে!

---হ্যাঁ দিবো তাতে তোর কোনো সমস্যা। তারাকে যখন বিয়ে করবো তখন তো ওকে আমার নিশ্চয়ই ডিবোর্স দিতে হবে। আর ওই কাজের মেয়ের সাথে আমার সংসার করার কোনো ইচ্ছে নেই, ওকে আমি জাস্ট সহ্য করতে পারিনা।

 

---আমার কোনো সমস্যা নেই তোকে জাস্ট আস্ক করলাম। তোর ইচ্ছে, তোর জিবন, তোর সবকিছু আর ডিসিশন নেওয়ার মালিক ও তুই।

---এই রাহুল, তুই আদির মাথায় কোন ভূত চাপাচ্ছিস রে!

 

---আমি আবার কি চাপাতে যাবো, তোর ভালোবাসাকে কিছু করানোর আমার কোনো সাধ্য আছে। 

---হুহ নেই! ওই মেয়েকে নিয়ে তুই আর একটা কথা ও বলবি না। ওইসব আলতু ফালতু মেয়েকে নিয়ে কথা বলে শুধু শুধু টাইম লস করিস না তো, "কাজের মেয়ে "একটা। ডিবোর্স দিয়ে দিলে আমাদের বাড়িতে আমি একটা চাকরের কাজ দিয়ে দিবো, না হলে আবার কোথায় যাবে।

 

রাইজান বললো,,,,

---আচ্ছা, তুমি ওকে দেখতে পারো না। তাহলে ওকে নিয়ে আবার চিন্তা করো কেনো? ওর ভবিষ্যতে ও কি করবে না করবে সেটা তোমার তো ভাবার কথা না। নিজেরটা নিয়ে থাকো, অন্যের কোনো কিছুতে নাক গলাতে এসোনা। ওর মতো শ্রী, সতী লক্ষী নারীকে এসে নেওয়ার মতো ছেলের অভাব নেই।

ইলফা বললো,,,,

 

---তুই কি বলতে চাইছিস রাইজান?

---হ্যাঁ আমি যা বলতে চাইছি তা আমি ক্লিয়ার করেই বলছি তোদের! সোয়াকে নিয়ে আর একটা কথা ও বলবি না তোরা, আমার সামনে তো অন্তত পক্ষে ওকে অপমান করতে আসবি না।

---এই রাইজান তুমি ওই মেয়েকে নিয়ে এতো উথাল হয়ে পড়েছো কেনো?

 

---শুনো মিস তারা, তোমার আর আদিকে নিয়ে আমি কোনো কথায় কোনোদিন নাক গলাইনি বা। আদি যত তারাতারি সোয়াকে ডিবোর্স দিবে আমার জন্য ততই ভালো।

 

---হোয়াট তুই কি বলতে চাইছিস রাইজান?তুই কি!

---হ্যাঁ অন্তর তুই ঠিকই ধরেছিস! এই দুদিনের পরিচয়ে না সোয়া আমার এই মনের মাঝে অনেকটা যায়গা করে নিয়েছে।অদ্ভুত অদ্ভুত অনূভুতি জমেছে তার জন্য আমার মনে। হয়তো ভালোবেসে ফেলেছি।

 

ইলফা বললো,,,

---গ্রেট রাইজান! ভাই তুই একমাত্র প্রেমিক, কিন্তু তোর এই ভালোবাসা, ভালোলাগা আবার আবেগ না তো।একজন এই পাচঁ ছয়টা দিনে মেয়েটাকে খুব কষ্ট দিয়েছে।

---আমি না জানিস তো ইলফা! কাউকে মনে একবার যায়গা দিলে তাকে কখনো ভুলিনা। সোয়ার হাসি, ওর কণ্ঠ, ওর গান আমায় জানিস তো মাতাল করেছে। আমি কোনো আবেগীয় ব্যক্তি না যে আমার ভালোবাসা আবেগি হতে যাবে।

 

আদি রেগে বলে উঠলো,,,,

---একদম চুপ থাক! অনেক হইছে এতক্ষণ তুই অনেক বলেছিস, এখন আর না। যখন ডিবোর্স হবে তখন এই এক্সসেন্টসগুলো নিয়ে বসিস ওকে।

---কেনো এখানে বললে কি তোর গায়ে লাগে! লাগার কথা না তো তোর, কেননা তোর অলরেডি গার্লফ্রেন্ড আছে। কিছুদিন পর বিয়ে ও হচ্ছে।

 

---আহ রাইজান এবার চুপ হ! শুধু শুধু ঝগড়া করছিস কেনো।

---তোরা থাক আমি যাই! তোদের এইসব ফালতু ড্রামা, কাহীনি আমার ভালো লাগেনা।

 

রাইজান চলে গেলো। সবাই ওর যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে রইলো।ইলফা বললো,,, 

---রাইজান কতোটা চেন্জ হয়ে গেলো।

---আরে তুই ভাবিস না ইলফা ওইসব একদিন দুলোয় মিশে যাবে। সোয়া নামের কেউ এই পৃথিবীতে থাকবে কি -না সন্দেহ।

 

---মা.......মানে তারা তুই ওকে কি করবি?

---ওকে কি করবো তা পরে জেনে যাবি! এখন আপাতত এইসব নিয়ে কথা না বলাই বেটার।

 

ইলফার বুকের ভেতর কেমন জানি কু ডাক গাইছে। তারা যা বলে ঠিক একদিন তা করে দেখায়, কিন্তু ইলফায় ভয় এটাই ও সোয়ার কোনো ক্ষতি করবে না তো। উপর ওয়ালা না করুন তারা যেনো ভুলেও তা না করে।

 

দুপুর গড়িয়ে এলো সবাই লান্স করে যে যার মতো চলে গেলো। আদির সেই আবার ও রাগ উঠলো, রাইজান বারে বারে শুধু সোয়ার সাথে কথা বলতে চায়, তার হাত ধরতে চায়। আদির তা এক প্রকার অসহ্যতা বয়ে আনলো।

.

!!!

রাতে আদি বারান্দায় দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ভাবছে।ওতো সোয়াকে দেখতে পারেনা,সোয়াকে সহ্য করতে পারেনা। তাহলে রাইজান সোয়ার সাথে হাল মিলিয়ে হ্যান্ডসিপ করলে, তার সাথে কথা বললে ওর কেনো এতো কষ্ট লাগে। রাইজানের প্রতি এতো জেদ ওঠে।এইসব ভাবছে আদি আর ওই দূর আকাশে চাদেঁর ও জোৎস্না দেখছে।

কানে বাজছে আদির এখনো সেই সুমধুর কণ্ঠ, সেই গান। এতো সুন্দর করে কেউ গান গাইতে পারে। তাও আবার আদির পছন্দের রবীন্দ্র সংগীত। আদির যেমন কণ্ঠটা ভালো লেগেছে তেমন সোয়ার কণ্ঠে সেই "তুমি রবে নিরবে "গানটা।

 

একটা কল্পনার জগতে হারিয়ে গেলো কিছুক্ষণের জন্য আদি। প্রথম সেই দেখা, আদিরার সাথে কথা বলার সময় সেই হাসি, কণ্ঠ সব মিলিয়ে সোয়াকে বেশ ভালো লেগেছে।

আদি মনের তরে কবিতা বলতে লাগলো,,,

"আমার সামনে মনের ও,

খোলা দরজায়,

তোমায় ভালোলাগা।

 

বারে বারে ভেসে উঠে সামনে,

তোমার সেই মায়াবী চোখ দুটি।

শ্রুতিমধুর সেই কণ্ঠে,

ভরে মন আনন্দে।

 

তোমার প্রতিচ্ছবি মনের আঙ্গিনায়,

শুধাবিনী হয়ে যায়।

ভালোলাগা নামে শব্দটি!

বাসা বাধে এমনে।

 

ভালোবাসি, ভালোবাসি বললে হয়না বাসা,

তোমায় আমি বাসি হয় দুচোখের বাসা।

মনের কোনের গভীর অরন্যে,

তোমার নামটি লিখে রেখেছি।

 

তোমার গাওয়া সেই গানের কলিতে,

অদ্ভুত অনূভুতি আমার মনে জাগে।

শিহরিয়ে উঠে সেই কণ্ঠে,

ভালোলাগার অনূভুতি।

 

প্রতিটা সময় এখন আমি দেখি, 

তোমার সেই"প্রতিচ্ছবি "।

 

রাত তখন বোধহয় ২টা বাজে,সোয়ার মনে হচ্ছে সে কারো বুকে পরম শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। কেউ খুব আলতো করে জরিয়ে ধরে আছে। সোয়ার কতোটা যে শান্তি লাগছে এই বুকের উপর ঘুমাতে বলে হয়তো কাউকে বুঝানো যাবেনা। মুখ উপর করে দেখে সেই মানুষটি যার জন্য প্রতিক্ষন সে কতো ভাবে। মনের মধ্য তার সেই হাসিটা এখনো গেথে আছে। তার সেই প্রথম ছোয়া, ভাবতেই বুকটা খুশির আনন্দে ভেসে যাচ্ছে। সোয়াও খুব শক্ত করে জরিয়ে তাকে ধরে আছে।

ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া

হাফিজ মাহমুদ

পর্ব : ১০

Previous Post Next Post