সোয়া পরম শান্তিতে কে। বুকের ভিতরে থেকে ধুক ধুক্ করে আওয়াজ আসছে, সোয়া কান পেতে শুনছে।
তারপর সোয়া মুখ তুলে তার সে ভালোলাগার মানুষটির দিকে তাকাতে গেলে দেখলো।কই কেউ নেই তো, কার বুকে সে এতক্ষণ মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলো।
বালিশ থেকে মাথা তুলে চারিদিকে খুঁজতে লাগলো চোখ দিয়ে কই সে নেই তো এখানে। কোথায় গেলো সে, ভালো করে চোখ ডোলে আবার খুজলো না নেই কেউ, তার ছায়া পর্যন্ত নেই এখানে।
তাহলে সে স্বপ্ন দেখেছিলো এতক্ষণ, আর যার বুকে মাথা রেখে এতক্ষণ ঘুমিয়েছিলো। সে সোয়ার ঠিকানাই বা জানবে কিভাবে। আর জানারও কথা না কেননা সোয়াকে এই ঢাকা শহরে চিনেনা ঠিক করে কেউ। অধরা আর অধরার বাবা ছাড়া।
সোয়া নিজে নিজে বলছে______
এতক্ষণ আমি স্বপ্ন দেখলাম তাহলে, আল্লাহ! ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তো আমি, সে এখানে আসলে তো আজ তুমুল গন্ডগোল ও হতো। ভাগ্যিস সে আসেনি, কিন্তু ভয় করছে খুব যদি একদিন এসে পড়ে এখানে আমার খোঁজে। ঠিকানা বের করতে তো সময় লাগেনা ডিজিটাল যুগে। হে উপর ওয়ালা তুমি এমন কিছুই করতে যেও না এই ছয়টা মাসে।
সোয়া নিজে নিজে আরো কিছু বলে আবার শুয়ে পড়লো আগের মতো।আদির খুব পানির পিপাসা পেয়েছে তাই উঠে পানি খেতে নিলে দেখে গ্লাসে পানি নেই।
গ্লাসে পানি নেই বলে নিচে নেমে পানি খেতে আসলো,সিড়ি দিয়ে নেমে টেবিলে পানির জগ থেকে পানি নিয়ে খেলো।যখন যেতে নিবে তখন চোখ পরলে কিচেনে, চাদেঁর আবচা আলো এসে কোনো এক মায়াবতি রূপসীর মুখে পরেছে।
এই চাদেঁর আলোতে সুন্দর মায়াবি মুখটা কতোটা সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে যেনো তার রূপের আলোয় পুরো ঘর আলোকিত হয়ে আছে।পা টিপে টিপে গেলো কিচেনে আদি, দেখলো সোয়া শীতে কম্বল জরিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে।
আদির এই নিচে ফ্লোরে শুয়ে থাকতে দেখে সোয়াকে খুব কষ্ট ও লাগছে। আদি সোয়ার পাশে গিয়ে তার মাথার কাছে বসে তার মাথায় হাত রাখলো, পরম যন্তে বিলি কেটে দিতে লাগলো। আদি বললো,,,,
---সরি সোয়া, আমি চাইনি কখনো আপনাকে কষ্ট দিতে! কিন্তু প্রথম আপনাকে দেখলে আমার মাথা কেনো জানি গরম হয়ে যেতো। আপনাকে সহ্য হতোনা। আমার পরিবারের সবার সাথে আপনি কতোটা ক্লোজ হয়ে গেছেন। যা আমার সহ্য হয়নি আবার ভালো ও লেগেনি।সবাই তো চায় তার ভালোবাসার মানুষের সাথে সুখের ঘর বাধতে, ঠিক তেমনি আমিও চাই। বাবাকে বিয়ের আগে তারার কথা বলেছিলাম কিন্তু বাবা হ্যাঁ বা না কিছুই বলেনি। হঠাৎ করেই বিয়ে কথা বলে অধরার সাথে। সেই থেকেই আমার প্রচুর জেদ ভেতরে হয়ে আছে। সেই জেদ হয়তো আপনার উপর উঠছে। পারলে ক্ষমা করবেন আর না পারলে যেকোন একটা অভিশাপ দিয়েন। পাড়ছিনা কেনো জানি আমি আজ দুদিন আপনার সাথে কেউ কথা বললে সহ্য করতে।ভেতরটা কেমন জানি করে তখন, নিজের রাগ কন্ট্রোল করে রাখতে পারিনা। আসলে আমি খুব জেদি এবং রাগিও মা ঠিকই বলে। একদিন বলেছিলো আমার জেদ নাকি আমাকে ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিবে। একদিন এই জেদ আমার বিপদের কারন হয়ে দাড়াবে। সত্যি কি তাই হবে? আচ্ছা যাই আমি আপনি ঘুমান, আপনাকে আমার জেদ এই নিচে শোয়ালো আমি খুবই দুঃখিত!
উঠে চলে যায় আদি! সোয়া কিছু শুনতে পেলো কিনা তা আদি না বুঝেই চলে গেলো। সোয়া কি কিছু শুনতে পেলো?
পরেরদিন সকালে সোয়া উঠে রোজকার মতো নাস্তা তৈরি করলো। আরো হাতের কিছু কাজ করলো। তারপর গার্ডেনে গেলো, গিয়ে টবে লাগানো ফুল গাছ গুলোতে পানি দিতে লাগলো।
অন্যদিকে আদির আজ একটা মিটিং আছে অফিসে, তাই বেশ সকাল সকালই উঠলো ঘুম থেকে।উঠে শাওয়ার নিলো তারপর টাওয়ালটা বারান্দায় দড়িতে মেলে দিতে গেলে চোখ পড়ে গার্ডেনে। কোন এক রূপসী নারী দাড়িয়ে ফুল গাছে পানি দিচ্ছে। সাদা রঙ্গের কাপড়, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। সব মিলিয়ে বেশ দারুণ লাগছে, আদির রুমের বারান্দায় দাড়ালেই বাগানের ফুলগুলো দেখা যায়। আর রোজ সকালে ওই নতুন করে উঠে যে সূর্যটা তাকে।
সোয়া গুনগুন করে গান গাইছে আর বাগানের টবের ফুলগুলোর ঝরা পাতাগুলো হাত দিয়ে ধরে ফেলছে নয়তো কেচি দিয়ে কাটছে।
আদি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভেতরে চলে গেলো। সোয়ারও বাগানের কাজ শেষ হলে বাড়িতে ডুকে। তখন দেখে যে আদি রেডি হয়ে নিচে নামছে!
আদি নিজে থেকে বললো সোয়াকে,,,
---আমার ব্রেকফাস্ট কি পাওয়া যাবে সকালের?
সোয়া অবাক হচ্ছে আজ প্রথম আদির থেকে শুনলো খাওয়ার দেওয়ার কথা। সোয়া বললো,,,,
---জ্বি, যাবে! আপনি বসুন আমি আনছি।
সোয়া যেতে যেতে হাসছে আর মনে মনে বলছে,,
---ব্রেকফাস্ট মানুষ দিনে করে নাকি রাতে যে সকালের বলতে হলো আবার ব্রেকফাস্ট ও। না থাক মানুষ মাএই ভুল হতে পারে।
সোয়া নাস্তা এনে আদির সামনে দিলে আদি খেতে থাকে। এই সময় সাফিয়া ও আসে!
---কেমন আছেন বৌমনি?
---ভালো, তুমি?
---এইতো আপনাদের দয়ায় ভালো আছি।
---তা তোমার স্বামীর কি অবস্থা এখন?
---হ্যাঁ ওনি আল্লাহর রহমতে খুব ভালো আছে। ওহ বৌমনি,,,
---হ্যাঁ বলো?
---ডাক্তারের কাছে ওনাকে নিয়ে গিয়েও অনেক টাকা রয়েছে! এই নিন টাকাটা!
--এমা এটা আমাকে দিচ্ছো কেনো? আর আমার লাগবে না তুমি তোমার কাছে রাখো।
---না না বৌমনি! আপনি টাকাটা নিয়ে যান। আমার আর লাগবে না।
---আমি কি বলেছি তুমি শুনোনি সাফিয়া! এই টাকা রয়েছে তো কি হয়েছে। তোমার মেয়ের জন্য কি করতে বলছি আমি।এই টাকা তুমি নিয়ে যাও আমাকে দিতে এসো না।
বলেই সোয়া চলে গেলো সেখান থেকে।
---বৌমনি! যাহ রাগ করে চলে গেলো।
আদি বললো,,
----তোমায় টাকা গুলো কে দিয়েছে?
---বৌমনি দিয়েছে ছোট সাহেব!
---ওহ আচ্ছা যাও।
সাফিয়া চলে গেলো আর আদি ভাবছে,,
----এতো টাকা ও পেলো কোথা থেকে! আর কে বা দিলো। যতদূর জানি ওতো অধারদের বাড়িতে কাজ করতো, আর কাজ করলেই বা বেতন কতো পেতো। এতগুলো টাকা একসাথে আমার তো কিছুটা মাথায় ডুকছে না।
আদি খেতে খেতে মা -বাবা আর আদিরা নিচে আসে। মা সোয়াকে ডেকে বললো,,,,
---সোয়া শুন এইদিকে আয়?
---হ্যাঁ মা বলো?
---আদিরার বাবা তোমার ছেলেকে আসতে বলো এদিকে।
---হ্যাঁ বলছি! এই আদি এইদিকে আয়?
আদিও এসে দাড়ালো মার সামনে!
---আমি কিছু বলতে এসেছি তোদের?
সোয়া বললো,,
--হ্যাঁ বলো!
আদির আবার ভয় করছে তার মা রেগে আবার কিছু বলবে না তো কোথাও চলে যাবেনা তো। তার মা যেই পরিমাণ রাগি একবার যা বলে তাই করে। রাগি মায়ের রাগি ছেলে কি সুন্দর।
মা বললো,,,,
---আমি যা বলতে এলাম!
ভালোবাসার আলতো ছোঁয়া
হাফিজ মাহমুদ
পর্ব : ১১
.
চলবে নাকি থামিয়ে দিব???