-শুনছেন,সোয়া দরজাটা খোলেন।
আদি দরজায় নক করে বলছে কিন্তু ভেতর থেকে সোয়ার কোন সাড়াশব্দ নেই। আবার ডাকলো আদি,,,,
-সোয়া দরজাটা খোলেন,আমার ভুল হয়েছে মাফ চাচ্ছি সরি। তাও দরজা খোলেন প্লিজ!
তাও সোয়ার কোনো পাত্তা পেলো না আদি।আবার ডাকতে লাগলো,,,,
-শুধু শুধু আমার সাথে রাগ করে থেকে আপনি কেন খাবেন না শুনি। দরজা খোলেন আর নিচে খেতে আসুন।আমি কান ধরছি আর জিবনেও আপনাকে বকবো না প্লিজ দরজা খুলেন!
সোয়া তাও দরজা খুললো না ভেতরে বসে বসে চোখের পানি ফেলছে।আদি চিন্তায় পড়ে গেল, বকা দেওয়ার কারনে আবার ও কিছু উলটা পালটা করে বসে না তো। না না এইসব কিছুই করতে যাবে না সোয়া।আদি দরজা খোলার ফন্দি পেল। তাই বাইরে থেকে জোরে চেঁচিয়ে বললো যেনো ভেতরে সোয়া শুনতে পায়।
-আপনি যদি আজ দরজা না খোলেন তাহলে আমি আজ রাতে ডিনার করবো না। আর ঘুমাতেও যাবো না এখানে এভাবে দাড়িয়ে থাকবো বলে দিলাম।স্বামীর মঙ্গল চান না সবসময় আজ অমঙ্গল ঘটবে গোড় অমঙ্গল দেখবেন শুধু।
সোয়া অমঙ্গলের কথা শুনে তাড়াতাড়ি বিচানা থেকে উঠে এসে দরজা খুললো। আদির চোখের দিকে তাকাতে পারছে না সোয়া চোখ জোড়া নিচে করে রাখলো।আদি ভেতরে ডুকে সোয়ার একটা হাত ধরে টেনে নিয়ে সোফায় বসালো।
সোয়া অনেকক্ষণ যাবৎ কান্না করেছে তাই চোখগুলো ফুলে লাল হয়ে আছে। আদি সোয়াকে বসিয়ে তার সামনে বসলো আদি। তারপর সোয়ার গাল দিয়ে বেয়ে পড়া চোখের পানি দু হাত দিয়ে মুছে দিলো।সোয়া অবাক হয়ে গিয়েছিলো আজ বকলো দুপুরে আবার এখন আদর দেখাতে আসছে।
কিছুক্ষণ ভালো মানুষি আবার কিছুক্ষণ খারাপ এ কোন নিয়ম ওনার।
-সরি!
সোয়া নিশ্চুপ কথা বলছে না।চোখ থেকে এখনো পানি পড়ছে।
-কথা বলবেন না আমার সাথে?কথা যখন বলবেনই না তখন দরজাটা খুললেন কেনো? দরজা আটকিয়ে আরো কাদতেঁন। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে দেখুন।চোখগুলো তো ফুলে লাল হয়ে গেছে।
-আ...আপ...নি এখানে কেনো এসেছেন?
-কেনো আসলে কি আপনার কোনো সমস্যা হবে।দুপুর গড়িয়ে বিকেল গেলো সন্ধ্যা গড়িয়ে এখন রাত এলো জানেন আপনি।
-হুহ!
-কতটা খুদা লাগছে আপনার, খেতে অবধি জাননি।আচ্ছা, আমি আপনাকে বকা দিছি কেনো বলেন তো? আপনার এই কাজের জন্যই তো। আজ যদি আপনার আল্লাহ না করুক কিছু হয়ে যেতো তাহলে।
-আমার কিছু হয়ে গেলে আপনার তাতে কি আপনার পথের কাটা দূর হতো। আমি আজ একসিডেন্ট হলে!
-চুপ একদম চুপ!যেদিন মৃত্যু আসবে সেদিন আর আপনি আমার পথের কাটা নন।আর কেনো পথের কাটা হতে যাবেন নিজের মুখেই তো ডিবোর্স চেয়ে বসেছেন। কয়টা মাস পর আমাদের দুজনের ডিবোর্স হয়ে যাবে।
সোয়া চুপ হয়ে আদির দিকে তাকিয়ে আছে।
-আচ্ছা, বকেছি বলে এতো কেঁদে নদী করতে হবে।
-আসলে,
-আসলে কি?
-আসলে কেউ কোনোদিন আমায় বকেনি তো। আজ অবধি কারো কাছে বকাও শুনিনি।আপনি যখন বকেছেন তখন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
আদির হাসিও আসছে আবার সোয়ার জন্য মন খারাপ ও হচ্ছে। কেননা, সোয়া যেভাবে বাচ্চাদের মতো বলছে যে কেউ দেখলে তার হাসি চলে আসবে।
-সরি, এই কান ধরছি আমি আর জিবনেও আপনাকে বকবো না।আমি আপনাকে বকে অনেক বড় অপরাধী হয়ে গেছি। এখন কি শাস্তি দিবেন বলুন?
সোয়ার হাসি চলে এলো আদিকে কানে ধরা অবস্থায় দেখে।চোখের পানি এক হাত দিয়ে মুছে মুখ চেপে কিছুক্ষণ হেসে দিলো আস্তে করে।
-একটা কাজ করুন আপনি কেঁদে চোখের পানি দ্বারা যে নদ তৈরি করেছেন ওখানে আমাকে কিছুক্ষণ চুবান। তাহলে একে শাস্তি হবে আর আমার রাগটা যদি একটু কমে আর কি।
-এমা না না কি বলেন আপনাকে চুবাতে যাবো কেনো আমি।
-না এটা তো এক প্রকার শাস্তির মধ্যে পরে তাই বললাম আর কি।
-কান ছাড়ুন বাচ্চাদের মতো কান ধরে আছেন কেনো?
-ওহ সরি।
-আচ্ছা, একটা কথা বলি আপনাকে?
-হ্যাঁ বলুন।
-আপনি এতো কথায় কথায় সরি বলেন কেনো?
-এমনি ভাল্লাগে তাই বলি।চলুন খেতে চলুন যা খিদে পেয়েছে না আমার। দুপুর থেকে সন্ধ্যা অবধি কাজ করতে করতে টায়ার্ড আমি।
-কিসের কাজ করেছেন?
-বাড়িতে অফিস তৈরি করলাম আর কি আমি।
-ওহ আচ্ছা। আপনাদের বাড়িতে নিজস্ব কোনো লাইব্রেরি নেই।
-হ্যাঁ আছে।আপনি বই পড়তে ভালোবাসেন তাই না।
-হুম প্রচুর। আচ্ছা, কোথায় আমায় একটু বলবেন প্লিজ অবসরে গিয়ে বই পড়বো আমি।
-আগে খেতে চলুন তারপর বলবো নাহলে বলবো না।
-আমার খিদে নেই আপনি খেয়ে নিয়েন।
-কিহ ওকে তাহলে আমি ও খাবো না। গুড নাইট।
আদি বলেই চলে যেতে নিলে সোয়া সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে।
-আপনি আবার কেনো খাবেন না? এই মাএই তো বললেন খুব খিদে পাইছে।
আদি পিছনে সম্পূর্ণ না ঘুরে শুধু মাথাটা পিছনে কিছুটা ফিরিয়ে বললো,,,,
-আপনি না খেলে আমিও খাবো না দেটস ফাইনাল।
-আমার জন্য আপনি কেনো খাবেননা আজব তো।
-আর কিছু বলার আছে থাকলে বলুন আমি ঘুমাতে যাবো।
সোয়া অভিমানি কণ্ঠে বললো,,,
-চলুন নিচে খেতে চলুন।
আদি হাসি মুখে নিচে যাওয়ার জন্য হাটা ধরলো।
.
!!!
তারা নিহানের গালে জোরে একটা থাপ্পড় দেয়।
-তুই সামান্য এতোটুকু কাজ করতে পারলি না?
-আমি তো ঠিকই করছিলাম কিন্তু ....
-কিন্তু কি? অজুহাত দেখাতে আসবি না আমার কাছে সোয়াকে জাস্ট গাড়ি চাপা দিতে বলেছি আমি তোকে অন্য তো কিছুই করতে বলেনি। আর যখন কাজটা করতেই পারবি না তখন বলে দিতি। আমি অন্য কাউকে করতে দিতাম।
-তারা তুই আমার কথা একটু শুন শান্ত হয়ে!
-কি শুনবো কি কোনো কাজ ঠিক করে করতে পারিস না আমি আবার তোর কি কথা শুনবো।
তারার ফ্রেন্ড ইলা বললো,,,
-কুল ডাউন বেবি, এতো রেগে যাচ্ছিস কেনো? মেয়েটা এখনো বেচেঁ আছে।আদিদের বাড়িতে আছে কোথাও চলে যাচ্ছেনা। একবার বিফলে গেছে তো কি হয়েছে আরেকবার ট্রাই কর। আর নিহান কি বলে শুন!
-ওকে, তুই বলছিস বলে আমি ওর কথা শুনছি। আর ওই মেয়ে যত তাড়াতাড়ি এই পৃথিবী থেকে যাবে আমি তত তাড়াতাড়ি খুশি হবো নাহলে আমি কখনো শান্ত হবো না।
নিহান বললো,,,
-আমি আজ ওকে গাড়ি চাপা দিতাম ঠিকই কিন্তু আদি রাস্তার পাশ থেকে ওকে টান দিয়ে নিয়ে যায়।
-ওয়াট! আম নোট বিলিভ। আদি ওকে তো সহ্যই করতে পারেনা তাহলে বাচাঁতে যাবে কেন?
-আমার ও তাই মনে হচ্ছে বেবি।
তারা বললো,,,
-আদি আমার সামনে ভালো মানুষির রূপে সেজেছে আর ওই মেয়ের সাথে তলে তলে জল খাচ্ছে।
-আদি এটা কি করলো।
-ইলা আমার খুব টেনশন হচ্ছে, ওই মেয়ে আদিকে বশ করে নিতো। আদি তো ওর সাথে ভালো ব্যবহার বা বাচাঁনোর লোক নয়।
-মেবি বশ করেছে কোন তাবিজ দ্বারা নাহলে আদি ওকে বাচাঁবে কেন? আদি তো ওকে পথ থেকে সরাতে চাইবে।
-সে ওই কাজের মেয়ে সোয়া যাই করুক। আমি তো আদিকে আমার করে ছাড়বোই। আর হ্যাঁ, আমি তারা যাচ্ছি সোয়া তোর জিবনে এই কটা মাস পদে পদে কষ্ট দিতে। আদির সামনে তোকে কি করবো জানিস বিনা কারনে দোষারোপ করবো। কষ্ট দিবো, প্রচুর কষ্ট যেনো তুই মরে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাস।আমি আসছি কালই তোর বাড়িতে নো নো আমার হবু শুশুড় বাড়ি যেটার জন্য বসে আছি। হা.হা.হা....
তারা শয়তানির হাসি হেসে কথাগুলো বললো।আদি আর সোয়ার খাওয়া শেষে সোয়া ঘুমাতে চলে গেলে আদি পিছন থেকে ডাক দেয়।
-ঘুমাতে চলে যাচ্ছেন?
-হুম, কেনো? কিছু বলবেন?
-এতো তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাচ্ছেন মানে ১০টা বাজে মাএ।
-আপনি একটু আগে বললেন না আপনার খুব ঘুম পেয়েছে। এখন আবার বলছেন এতো তাড়াতাড়ি?
-ওইসময় রাগ করে বলছি আপনি যেনো খেতে আসেন। আচ্ছা, চলুন যাই।
-কোথায়?
-ওই যে লাইব্রেরিতে।
-ওহ এখন?
-হুম, চলুন।
-আচ্ছা।
.
!!!
আদি আর সোয়া দুজনে চললো লাইব্রেরীর উদ্দেশ্যে। আদি যেতে যেতে বললো,,,
-আপনার প্রিয় লেখক কে কে?
-ওম, আমার প্রিয় লেখক?
-নাহ, আপনার ভূতের?
-হোয়াট ভূত কোথায় আমি কিন্ত এইসবে আমার প্রচুর ভয় পাই।এখানে নিশ্চয়ই ভূত আছে আর আপনি আমাকে সেখানে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি যাবো না থাক!
-আরে এখানে ভূত আসবে কোথা থেকে আমি আছি না। ওটা তো আমি এমনি মজা করে বললাম। আপনি ভূতে এতো ভয় পান তাহলে একটা কাজ করা যায় রাত ১২টার সময় আপনাকে নিয়ে Horror Film দেখলে কেমন হয় অন্ধকার একলা রুমে।
-আ......আ......মি যা.....বো...না, ওখানে নিশ্চয়ই ভ....ভূত আছে।
ভয়ে ভয়ে বললো সোয়া কথা। আদি সোয়াকে ভয়ে কুকরিয়ে যেতে দেখে হাসতে হাসতে দেওয়ালের সাথে যেয়ে পড়লো।সোয়া বললো,,,,
-এতো হাসবেন না আপনি দাঁত সব পরে যাবে।
তখন বুড়ো হয়ে যাবেন!বাচ্চারা দেখলে হাসবে।
---আমার দাঁত পরলে তো কি হয়েছে উঠানোর জন্য তো আপনি আছেনই। আর আমি বুড়ো হয়ে গেলে বাচ্চারা আবার আমাকে যেমন বুড়ো বলবে তেমনি আপনাকে বলবে বুড়ি।
-কি বললেন?
-নাহ কিছুনা চলেন।
আদি লাইব্রেরীর রুমের আলো জ্বালালো। সোয়া তো বড্ড খুশি লাইব্রেরী পেয়ে, খুশির চোটে দৌড়ে বক সেলফের কাছে গেল। বইয়ের উপর হাত দিয়ে ভুলাতে লাগলো কতোদিন যে সে বইকে স্পর্শ করেনি।তার সঙ্গী বই ভালোবাসা বই।
একটা বই নিয়ে খুলে দেখতে লাগলো আর ঠোঁটের কোনে এক মিষ্টি হাসি রাখলো। আদি সোয়াকে দেখে বেহায়ার মতো তাকিয়ে রইলো যেনো কোনোদিন দেখেনি। তারপর সোয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে একটা চেয়ারে বসে ওকে জিজ্ঞেস করলো,,,
-বই পড়তে এতো ভালোবাসেন?
-হুম খুব।
-তা কেমন হলো লাইব্রেরী?
-অনেক সুন্দর। এখানে প্রায় অর্ধেক বই আমার পড়া হয়ে গেছে।
-বাহ কেয়া বাত হে এতো বই আগেই পড়ে পেলেছেন ভেরি গুড।
-হুহ।
সোয়া কিছুক্ষণ এখানে ঘুরেফিরে দেখলো সারারুমে সেলফের ভেতরে খুব সুন্দর করে বই সাজিয়ে রেখেছে।তারপর চলে যায় এখান থেকে। আদি বাইরে বেরিয়ে বললো,,,
-যাবেন?
-আবার কোথায়?
-ছাদে।
-এতো রাতে ছাদে! ভয় করেনা আপনার একটুও।
-ভয়, সে আবার কি। ভয় ফেলেই কি চলে?ভয়কে ভয় ফেলে ভয় আমাদের কাবু করে বসে ঘাড়ে চেপে বসে। তাই না পাওয়াটাই ঠিক।
-হুম ঠিক কথা।
সিড়ি দিয়ে একপা একপা এগিয়ে চলে দুজনে। হঠাৎই সোয়া কাপড়ের সাথে পা আটকে পড়ে যেতে নিলে আদি ধরে ফেলে হাত দিয়ে জরিয়ে।
-আউচ.......
ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে সোয়া।