এক ভিলিয়ান পর্ব ৬

আজমল চৌধুরী হঠাৎ রেস্টুরেন্টে এসে লাবন্য কে ধমকানো শুরু করে দিছে এটার কারণ কেউ জানে না।  ফাইজা দূর থেকে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। কাব্য ক্যাশ কাউন্টারের পাশে এসে দাঁড়ালো।  লাবন্য কিছুতেই বুঝতে পারছে না এমন ভাবে কেন ধমকাচ্ছে।  কাব্য কি তামান্নার সাথে বেয়াদবি করছে।  কাব্যকে তো কথা বলতে বারণ করছিলাম।  তাহলে।  লাবন্য কাব্যের দিকে তাকালো।  লাবন্যর ইশারা বুঝে কাব্য মাথা নাড়িয়ে না বললো।  লাবন্য এবার সাহস নিয়ে বললো

- স্যার আমার ভূলটা যদি আমাকে বলতেন?  ( লাবন্য) 
- কিহ্ ভূল।  আমার কাছে কৈফিয়ত চাও।  তোমার এতো বড় সাহস।  ( আজমল চৌধুরী) 
- সরি স্যার।  ( লাবন্য) 
- তোমার সাহস দেখে আমি আশ্চর্য।  তুমি জানো আমি তোমার চাকরি নট করে দিতে পারি৷  ( আজমল চৌধুরী) 

লাবন্যর মনে ভয় ঢুকে গেলো চাকরি চলে যাওয়ার কথা শুনে।  লাবন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো।  আজমল চৌধুরী কাব্যের দিকে তাকিয়ে
- তুমি সেই গ্রাম থেকে আসা ছেলেটা না।  ( আজমল চৌধুরী) 

কাব্য মাথা নাড়ালো।  কথা বললো না।  লাবন্য বললো
- স্যার ওর কোনো দোষ নেই।  যা বকার আমাকে বকেন৷  ( লাবন্য) 

আজমল চৌধুরী লাবন্যর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো লাবন্য এখনি কেঁদে দিবে।  চোখে পানি টলটল করছে ।  আজমল চৌধুরী ফিক করে জোরে হেসে উঠে
- বোকা মেয়ে ।  ভয় পেয়েছিস।  ( আজমল চৌধুরী) 

আজমল চৌধুরী এমন হঠাৎ করে হেসে দেওয়া তে সবাই হতবাক।  কিন্তু ফাইজা অবাক।  এতক্ষণ তো বেশ ভালোই লাগছিলো বকতে দেখে৷  এখন আবার হাসছে কেন? 

লাবন্য চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো।  আজমল চৌধুরী বললো
- আরে বোকা মেয়ে আমি মজা করতেছিলাম তোর সাথে।  ( আজমল চৌধুরী) 

লাবন্য চোখ মুছতে মুছতে বললো
- স্যার এই ভাবে।  আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।  আমি কি অপরাধ করেছি। ( লাবন্য) 
- অপরাধ তো তুই একা করিস নি।  তোরা দুজন একসাথে অপরাধ করে আমাকে চমকে দিছিস।  তাই ভাবলাম তোদেরকে খুশির খবর দেওয়ার আগে আমি তোদের কে চমকে দিবো৷ ( আজমল চৌধুরী) 

সবাই বেশ অবাক হয়ে চেয়ে আছে।  লাবন্য বললো
- কি অপরাধ করেছি স্যার।  ( লাবন্য) 

আজমল চৌধুরী একটা খাম বের করে
- এখানে কোম্পানির নাম লেখা আছে।  দুপুরের খাবার এই রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার যাবে ঐ কোম্পানিতে।  টাকা আছে ভেতরে এটা সবার বোনাস।  এটা রেস্টুরেন্টের জন্য বারতি ইনকাম।  যেটা চোখে পড়ে আসছে এতোদিন।  তোরা দুজন রাস্তায় রাতে খাবার বন্টন করে আসছিস আমাকে তো জানাস নি।  আমি শুনেছি কিন্তু বিশ্বাস করেনি।  তবে দু একবার নিজ চোখে দেখিছি আর এই কোম্পানির মালিক নিজে তোদের পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হয়েছে।  তার কোম্পানির জন্য এই রেস্টুরেন্ট টা বেছে নিয়েছে।  ( আজমল চৌধুরী) 

আজমল চৌধুরী র মুখে এমন কথা শুনে সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো ।  ফাইজা অবাক হয়ে গেলো।  আজমল চৌধুরী বললো
- তোর প্রমোশন হয়েছে।  আর গ্রামের ছেলে তুমি এখন থেকে ওয়েটার বুঝছো।  কোম্পানিতে খাবার পৌঁছে দেওয়া তোমার কাজ।  তোমার ও প্রমোশন হলো। আর বাকীদের ও ( আজমল চৌধুরী) 
সবার প্রমোশন হওয়াতে সবাই অনেক খুশি।  আজমল চৌধুরী ওদের সাথে কথা বলে চলে যেতে যাবে তখন লাবন্য বললো
- সরি স্যার।  আপনাকে বিষয়টা না জানানোর জন্য। ( লাবন্য) 
আজমল চৌধুরী মুচকি হেসে
- আমাকে কি খারাপ মনে হয়।  আমি ওতটা ও খারাপ না।  আমি ও এক সময় রাস্তায় ঘুরতাম।  অনেকে লাঠি ঝাটা গালাগাল শুনে আজ আমি আজমল চৌধুরী।  ( আজমল চৌধুরী) 

আজমল চৌধুরী চলে গেলো।  লাবন্য মাথা নিচু করে ফেললো  ফাইজা এসে লাবন্য কে বললো
- তোরা দুজন এতোদিন অতিরিক্ত খাবার রাস্তার মানুষদের দিতি।  কই আমাকে তো বলিস নি। ( ফাইজা) 
- টাইম হলেই তো চলে যেতে চাস শুধু।  দাঁড়াস নাকি তুই।  ( লাবন্য) 
- ঠিক আছে এর পর থেকে তোদের সাথে আমি ও থাকবো।  ( ফাইজা) 

তামান্না  দরজার সামনে দাঁড়িয়ে
- কিসের ডিসকাসড চলছে তোদের।  ( তামান্না)
- আসলে ম্যাডাম বড় স্যার এসে। ( ফাইজা) 

তামান্না ফাইজাকে থামিয়ে দিয়ে বললো
- আমি সব জানি।  তবে ভালোই হয়েছে আমার অগোচরে এসব করে।  আমি জানলে তো আর এই কাজ করতে পারতি না।  ( তামান্না) 

তামান্নার কথা শুনে সবাই মাথা নিচু করে নিলো।  তামান্না লাবন্যকে বললো
- ওয়েটারকে উপরে পাঠিয়ে দে।  ( তামান্না) 
এক ভিলিয়ান পর্ব ৬ 



তামান্না কথাটা বলে উপরে চলে গেলো।  ফাইজা কাব্যের দিকে তাকিয়ে
- ম্যাডাম কি বললো শুনিস নি? তোকে ডাকলো যা। দাঁড়িয়ে আছিস কেন?  ( ফাইজা) 

কাব্য লাবন্যের দিকে তাকালো।  লাবন্যর চোখের ইশারায় কাব্য চলে গেলো।  লাবন্য ফাইজাকে বললো
- তুই ওর সাথে এরকম ব্যবহার করিস কেন?  তোর দেখাদেখি বাকীরা ও করে।  ( লাবন্য) 
- ওকে আমি দু চোখে দেখতে পারি না।  কেমন একটা বিরক্ত কর।  গা দিয়ে গ্রাম্য ক্ষ্যাত গন্ধ আসে।  অসহ্যকর। ( ফাইজা) 
- ফাইজা।  ( লাবন্য) 

ফাইজা মুখ ভেংচি কেটে চলে গেলো। 

কাব্য দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো।  তামান্না কাব্যকে ভেতরে আসতে বললো।।  কাব্য ভেতরে যেতে তামান্না বললো
- তোর মুখের জবান কি আটকে গেছে?  কথা বলতে পারিস না।  ( তামান্না) 

কাব্য মাথা নাড়ালো।  তামান্নার সামনে থাকা পানির গ্লাস ধরে কাব্যের মুখে পানি ছুঁড়ে মেরে
- তুই কি বোবা?  আমার সাথে কথা বলতে পারিস না।  ( তামান্না) 

কাব্য মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।  এতে তামান্নার জেদ বেড়ে গেলো৷ লাবন্যকে ডাক দিলো। লাবন্য উপরে আসতে
- এই বোবা টাকে চাকরিতে রাখছিস কেন,  ওকে এখান থেকে বের করে দিবি আজই।  ( তামান্না) 
- ম্যাডাম ও কি করছে?  ( লাবন্য) 
- ওকে আমি এতোগুলো প্রশ্ন করলাম ও কোনো কথাই বললো না।  কেন?  ( তামান্না) 
- ম্যাডাম ও আপনাকে অনেক ভয় পায়।  ও কথা বলতে যেয়ে বলতে পারে না।  ওর সাহসে কুলায় না।  আমাকে ও বলছে৷  ( লাবন্য) 
- ঠিক আছে। ওকে নিয়ে সামনে থেকে যা৷ ( তামান্না)

লাবন্য কাব্যকে নিয়ে চলে গেলো।  তামান্না দাঁড়িয়ে দাড়িয়েদাঁড়িয়ে পায়চারি করতেছে আর বির বির করে বলছে, আমাকে তো ভয় পাবেই৷  ওর যা অবস্থা করেছি এতোদিনে ভয় না পেয়ে যাবে কই। ওকে দিয়ে আরো কাজ করাতে হবে।   কি কাজ করাবো।  হ্যা পেয়েছি

তামান্না কাব্যকে উপরে পাঠানোর জন্য নক করলো।  লাবন্য বললো,  কাস্টমার বেশি ও অর্ডার নিচ্ছে।

লাবন্য কথা শুনে তামান্না নিচে নেমে দেখলো কাব্য কথা বলছে কাস্টমারের সাথে।  দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো।  তামান্না ক্যাশে এসে
- তুই  যা ওপাশ টা খেয়াল কর।  আমি ক্যাশে বসছি।  ( তামান্না) 

লাবন্য অবাক হয়ে গেলো তামান্নার কথা শুনে।  আগে তো কখনো ক্যাশে বসেনি।  তামান্না লাবন্যকে বললো
- কি ভাবছিস দাঁড়িয়ে  ।  তোরে কিছু বলছি।  ( তামান্না) 
- হ্যা ম্যাডাম যাচ্ছি।  ( লাবন্য) 

লাবন্য যেয়ে কাব্য কে হেল্প করতে লাগলো।  তামান্না ক্যাশে বসে এদিক টা সামলাচ্ছে। 

বিকালের সময় টা রেস্টুরেন্ট ফাঁকা গেলো।  তামান্না লাবন্যকে বললো
- তোমাদের সবার খাওয়া হয়েছে। ( তামান্না)
- না ম্যাডাম।  আপনি ও তো খান নি।  আজ চাপ টা একটু বেশি গেলো।  ( লাবন্য) 
- সমস্যা নেই তোমরা খেয়ে নাও।  আমি উপরে যাচ্ছি।  খাবার পাঠিয়ে দিয়ো। ( তামান্না) 
- ঠিক আছে ম্যাডাম ।  ফাইজা কে দিয়ে খাবার টা পাঠিয়ে দিচ্ছি।  ( লাবন্য) 
- না কাব্যকে দিয়ে পাঠাও।  ( তামান্না) 
- ঠিক আছে ম্যাডাম।  ( লাবন্য)

তামান্না চলে গেলো।  লাবন্য কাব্যকে ডেকে বললো
- ব্যস্ত খাওয়া শেষ করে ম্যাডামের জন্য খাবার নিয়ে যাও উপরে। ( লাবন্য)
- ম্যাডামকে খাবার টা দিয়ে এসে খায়।  দেরি হলে তো আবার শুরু করে দিবে৷ ( কাব্য) 
- ঠিক আছে যাও।  খবরদার ম্যাডামের সাথে কথা বলবে না৷ ( লাবন্য) 
- ঠিক আছে।  ( কাব্য) 

লাবন্য কিচেনে যেয়ে খাবার রেডি করে কাব্যের কাছে দিলো।  কাব্য খাবার নিয়ে উপরে যেয়ে দরজায় নক দিলো।  তামান্না কাব্যকে ভেতরে আসতে বললো।  কাব্য খাবার নিয়ে ভেতরে ঢুকে খাবার টেবিলের উপর রাখলো।  তামান্না বললো
- পানি নিয়ে আয়।  রাতে তোর আজ কাজ আছে। ( তামান্না)

কাব্য মাথা নেড়ে পানি নিতে নিচে আসলো।  পানি নিয়ে উপরে উঠে টেবিলে পানি রেখে চলে আসচ্ছিলো তখন তামান্না বললো
- আমার খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওখানে দাঁড়িয়ে থাকবি।  যখন যেতে বলবো তখন যাবি। ( তামান্না) 

কাব্য মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।  তামান্না খাবার মুখে তুলবে তখন কয়েকজন লোক ভেতরে ঢুকে পড়লো।  তামান্না উঠে দাঁড়িয়ে
- কারা আপনারা।  পারমিশন ছাড়া ভেতরে ঢুকছেন কেনো।  ( তামান্না)

দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রুস্তম সরদার বললো
- মামনি আমাদের ঢুকতে পারমিশন লাগে না।  আমাদের কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে সবাই চলাচল করে। ( রুস্তম সরদার) 

রুস্তম সরদার পান চিবোতে চিবোতে ভেতরে ঢুকে চেয়ার টেনে বসলো৷ তামান্না বললো
- আপনি কে?  আপনাকে তো চিনলাম না। ( তামান্না) 

রুস্তুম সরদার পিছে ফিরে
- এই মেয়ে আমার এলাকায় ব্যবসা করে খায় আর আমাকে চিনে না।  বড্ড হাসালো দেখি।  আমারে চিনে না এমন কেউ আছে নাকি এখানে। ( রুস্তুম সরদার) 
- কেন এসেছেন?  কি চাই আপনার?  ( তামান্না) 
- চাঁদা চাই।  আগে যা ছিলো তার থেকে দু গুন বেশি দিতে হবে।  ( রুস্তুম সরদার) 
- আমি কোনো চাঁদা দিবো না।  আপনারা আসতে পারেন। ( তামান্না)

রুস্তুম সরদার কোমড় থেকে পিস্তল বের করে
- রুস্তুম সরদার না শব্দ টা পছন্দ করে না।  ( রুস্তুম সরদার) 
- আমি কিন্তু পুলিশকে ইনফর্ম করবো।  আপনারা যাবেন নাকি পুলিশ ডাকবো৷ ( তামান্না) 

রুস্তম সরদার মুখটা সামনে নিয়ে
- মামনি তোমার দেখি অনেক জেদ ।  রুপরের যৌবনে জেদ টা বেশি থাকবে।  ( রুস্তুম সরদার) 
তামান্না চিল্লিয়ে
- আপনারা যাবেন না আমি পুলিশ ডাকবো।  ( তামান্না) 
- মামনি রুস্তম সরদার কে চিনতে পারো নি তুমি।  পুলিশ আমার ডান পকেটে থাকে।  সময় মতো চাঁদা র টাকা পাঠিয়ে দিয়ো না হলে তোমার এই রুপ যৌবন থাকবে না।  আমার যে ছেলে ফেলে দেখছো সবাই তোমাকে খুবলে খাবে।  তোমার বাবাকে বলে দিয়ো। ( রুস্তুম সরদার) 

তামান্না রুস্তুম সরদারের লোকজনের দিকে তাকিয়ে দেখলো খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।  চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।  রুস্তম সরদার তামান্না কে খারাপ কথা বলে চলে গেলো।  কাব্য এতোক্ষণ মাথা নিচু করে ওদের কথা শুনতে ছিলো।  তামান্না অপমানে চোখ দিয়ে পানি ঝরতে লাগলো।  রাগ জেদ দুটোই বেড়ে গেলো।  তামান্না কাব্যের দিকে তাকিয়ে
- তুই এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?  সামনে থেকে যা।  আমি রুস্তুম কে ছাড়বো না।  আমাকে অপমান করা।  আমি এর শোধ নিয়ে নিবো। ( তামান্না) 

কাব্য মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।  কাব্য যাচ্ছে না দেখে
- তোর সামনে আমাকে অপমান করে গেলো তোর নিশ্চয়ই ভালো লাগছে।   যা সামনে থেকে না হলে তোকে কিন্তু।  ( তামান্না) 

কাব্য তামান্নার কথা শুনে মাথা নিচু করে নিচে চলে আসলো।  তামান্না আজমল চৌধুরী কে কল দিয়ে সব টা বলে
- ড্যাডি তুমি ওর কিছু করতে পারবে না। ( তামান্না) 
- শান্ত হও মামনি।  রুস্তম অনেক বড় ডেঞ্জারাস মানুষ।  কাউকে তোয়াক্কা করে না।  তুমি এটা নিয়ে আর ভেবো না৷ আমি দেখছি বিষয় টা। ( আজমল চৌধুরী) 
- তুমি পারবে না ওর কিছু করতে।  আমাকে বাজে কথা বলে গেলো তুমি কিছু বলবে না।  তুমি কিছু না বললে ওর ব্যবস্থা আমি করবো। ( তামান্না)
- আরে আমি কখন বলছি কিছু করবো না।  ওকে তোমার পায়ের কাছে ফেলাবো৷  তোমার কাছে মাফ চাইবে।  শান্ত হও মামনি।  ( আজমল চৌধুরী) 

আজমল চৌধুরী তামান্নাকে বোঝাতে লাগলো। 

**
লাবন্য কাব্যকে দেখে জিঙ্গোস করলো
- উপরে কি হয়েছে?  ( লাবন্য)
কাব্য এক এক করে সবকিছু বলতে লাগলো। কাব্যর কথা শুনে লাবন্য বললো
- ঝামেলা একটা তৈরি হবে৷  বড় স্যার যেটার ভয় পাচ্ছিলো তাই হয়ে গেলো।  ওরা যদি ম্যাডামের কোনো ক্ষতি করে ফেলে।  ( লাবন্য) 
- ওরা কি অনেক খারাপ? ( কাব্য) 
- একটু আকটু খারাপ না।  অনেক খারাপ।  না হলে ম্যাডামকে এভাবে বিশ্রি ভাবে বলতে পারতো৷ ওরা তো ম্যাডামের দিলে ফলো রাখবে।  ম্যাডাম কে সাবধান করতে হবে। ( লাবন্য) 

লাবন্যর কথা শুনে কাব্য অবাক হয়ে গেলো।  লাবন্য উপরে উঠতে যাবে দেখলো তামান্না নিচে নেমে আসছে।  লাবন্য তামান্নার সামনে দাঁড়িয়ে
- ম্যাডাম কই যাচ্ছেন।  ( লাবন্য) 
- বাহিরে।  কাজ আছে। ( তামান্না) 
- ম্যাডাম যারা আসছিলো ওরা অনেক খারাপ মানুষ।  আপনাকে ওরা ফলো করবে।  আপনি বাসায় চলে যান।  বাহিরে থাকবেন না। ( লাবন্য) 
- সেটা আমি দেখে নিবো। ( তামান্না) 

তামান্না চলে গেলো।  লাবন্য আজমল চৌধুরী কে ফোন দিয়ে বললো সবকিছু।  আজমল চৌধুরী চিন্তায় পড়ে গেলো। 

তামান্না গাড়িতে উঠলো।  ড্রাইভার গাড়ি চালাতে লাগলো৷  পিছনে রুস্তম সরদারের লোকজন তামান্নাকে ফলো করেছে।  তামান্না বিষয়টা বুঝতে পারলো।  লাবন্য তাহলে ঠিক কথা বলছিলো।  তামান্না কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।  আজমল চৌধুরী তামান্না কে কল দিয়ে বুঝিয়ে বাসায় আসতে রাজি করালো। 

লাবন্য ক্যাশের উপর হাতে ভর দিয়ে গালে হাত দিয়ে আছে।  কাব্য লাবন্যকে এমন দেখে
- মন খারাপ করে আছেন কেন ম্যাডাম?  ( কাব্য) 
- টেনশন লাগছে।  এই রুস্তম কে আমার বিশ্বাস হয় না।  কোনো ক্ষতি না করে দেয়। ( লাবন্য) 
- এতো টেনশন করেন না।  সব ঠিক হয়ে যাবে।  ( কাব্য) 
- এই শহর সম্পর্কে তোমার কোনো ধারনা নেই।  মানুষগুলো খুব ভয়ংকর।  ( লাবন্য) 
- কম্পিউটার টা একটু চালাতে পারি।  ( কাব্য) 
- হ্যা।  ( লাবন্য) 

লাবন্য উঠে পাশে বসলো।  কাব্য কম্পিউটার এ বসে কাজ করতে লাগলো।  লাবন্য অন্য মনস্ক তাই আর এদিকে কোনো খেয়াল নেই।  কাব্য কিছুক্ষণ কাজ করে বললো
- হয়ে গেছে।  ( কাব্য)
লাবন্য অন্যমনস্ক থাকায় কাব্যের হয়ে গেছে শুনে লাফিয়ে
- কি হয়েছে গেছে। ( লাবন্য)
- ম্যাডাম শান্ত হোন।  কম্পিউটার চালানো হয়ে গেছে।  এটাই বলছি।  ( কাব্য) 
- ও ও। ( লাবন্য) 

কাব্য লাবন্যর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে আর কিছু বললো না।  কিছুক্ষণ পর কাস্টমার আসলো।  কাব্য তাদের থেকে অর্ডার নিয়ে  আসলো। 

রাত ৮ টা
আজমল চৌধুরী রুস্তুম সরদারকে ফোন করলো।  রুস্তম সরদার কল রিসিভ করেই
- চৌধুরী সাহেব আপনি তো ভালো একটা জিনিস বানিয়েছেন।  এতো জেদ রাগ ভালো না।  মেয়েকে বলে দিয়েন।  ( রুস্তম সরদার) 
- মুখ সামলে কথা বলো। ( আজমল চৌধুরী) 
- কি জন্য ফোন দিছেন?  ( রুস্তুম সরদার) 
- তুমি আমার কাছে না এসে মেয়ের সাথে যে ব্যবহার টা করছো খুব খারাপ করেছো৷  তোমার টাকা লাগবে আমাকে বলতে।  আমি দিতাম। ( আজমল চৌধুরী) 
- আপনার মেয়েকে দেখে আর আপনার কথা মনে হয় নি।  দুজনই তো এক।  আপনার মেয়ে  টাকা দিতে রাজি হয়ে গেলে আমি কোনো ঝামেলা করতাম না।( রুস্তম সরদার) 
- তোমার চাঁদার দাবি আমি মেনে নিবো৷  তোমাকে একটা কাজ করতে হবে। ( আজমল চৌধুরী) 
- কি কাজ?  রুস্তুম সরদারের কাছে কোনো কাজে না নেয়।  ( রুস্তম সরদার) 
- সকালে আমার মেয়ের কাছে এসে মাফ চাইবে।  মাফ চাওয়া হয়ে গেলে আমি তোমার একাউন্টে টাকা দিয়ে দিবো। ( আজমল চৌধুরী) 
- চৌধুরী কি বলছেন ভেবে বলছেন তো৷  ( রুস্তম সরদার) 
- হ্যা।  তুমি যে কাজটা করেছো তার জন্য ক্ষমা চেয়ে যাবে। ( আজমল চৌধুরী) 
- আমার ইজ্জত কই যাবে আপনার কোনো আইডিয়া আছে।  আমার ইজ্জতে কেউ হাত বাড়ালে তাকে আমি শেষ করে ফেলি।  আপনারা বাপ মেয়ে কিন্তু বাচতে পারবেন না৷  কালকের ভেতর নগদ ক্যাশ রেডি রেখেন।  না পেলে আপনার মেয়েকে শেষ করে ফেলবো।  ( রুস্তম সরদার) 

রুস্তুম সরদার আজমল চৌধুরী কে ভয় দেখিয়ে কল কেটে দিলো৷ আজমল চৌধুরী চিন্তায় পড়ে গেলো কি করবে এখন?   এদিকে তামান্নাকে খুশি না করতে পারলে বড় ঝামেলা পাকিয়ে ফেলবে।  আবার রুস্তম ও কম না।  আজমল চৌধুরী চিন্তায় পড়ে গেলো বেশ।  


রাতে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে
লাবন্য ফাইজা কাব্য খাবার নিয়ে বের হলো।  রাস্তার পাশে লোকদের দিয়ে যে যার মতো করে চলে গেলো।  কাব্য নিজের ঘুমানোর জায়গায় এসে বসে ব্যাগ থেকে খাতা কলম বের করে ফাকা পৃষ্টায় একটা ছক আকলো।  মিরান কাব্যের ছক আকা দেখে জিঙ্গেস করলো
- ছক একে কি করছিস?  ( মিরান) 
- একটা গেইম খেলছি।  আপনি ঘুমান।  ( কাব্য) 
- একা গেইম খেলা যায়।  আমাকে একটু শেখা। ( মিরান) 
- কাল শিখাবানি।  আপনি শুয়ে পড়ে ঘুমান।  ( কাব্য) 

মিরান আর কিছু বললো না।  শুয়ে পড়লো।  কাব্য খাতায় তার কাজ করতে লাগলো।


**
রাত ৪ টা
রুস্তম সরদারের গাড়ি হঠাৎ করেই ব্রেক করলো।  রুস্তুম সহ সবাই অবাক হয়ে গেলো সামনের দিকে তাকিয়ে.........

চলবে.........

Ek villian

Part 6 

Writer
Meherab Kabbo    
Previous Post Next Post